ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সন্তুষ্টির ধারায় শিক্ষার ফল

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২২ জুলাই ২০১৮

সন্তুষ্টির ধারায় শিক্ষার ফল

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। পরীক্ষায় কৃতকার্য সব শিক্ষার্থীকে আমাদের অভিনন্দন। নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়নের প্রভাব পড়েছে পরীক্ষার ফলে। গত বছরের মতো পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে, তবে ব্যবধান একটু বেশি। গত বছর পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু গভীর কথা বলেছিলেন, তাতে এক ধরনের সুপরামর্শ ও নির্দেশনার ইঙ্গিত ছিল। তারই বাস্তবায়ন ঘটেছে বলে অনুমান করা কঠিন নয়। তিনি বলেছিলেন, মানুষ হওয়াটাই মুখ্য, পাসের হার নয়। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে এবং এই বয়সে তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সঠিক গাইডলাইন দেয়া। পাস-ফেল নিয়ে না ভেবে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। বিগত এক দশকে পাসের হার সর্বনি¤œ হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষাবিদসহ, পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফলের সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষ এক ধরনের স্বস্তি ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। বলা হচ্ছে এবার যথাযথভাবে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ জন্যে খাতা মূল্যায়নকারীরা সঠিকভাবে কাজ করেছেন কিনা সেটিও মনিটরিং করা হয়। এছাড়া নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আরও একটি বিষয়, ইংরেজী ও পদার্থবিদ্যার প্রশ্নপত্র আগের তুলনায় কঠিন ছিল। সব মিলিয়ে বেশ কঠোরতার সঙ্গেই সম্পূর্ণ পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতিটি অনুসৃত হয়। ফলস্বরূপ তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফলে। তবে এটাও অনুধাবন করা প্রয়োজন যে, সব সময়েই সচেষ্ট থাকতে হবে শ্রেণীকক্ষে যথাযথ পাঠদানের বিষয়ে। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের নিবিড় তত্ত্বাবধান সম্ভব হলে পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের সংখ্যা যে কমে আসবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ২০০৩ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর প্রায় প্রতিবছরই পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে। এক বছরে পাসের হার ২ দশমিক ২৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক ৬৮ শতাংশে। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা আট হাজার ৭০৭ কমে হয়েছে ২৯ হাজার ২৬২। বেড়েছে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান, কমেছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানও। উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারে এবারও ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পেয়েছে মেয়েরা। পাসের হারে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা পিছিয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ছেলেরাই। পাসের হারের দিক দিয়ে মেয়েরা কয়েক বছর ধরেই ভাল ফল করছে। এবার তারা ব্যবধান আরও বাড়িয়েছে। ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের পাসের হার ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় শতভাগ পাস করেছে ৪০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আর একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৫টি। এইচএসসি পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবনের বড় ধরনের একটি বাঁক ফেরার কেন্দ্র। এ পরীক্ষার ফলাফলের ওপর একজন শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে। কাজেই ভাল ফলের জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকম-লীসহ সংশ্লিষ্ট সবার যতœবান ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে অনুত্তীর্ণদের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি আনার চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করা দরকার। দেশের ভবিষ্যত নাগরিকদের গড়ে তোলার দায়িত্ব যাদের হাতে রয়েছে, তাদের মান হতে হবে প্রশ্নাতীত। পরীক্ষার ফলের সঙ্গে শিক্ষার মানের বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষার মানের উন্নতি হলে পরীক্ষার ফলেরও উন্নতি হবেÑ এটা সাধারণ হিসাব। কিন্তু রাতারাতি শিক্ষার মান বাড়ানো অসম্ভব। এর জন্য সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
×