ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশবান্ধব কয়লাবিদ্যুত

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২২ জুলাই ২০১৮

পরিবেশবান্ধব কয়লাবিদ্যুত

পরিবেশবান্ধব কয়লাবিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক আছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। স্থানীয় পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ-আন্দোলন- মানববন্ধনসহ লংমার্চ করে থাকেন। বিশেষ করে সুন্দরবন রক্ষার জন্য রামপাল, পায়রা, মাতারবাড়ি, বাঁশখালী ও অন্যত্র নির্মাণাধীন ও নির্মিতব্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে তাদের নানা ওজর আপত্তি। পরিবেশ রক্ষার নামে বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ির ভূগর্ভস্থ কয়লা উত্তোলন নিয়েও তাদের তীব্র আপত্তি রয়েছে। তারা এমনকি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করেছেন তথাকথিত নিরাপত্তার অজুহাত। তবে বাস্তবতা হলো, বিশ্বব্যাপী প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় নিরাপদ জ্বালানি, জৈব জ্বালানি, সৌর বিদ্যুত, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা ও সচেতনতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উৎস কয়লা ও তেল। চীনে প্রায় ৬০ শতাংশ বিদ্যুত উৎপাদিত হয় কয়লা থেকে। তবে বর্তমানে আরও উন্নতমানের প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণ উপযোগী কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করে তা ৪৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। চীন বাংলাদেশের পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তি। রামপালেও ব্যবহৃত হবে এই প্রযুক্তি। বাঁশখালী কিংবা মাতারবাড়িতেও অনুরূপ প্রযুক্তি ব্যবহার না করার আদৌ কোন কারণ নেই। বর্তমানে এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সহজলভ্য যে, ভূগর্ভ থেকে আদৌ উত্তোলন না করে খনির অভ্যন্তরে কয়লা পুড়িয়ে সেই উত্তাপে উৎপাদিত বাষ্পে টারবাইন ঘুরিয়ে উৎপাদিত হবে বিদ্যুত। বাংলাদেশের ফুলবাড়িয়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে অনুরূপ প্রযুক্তি। সুতরাং তথাকথিত পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞদের তেমন আতঙ্কিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো তেমন কারণ আছে বলে মনে হয় না। তবে ভবিষ্যত প্রজন্মের সুরক্ষাসহ প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি আগামীর বিপুল চাহিদা মোকাবেলার বিকল্প তথা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তথা অফুরন্ত সৌরশক্তি ব্যবহারের অত্যাবশ্যকতা অস্বীকার করা যায় না। দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য বিদ্যুত সমস্যার সমাধান। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকার ২০১৬ সাল নাগাদ ৬ হাজার মেগাওয়াট, ২০২৪ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকার তার উদ্দেশ্য পূরণে অনেকটাই সফল হয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে এবং এর সুফল পাচ্ছে ৭০ শতাংশ মানুষ। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। এর পাশাপাশি সরকার দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে শিল্পোৎপাদনেও নতুন বিদ্যুত সংযোগ দিতে সর্বাধিক আগ্রহী। এর জন্য নতুন ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হচ্ছে সাত দিনে। বিনিয়োগ ও শিল্পে উৎপাদন বাড়ানোর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করে তোলা। সরকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুত বিভাগ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাতে অনেকটাই সফল হবে বলে আশা করা যায়। সঙ্গত কারণেই সরকার যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের ওপর সবিশেষ জোর দিয়েছে, এটিও প্রশংসার যোগ্য। বর্তমান বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেশ কমলেও আমদানি করতে হয় বিধায় এটি নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল। সে তুলনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র সাশ্রয়ী, সহজলভ্য ও সুলভ। আপাতত আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে চাহিদা মেটানো হলেও বড় পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ির কয়লা উত্তোলন করে ব্যবহার করা হলে উৎপাদন খরচ আরও কমে আসবে। পরিবেশের ওপর সামান্য বিরূপ প্রভাব পড়লেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে কার্বন নিঃসরণ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। সে অবস্থায় পরিবেশবিদদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
×