ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ ষড়যন্ত্রের বিপরীতে সম্প্রীতির জয় হোক

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২২ জুলাই ২০১৮

সিডনির মেলব্যাগ ॥ ষড়যন্ত্রের বিপরীতে সম্প্রীতির জয় হোক

আওয়ামী লীগের প্রচার শক্তি দুর্বল। এটা তারা না মানলেও আমরা জানি। তাদের নেতারা আক্রমণাত্মক কথা বলতে জানলেও কাজের বেলায় অনেকটাই দুর্বল। সেদিক থেকে বিএনপি-জামায়াত অনেক বেশি শক্তিশালী। তাদের প্রচার-অপপ্রচারে এদেশের কতটা লাভ বা লোকসান সেটাও আমরা দেখেছি। মনে পড়ে ইত্তেফাকের খারাপ ভূমিকা আর বঙ্গবন্ধু বিরোধিতা এক হয়ে কি কা-ই না ঘটিয়েছিল। মাছ ধরার জাল গায়ে বাসন্তীর সে ছবি সারাদেশের মানুষের মনেক বিষিয়ে তুলে আওয়ামী লীগের পতন ত্বরান্বিত করার পরও সরকারী তরফ থেকে তেমন উচ্চবাচ্য দেখা যায়নি। অথচ পরে দেখা গেছে তখন জালের দাম ছিল শাড়ির দামের চাইতে বেশি। আরও জানা গেছে, বাসন্তী নামের দরিদ্র নারীকে কৌশলে বা অপকৌশলে জাল পরিয়ে ছবি তুলে বাজারে ছাড়ার কারণ আওয়ামী লীগকে অজনপ্রিয় করে তোলা। মনে হতে পারে আমি এ দলের হয়ে তাদের কথা বলার জন্য কলম ধরেছি। মোটেও তা না। মূলত আমাদের জাতি ও দেশের কপালে এখনও এমন কোন রাজনীতি জোটেনি যা নির্ভয় ও সংশয়হীন রাখতে পারে। বিএনপি নামের দলটি একদিনের জন্যও তাদের ভুল স্বীকার করেনি। আর জামায়াত আপাতত হীনবল হলেও তারা তাদের নেতাদের ফাঁসির কথা ভুলবে না। জামায়াতকে আমি সবসময় বিএনপির আগে জায়গা দিতে চাই। তারা যা বিশ্বাস করে তাই করে। তাদের নেতারা মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বলেননি তাঁরা কোন ভুল করেছিলেন। আমরা পছন্দ করি বা না করি এর নাম আনুগত্য। অন্যদিকে বিএনপি ঠিক তার উল্টো। বেশি কথার দরকার নেই, মওদুদ আহমেদ, রিজভী বা গয়েশ্বরদের দেখলেই বোঝা যায় তাদের দলের কি ভূমিকা বা তারা কি বলেন আর করতে পারেন। অথচ এরাই এখনও প্রচারে এগিয়ে। বলছিলাম আওয়ামী লীগের কথা। আওয়ামী লীগের বড় শক্তি এদেশের সুশীল ও সুধী সমাজ। সবাই এক বয়সে আওয়ামী বিরোধিতা করলেও শেষ বয়সে এসে ভাল জানেন এ দল ছাড়া কেউ তাদের মূল্যায়ন করবে না। আর কারও কাছে তাদের চাওয়া পাওয়ারও কিছু নেই। তাই তারা শেষ বয়সে আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেন। মনে আছে রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের কথা? শেষ সময়ে এসে টুঙ্গিপাড়া গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু না থাকলে এদেশ হতো না আর তা না হলে তাঁর মতো মানুষ কোনদিন রাষ্ট্রপতি হতে পারতেন না। এটা তাঁরা বোঝেন আর সচেতন হন বা প্রায়শ্চিত্ত করেন যখন আর কোন পথ খোলা নেই। তাই এতে আসলে দেশ বা জাতির আগ্রহ থাকে না কোন লাভালাভও নেই। তার চেয়ে অনেক জরুরী সময় থাকতে সাধন করা। আজ দেশে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার শাসন ও কর্তৃত্ব যখন প্রতিষ্ঠিত তখন এক ধরনের নেতারা এটাকে গ্যারান্টেড বলে ধরে নিয়েছেন। যা মোটেই সত্য বা স্বাভাবিক নয়। আসলে ভেতরে ভেতরে চলছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। সে ষড়যন্ত্রের সবটা আমরা টের না পেলেও বুঝতে পারি একবার মওকা মিললেই এরা সবকিছু আরেক রকম করে তুলবে। ভাবতেও ভয় লাগে দেশের পরিবেশ বা জাতির হাল কি হতে পারে? মুখে যত বড় বড় কথাই বলা হোক না কেন সবাই জানেন খুঁটি নড়বড়ে। ভালভাবে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের বেরিয়ে আসা সহজ হবে না। জায়গায় জায়গায় বিরোধীদের এজেন্ট বা দূতেরা ঘাপটি মেরে আছে। কিছুদিন আগে আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে আমরা তাই দেখলাম। আসন্ন নির্বাচনের আগে বিএনপি কতটা মরিয়া আর কি করতে পারে তার প্রমাণ আছে ভারতে গিয়ে ধর্ণা দেয়ায়। তারা মুচলেকা দিয়ে হলেও গদিতে আসতে রাজি। ষড়যন্ত্র চলছে সমানে। গদিলোভী বা সুযোগসন্ধানীরা না বুঝলেও শেখ হাসিনা ভাল জানেন। জানেন বলেই তিনি আছেন কঠোর অবস্থানে। পাশাপাশি দরকার সচেতন আর এফেক্টিভ সুশীল সমাজ। যারা জবাব দিতে জানেন। যাদের মেধা আর শ্রমে এদেশ হতে পারে অভয়ারণ্য। অতিসম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা সংগঠন সম্প্রীতি বাংলাদেশ আমাদের মনে সে সম্ভাবনার রেখা জাগিয়ে দিয়ে গেছে। সত্যি বলতে কি অনেকদিন পর নড়ে চড়ে বসার মতো একটা খবর। এর আগেও আমরা না না সংগঠন দেখেছি। বিশেষত সংখ্যালঘুদের নিয়ে কথা বলার জন্য ঐক্য পরিষদ বা হিন্দু পরিষদ জাতীয় সংগঠন কিংবা বৌদ্ধ খ্রীস্টানদের সংগঠনগুলো মূলত একপেশে। তারা দীর্ঘ সময় ধরে মাঠে থাকলেও তেমন কোন সাড়া তুলতে পারে না। তাদের আন্তরিকতা বা শ্রমের প্রতি নিষ্ঠা রেখেই বলি সময় এসেছে নতুন ধারা বা নতুন কিছু যোগ হবার। কারণ আজ আর কেবল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান নয় মুসলিমদের এক বিরাট অংশও সংখ্যালঘু। তাছাড়া এই লঘু গুরু শব্দই আপত্তির। এতে একে অপরকে ছোট করার পাশাপাশি তুচ্ছতাও থাকে। সবাই সমান আর এক হবার জন্য স্বাধীন হওয়া দেশে এমন বিভাজন কষ্টের। যাই হোক, সম্প্রতি আসা সংগঠনটি নানা কারণে আশা জাগিয়েছে। মুক্তবুদ্ধির মানুষেরা একত্রিত হলে আশা জাগবেই। তাদের চোখ কান খোলা। তারা ভুল করলেও পাপ করেন না। এর আগে আমরা মানবাধিকার বা সুশাসনের নামে গজিয়ে ওঠা সংগঠনগুলোকে দেখেছি নানা কারণে তারা দু-একটি মিডিয়া হাউজের মনোরঞ্জন ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি। আমাদের আশা, এই সংগঠনটি বাংলাদেশের প্রগতিশীল মানুষদের চোখ খুলে দেবে। তাদের সতর্ক করার পাশাপাশি রাজনীতি ব্যতিরেকে অথচ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত আলোয় পথ চলতে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এতে শহীদ কন্যা মুক্তবুদ্ধির সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সবাই আছেন। এটা আশার কথা যে, এরা আমাদের মাটির প্রতি অনুগত। অনুগত আমাদের ইতিহাস আর অতীতের প্রতি। দুদিক থেকে তারা আমাদের জাতিকে সাহায্য করতে পারেন। এক. রাজনীতির বাইরে যে নাগরিক বাস্তবতা তার আলোয় মানুষকে সত্য মিথ্যা আর লোভ প্রলোভন থেকে মুক্ত করা। দুই. মানুষকে ইতিহাস ও দেশের প্রতি অসাম্প্রদায়িকতার প্রতি আবারো উদ্ধুদ্ধ করে তোলা। ভেতরে ভেতরে যেসব পাপ আর গ্লানি আমাদের সমাজকে পিছিয়ে দিচ্ছে বা ক্রমাগত দুর্বল করে তুলছে তার প্রভাবে তারুণ্য এখন বিপথগামী। তারা নিজেদের রাজাকার বলতেও লজ্জিত হচ্ছে না। এই জায়গাটা ভয়ের। এ জাতীয় সংগঠন আবারো তাদের সুপথে ঠিক জায়গায় আনতে পারবে। আমি বলবো, এদেশের বিকৃতমনা বুদ্ধিবৃত্তি কিংবা লোভী অসাধু পুরস্কার প্রত্যাশীদের নয়, সাথে রাখুন সৎ ও নিবেদিতদের। সাথে রাখুন তারুণ্যকে। আর চোখ খুলে দিন সেসব নীরিহ সংখ্যালঘুদের যারা কিছু হলেই মার খায় ইজ্জত হারায় বা দেশত্যাগ করে। এর একটাও সমাধান নয়। সমাধান সবাই মিলে এদেশকে প্রকৃত মুক্ত ও স্বাধীনভাবে বাঁচার মত করে রাখায়। সে জায়গায় অপপ্রচার আর বিরোধিতার মুখে ছাই দিয়ে শেখ হাসিনা তথা প্রগতিশীলতার জয় নিশ্চিত করতে এই সংগঠন ভূমিকা রাখতে পারবে। বাংলাদেশ ঠিক থাকলেই উন্নয়ন টিকবে। জাতি এগুবে। এই সত্য যারা মানেন তাদের জন্য এর পাশে দাঁড়ানোর বিকল্প কোথায়? জয় হোক সম্প্রীতি বাংলাদেশের।
×