ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বরদাস্ত করব না;###;সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনায় উত্তাল জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

দিন বদল শুরু ॥ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২২ জুলাই ২০১৮

দিন বদল শুরু ॥ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উত্তাল জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে দেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতেও যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, বাংলাদেশের সত্যিই দিন বদল শুরু হয়েছে। এ অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বরদাস্ত করব না। অনেক ষড়যন্ত্র, চড়াই-উতরাই পার হয়ে দেশকে আমরা এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। মৃত্যু ভয় আমি করি না, মৃত্যুর আগে মরতে চাই না। যতক্ষণ দেহে জীবন আছে ততক্ষণ দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে ও তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাব। যেদিন দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারব, দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত করে গড়ে তুলতে পারব, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব সেদিনই আমার জীবন সার্থক হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের কিছু সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, দেশের কিছু মানুষ আছে তাদের চোখে কোন উন্নয়নই পড়ে না। শুধু তারা চায় নৌকা ঠেকাতে। আসলে এরা দেশের অস্তিত্ব ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সামনে বন্যা আসছে, তারা কী নৌকায় চড়বে না? নৌকার অপরাধটা কী? দেশের জনগণ নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই স্বাধীনতা পেয়েছে, মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে, দেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই বাংলাদেশ আজ পারমাণবিক ও স্যাটেলাইটের এলিট ক্লাবের সদস্য হয়েছে, সমুদ্রসীমা থেকে মহাকাশ জয় করেছে। যারা নৌকা ঠেকাতে চান তারা কী দেশে আবারও রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় আনতে চান? তিনি বলেন, এসব মানুষ হচ্ছে সামরিক স্বৈরাচারের উচ্ছিষ্ট খেয়ে নিজেরা সম্পদশালী, বিত্তশালী হয়েছে, বিদেশে অবৈধ অর্থের পাহাড় গড়েছে। এরা দেশের স্বাধীনতায় ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এদের মুখে এসব কথা মানায় না। এরা কখনও দেশবাসীকে আর বিভ্রান্ত করতে পারবে না। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে তাকে দেয়া গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশের সকল সফলতা ও অর্জন দেশবাসীর প্রতি উৎসর্গ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের একটি কবিতার পঙ্ক্তি উচ্চারণ করে বলেন, ‘এই মণিহার আমার নাহি সাজে। আমার কোন সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই। আমি জনগণের সেবক। জনগণের কল্যাণে কতটুকু করতে পারলাম, তাদের ভাগ্যের কতটুকু পরিবর্তন করতে পারলাম, দেশের কতটুকু উন্নতি করতে পারলাম সেটাই আমার কাছে প্রধান বিবেচ্য ও লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও উন্নত জীবন। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণই আমার একমাত্র লক্ষ্য। কোন উৎসব-অনুষ্ঠানে যাই না, দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ৫ ঘণ্টা ঘুম ছাড়া বাকি পুরো সময় দেশের জন্য কাজ করি। আমার কোন চাওয়া-পাওয়ার নেই, আমার একটাই লক্ষ্য দেশ ও মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়ন। সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। আমার কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। শুধু একটি জিনিস দেখতে চাই। বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্বল্পোন্নত থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ জয়, অস্ট্রেলিয়ায় গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড ও ভারতের আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রী অর্জন করায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীকে এ গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের তীব্র ¯্রােত ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে পুরো অনুষ্ঠানটি সার্বজনীনতায় রূপ নেয়। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি রীতিমত জনসমুদ্রে রূপ নেয়। আগামী নির্বাচনের আগে ঢাকা মহানগরীতে লাখ লাখ মানুষের ঢল নামিয়ে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক শক্তির মহড়াও দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। জন¯্রােত দেখে আয়োজক নেতারাও অকপটে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, প্রত্যাশারও দ্বিগুণ স্বতঃস্ফূর্ত মানুষ গণসংবর্ধনায় উপস্থিত হয়ে একদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তেমনি বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে তাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনেরও জানান দিয়েছে। আর এই গণসংবর্ধনাকে ঘিরে শুধু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির মিলনমেলায় নয়, গোটা মহানগরীতেই যেন উৎসবমুখর পরিবেশে রূপ নেয়। আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশ ও দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে লেখা মানপত্র পাঠ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ফুল দিয়ে শুভেচ্ছায় ¯œাত করা ছাড়াও মানপত্রটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে হস্তান্তর করেন তিনি। কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গীতি নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেয়া হয়। এরপর আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের পরিচালনায় প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে লেখা দুটি গান ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা, ধন্য তুমি ধন্য হে, ধন্য তোমার জন্য এই বাংলাদেশ’ ও ‘ছিল নৌকা, আছে নৌকা, থাকবে নৌকা ইতিহাসে, বাংলাদেশে’ পরিবেশন করে দেশের খ্যাতনামা সঙ্গীতশিল্পী ও আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। এরপর দেশের খ্যাতনামা নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ ও এন আর ওয়াসেকের নেতৃত্বে ‘আমার বাংলাদেশ’ নামক পৃথক দুটি গীতি নৃত্যনাট্য পরিবেশন করা হয়। দেশের রূপ কাহিনী রূপকার শেখ হাসিনা একটি প্রদর্শনীতে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ সরকারের ঐতিহাসিক সাফল্যে ও মেঘা প্রকল্পগুলো দেখানো হয়। প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া গণসংবর্ধনা উপলক্ষে পুরো রাজধানীকেই সাজানো হয়েছিল অপরূপ সাজে। গণসংবর্ধনার সময় বেলা তিনটায় নির্ধারিত করা হলেও বেলা ১১টার পর থেকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল নামতে থাকে। বাসে-ট্রাকে, পায়ে হেঁটে মিছিল নিয়ে বাদ্য-বাজনার তালে তালে হাজার হাজার নেতাকর্মী হাজির হতে থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। দুপুর দুইটার আগেই মঞ্চের সামনে স্থাপিত বিশাল মঞ্চ উপচিয়ে তা শাহবাগ থেকে শুরু করে টিএসসি, দোয়েল চত্বর, মৎস্যভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত পুরো এলাকা লোকে-লোকারণ্য হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে আসার আগেই যেদিকে তাকানো যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগরীসহ আশপাশের জেলার মন্ত্রী-এমপি ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিশাল বিশাল শো-ডাউন সবার দৃষ্টি কাড়ে। বিশেষ করে নীল গেঞ্জি-টুপি এবং হাতে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উড়িয়ে মঞ্চের সামনে যুবলীগের বিশাল উপস্থিতি ও দৃষ্টিনন্দন ডিসপ্লে সবার দৃষ্টি কাড়ে। আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে পুরো অনুষ্ঠানটি সার্বজনীনতায় রূপ পায়। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, তৃণমূল বিএনপির ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল ইসলাম খানসহ বিভিন্ন দল ও পেশার নেতারা গণসংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই তাকে সংবর্ধনা জানাতে আসা সব শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে উন্মোচন হয়েছে উন্নয়নের দ্বার ॥ প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুটি তুলে ধরে বলেন, বিরোধী দলে থাকতেই আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে আন্দোলন শুরু করেছিলাম। শত বাধা উপেক্ষা করে গণআদালত বসিয়েছিলাম। আমাদের নির্বাচনের ইশতেহারেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করেছিলাম। তিনি বলেন, শত বাধা উপেক্ষা করে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, বিচারের রায়ও কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ কলুষমুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হয়েছে, উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন হয়েছে। যুদ্ধে জয়ের বিজয়ী জাতি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশ দীর্ঘদিন পরিচিত ছিল খুনীর জাতি হিসেবে। আমরা দেশে হৃতগৌরব আবার ফিরিয়ে এনেছি। সারাবিশ্বের সামনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোলমডেল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক চড়াই-উতরাই, ঘরের ভেতর-বাইরের অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই আমরা দেশকে আজ এ পর্যায়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। কখনও জীবনের মায়া করিনি। কখনও কারও কাছে আপোস বা মাথানত করিনি। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন ছিল- দেশের মানুষ শোষণ-বঞ্চনা ও ক্ষুধার হাত থেকে মুক্তি পাবে, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণেই আমরা নিরলসভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমার নিজের জীবন দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি। বাংলার মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান পায়, দেশে কোন হাহাকার থাকবে না, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। গণতন্ত্র না থাকলে জনগণ ভোট দিচ্ছে কিভাবে? ॥ প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সমালোচকদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাই নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দিয়েছি। জনগণের ক্ষমতা এখন জনগণের কাছে। আমাদের সরকারের দু’মেয়াদে এ পর্যন্ত স্থানীয় সরকার, উপ-নির্বাচনসহ সাড়ে ৬ হাজারের বেশি নির্বাচন হয়েছে। প্রত্যেকটি নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে মনমত জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচিত করেছেন। স্থানীয় ও জাতীয়সহ যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলোতে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছে। গণতন্ত্র যদি না থাকে তবে জনগণ ভোট দিয়েছে কিভাবে? আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলবে তা আমি বরদাস্ত করব না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এগিয়ে যাওয়ার ধারা আমরা যাতে অব্যাহত রাখতে পারি। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করায় একটি মহল সমালোচনায় মেতেছে। যারা এটাকে সন্দেহের চোখে দেখে, সমালোচনা করে তাদের সম্পর্কে আমার মনে হয়, তারা দেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্ব স্বীকার করে না। তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি এত বেশি বাড়া ভাল না, উন্নয়নশীল দেশ হলে সাহায্য পাওয়া যাবে না। এসব যারা বলেন তাদের আতে কেন ঘা লেগেছে। আঁতে ঘা লেগেছে এই কারণে যে, তারা দেশের হাড্ডিসার-কঙ্কালসার মানুষদের দেখিয়ে বিদেশ থেকে সাহায্য এনে লুটেপুটে খেলে নিজেরা বিত্তশালী-ধনশালী হয়েছে। এ কারণেই তাদের কাছে দেশের এত উন্নয়ন পছন্দ হচ্ছে না। এ সময় বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে অনেকগুলো গণমুখী কাজ শুরু করি। বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেগুলো বন্ধ করে দেয়। আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আবার তা শুরু করি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের উন্নয়ন। তিনি বলেন, আমরা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আজকে গণসংবর্ধনার কোন প্রয়োজন নেই। সংবর্ধনা উৎসর্গ করছি বাংলাদেশের মানুষকে। আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করা, সুন্দর জীবন উপহার দেয়া। সেটা শুধু বিত্তশালীদের জন্যই নয়। একেবারে গ্রাম পর্যায়ের মানুষের উন্নতি। তিনি বলেন, আমার রাজনীতিই হচ্ছে বঞ্চিত মানুষের জন্য। যেদিন তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারব, সেদিন নিজেকে সার্থক মনে করব। ১৫ আগস্ট সব হারানোর বেদনায় কাতর প্রধানমন্ত্রী ॥ প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ১৫ আগস্টে পিতা-মাতা, ভাইসহ সব আত্মীয়-স্বজন হারানোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বার বার আবেগে জড়িয়ে পড়েন। বাবা-মা, ভাইসহ সবাইকে রেখে ১৯৭৫ সালের ২৩ জুন শেখ রেহানাকে নিয়ে আমার স্বামীর কর্মস্থল জার্মানিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তখন কিছুতেই যেতে মন চাইছিল না। কিন্তু যাওয়ার পর ১৫ আগস্ট একটি ফোন পেলাম, ওই ফোনটি যেন আমাদের কাছে অনেক কর্কশ মনে হলো। তখনও জানি না ঠিক কী ঘটেছে। এরপর জানলাম সব শেষ। আমাদের কেউ বেঁচে নেই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে শুরু হয় সংবিধান লঙ্ঘন করে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। দিল্লীতে আসলেও জিয়াউর রহমান দীর্ঘ ৬টি বছর আমাকে দেশে ফিরতে দেয়নি। আমার অনুপস্থিতিতেই ১৯৮১ সালে দলের নেতারা আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আমি কখনও এটা চাইনি। দুর্নীতি-জঙ্গীবাদ-লুটপাট-অর্থপাচারই বিএনপির নীতি ॥ বক্তব্যের একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এদেশে জঙ্গীবাদের বীজ বপন করে গিয়েছিল বিএনপি। আমরা ক্ষমতায় এসে জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি। এখন জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদকের হাত থেকে আমাদের যুব সমাজকে আমাদের রক্ষা করতেই হবে। যুব সমাজের মেধা-মনন ও জ্ঞানকে আমাদের দেশ গঠনে ব্যবহার করতে হবে। তাই জঙ্গী-সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আর এ কাজে দেশের মানুষের অব্যাহত সমর্থন রয়েছে। দেশের জনগণ আমাদের সঙ্গেই আছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন বানচালের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস, পুড়িয়ে পুড়িয়ে শত শত মানুষকে হত্যা, নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা তুলে ধরে বলেন, আসলে এদের নীতিই হচ্ছে হত্যা-সন্ত্রাস-দুর্নীতি-বিদেশে অর্থপাচার ও জঙ্গীবাদ। এরা ক্ষমতায় থেকে দেশের কোন উন্নয়ন করতে পারেনি, পেরেছে নিজেদের উন্নয়ন করতে, নিজেরা সম্পদশালী, বিত্তশালী হয়েছে, বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। এরা কখনই দেশকে কিছু দিতে পারেনি, কারণ এরা দেশের স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করে না। নীতি ও আদর্শের কাছে কখনও মাথানত করিনি ॥ ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো আমিও কখনও কারোর কাছে মাথানত করিনি, আদর্শের সঙ্গে আপোস করি না। ১৫ ফেব্রুয়ারি কারচুপির নির্বাচন করে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গিয়েছিলেন। কিন্তু ভোট চুরির অপরাধে দেশের মানুষ মাত্র দেশ মাসের মাথায় তাঁকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। তিনি বলেন, ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দেয়নি বলেই ক্ষমতায় আসতে পারিনি। কারণ দেশের সম্পদ ও মানুষের অধিকার আমার কাছে সবচেয়ে বড়। দেশের মানুষের অধিকার বিক্রি করে দেয়ার নীতি আমার বাবা আমাকে শেখায়নি। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসলেও গ্যাস বিক্রি করতে পারেননি। ক্ষমতায় এসেই সন্ত্রাস, নির্যাতন, মানুষ হত্যা, গ্রেনেড হামলা, লুটপাট, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি, বিদেশে অর্থপাচার করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। তারা দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিল। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সরকার উৎখাত ও নির্বাচন বানচালের নামে ২০১৩ থেকে ১৫ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে অগ্নিসন্ত্রাসসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকা- করে দেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে নির্বাচনে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশসেবার সুযোগ দিয়েছিল বলেই এই সাড়ে ৯ বছরে সত্যিই আমরা দেশের দিন বদল করতে পেরেছি। বাংলাদেশ তার লুপ্ত গৌরব ফিরে পেয়েছে।
×