ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে হুড়াহুড়ি, জাপা সুবিধাজনক অবস্থানে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২২ জুলাই ২০১৮

মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে হুড়াহুড়ি, জাপা সুবিধাজনক অবস্থানে

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ময়মনসিংহের ১১টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দলের নেতাদের মধ্যে চলছে হুড়াহুড়ি অবস্থা। প্রতিটি আসনেই প্রার্থীর ছড়াছড়ি দলটিতে। জোট-মহাজোটের আসন ভাগাভাগির বিচারে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বর্তমান প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। আগামী নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি জেলার চারটি আসন ধরে রাখতে জোর লবিং চালালেও আওয়ামী লীগ এবার তাদের আর ছাড় দিতে নারাজ। অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৃশ্যমান দৌড়ঝাঁপ দেখা না গেলেও তলে তলে গণসংযোগ করছেন অনেকেই। কয়েকটি আসনে আবার মুখোমুখি বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীরা। তবে প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিএনপি জামায়াতে সঙ্কট থাকায় দলের ভরসা পুরনো মুখ। ফলে নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত অনেকটাই অপ্রস্তুত বিএনপি-জামায়াত। এলাকার ভোটারদের ধারণা, প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে বা একক প্রার্থিতা নিশ্চিত না করতে না পারলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এক কথায় গত নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনেও ময়মনসিংহের আসনগুলো ধরে রাখতে এবং হারানো আসন পুনরুদ্ধারে অনেকটাই কোমর বেঁধেই মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি। জেলার সব আসনের ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড দেখলেই সবার কাছে স্পষ্ট হবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে প্রার্থিতার ছড়াছড়ি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, শুভেচ্ছার পোস্টার, ব্যানার, প্যানা ও বিল বোর্ডসহ দৃশ্যমান প্রচারের সব মাধ্যমেই সোচ্চার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এলাকায় গণসংযোগ সভা, সমাবেশ, শোডাউন, ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে যোগদানের পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে অনেকে মনোনয়ন চাওয়ার প্রত্যাশার কথা জানান দিচ্ছেন। একই সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে লবিং করছেন। কেউ কেউ বিশাল অঙ্কের বাজেট নিয়েও নেমেছেন মনোনয়নের মাঠে। অনেক ‘দানবীর’ অকাতরে টাকা ছড়াচ্ছেন। আগামীকাল নওগাঁ ধর্মমন্ত্রী ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান জানান, অকাতরে টাকা ছড়িয়ে আলোচনায় আসতে পারবেন অনেকেই। কিন্তু দলের জন্য ত্যাগ আর পরীক্ষিত ক্লিন ইমেজ ছাড়া কোন নেতা মনোনয়ন পাবে না। এদিকে বিএনপি ও জামায়াতের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৃশ্যমান দৌড়ঝাঁপ দেখা না গেলেও তলে তলে গণসংযোগ করছেন অনেকে। হালুয়াঘাট, ভালুকা, মুক্তাগাছা ও গৌরীপুরে গণসংযোগের মাঠে সক্রিয় বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি পুরোপুরি প্রস্তুত। প্রতিটি আসনেই একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। প্রকাশ্য প্রচার করতে না পারলেও উঠান বৈঠক, সদস্য সংগ্রহসহ তলে তলে গণসংযোগ করছেন অনেকে। গ্রীন সিগন্যাল পেলেই প্রার্থীরা মাঠে নামবেন, জানান এই বিএনপি নেতা। অপরদিকে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে এরশাদের জাতীয় পার্টি। ইতোমধ্যে কয়েক প্রার্থী মাঠে ব্যাপকভাবে গণসংযোগ করছেন। গত সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহের ১১টি আসনের মধ্যে মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, ঈশ্বরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ সদর এই চার আসনে জাতীয় পার্টি এবং বাকি সাত আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। জাতীয় পার্টি চাইছে আগামী নির্বাচনেও আসন ভাগাভাগির অঙ্কে এই চারটি আসনে তাদের প্রার্থীরাই মনোনয়ন পাবেন, আওয়ামী লীগ তাদের সমর্থন দেবে। কিন্তু এই চারটি আসনের বাস্তব চিত্রটি ভিন্ন। গত নির্বাচনে ছাড় দিলেও শুধু রওশন এরশাদ ছাড়া অন্য কোন আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। এসব আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাই মনোনয়ন চান। ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) ॥ আদিবাসী অধ্যুষিত এই আসনটির একছত্র অধিপতি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত এ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন। তার মৃত্যুতে শূন্য এই আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন তার পুত্র জুয়েল আরেং। কিন্তু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর দলের পরীক্ষিত, ত্যাগী নেতাকর্মীর সঙ্গে তিনি নানা বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। দূরত্ব বেড়েছে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গেও। তবে সব বিরোধ মিটিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ এবং আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন নিতে প্রচেষ্টার কোন ত্রুটি করছেন না স্থানীয় এই সংসদ সদস্য। মনোনয়ন দৌড়ে বর্তমান এমপি জুয়েল আরেং ছাড়া সাবেক ছাত্রনেতা উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ খান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ময়মনসিংহ জেলা ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার আনোয়ার হোসেন, হালুয়াঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা কবীরুল ইসলাম বেগ, মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন, এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান আকন্দ, ময়মনসিংহ মেডিক্যালের সাবেক অধ্যক্ষ বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক সিএন সরকার চন্দন, এ্যাডভোকেট পীযূষ কান্তি সরকার ও অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতেও রয়েছে একাধিক প্রার্থী। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি আফজল এইচ খান, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসগর, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা সালমান ওমর রুবেল মনোনয়নের আশায় মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। জাতীয় পার্টি থেকে এ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন মনোনয়নপ্রত্যাশী। স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগের জুয়েল আরেং এমপি, ফারুক আহমদ খান, বিএনপির এমরান সালেহ প্রিন্স ও সালমান ওমর রুবেল ছাড়া দৃশ্যত মাঠে নেই কেউ। ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) ॥ এ আসনটিও আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত। এতদিন এই আসনে একছত্র অধিপতি ছিলেন ৫ বারের এমপি প্রয়াত শামছুল হক। তার মৃত্যুর পর এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত শামছুল হকের পুত্র শরীফ আহমদ। কিন্তু এমপি হওয়ার পর নানা ঘটনায় শিরোনাম হন তিনি। নিয়োগ বাণিজ্যসহ দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের অবমূল্যায়ন, মতবিরোধে জড়িয়ে পড়ার কারণে এমপি শরীফ আহমদ এখন অনেকটাই কোনঠাসা। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রয়াত বাবা শামছুল হকের আদর্শ অনুসরণ করে দলের ত্যাগী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মূল্যায়ন করে মাঠে সক্রিয় হয়ে পূর্বের জনপ্রিয়তা ফিরে আনতে সক্রিয় হয়েছেন তিনি। ভোটারদের মধ্যে আলোচনায় আছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলার নেতা ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ। আগামী নির্বাচনে শরীফ আহমদ এমপি ছাড়াও সাবেক এমপি হায়েতুর রহমান খান বেলাল, ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ফজলুল হক, সাবেক ছাত্রনেতা অধ্যাপক গোলাম ফেরদৌস জিলু এবং বিএনপি থেকে সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ার ও মোতাহার হোসেন তালুকদার মনোনয়ন পেতে লবিংয়ের পাশাপাশি গণসংযোগ করছেন। ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) ॥ এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডাঃ মুজিবুর রহমান ফকির। তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ময়মনসিংহ জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাবেক ছাত্রনেতা এ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমেদ। এমপি হওয়ার পর তার পুত্র রাজীবের কিছু কর্মকা-ে তার ইমেজ কিছুটা সঙ্কটে পড়ে। তবে এই সংসদ সদস্য দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ এলাকাবাসীর আপনজন প্রমাণে মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। এলাকার উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে প্রতিনিয়ত চেষ্টা-তদবির করছেন। আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ থেকে এ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমদ এমপি ছাড়াও বাকসুর সাবেক ভিপি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ একেএম আব্দুর রফিক, এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, সাবেক ছাত্রনেতা কৃষিবিদ ড. সামিউল আলম লিটন, ময়মনসিংহ মেডিক্যালের সাবেক অধ্যক্ষ সার্জন অধ্যাপক ডাঃ মতিউর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আহমদ খান পাঠান সেলভী, সাবেক ছাত্রনেতা শোর্মেদুজ্জামান সেলিম, গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পরিচিতি পাওয়া নতুন মুখ নাজনীন আলম, ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরীফ হাসান অনু, গোলাম মোস্তফা ওরফে ভিপি বাবুল নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি থেকে ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসেন, হাফেজ মোঃ আজিজুল হক, উপজেলা চেয়ারম্যান আহমদ তায়েবুর রহমান হীরণ এবং জাতীয় পার্টি থেকে গণমাধ্যম কর্মী মোশাররফ হোসেন মনোনয়নের আশায় গণসংযোগ করছেন। ময়মনসিংহ-৪ (সদর) ॥ গত নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির কারণে মর্যাদাপূর্ণ এই আসনটিতে বিশাল ভোটব্যাংক থাকলেও জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে হয় আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেয়ায় গত সংসদ নির্বাচনে এই আসনে এমপি হন বর্তমানে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। নিশ্চিত আসন ছেড়ে দেয়ার কারণে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্মমন্ত্রী করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলন কমিটির দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও সর্বশেষ বেগম রওশন এরশাদের উদ্যোগে বিভাগের মর্যাদা পায় ময়মনসিংহ। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেও ঘটে রদবদল। আগামী নির্বাচনে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও তার পুত্র মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, স্বাচিপের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন। জাতীয় পার্টি থেকে বেগম রওশন এরশাদ আবারও এই আসনে মনোনয়ন চান বলে শোনা যাচ্ছে। জাপার সঙ্গে জোট হলে বেগম রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ সদর কিংবা সদর ছেড়ে ত্রিশাল থেকেও প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপি থেকে অধ্যাপক ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, কাজী রানা, এ্যাডভোকেট আব্দুল হান্নান খান এই আসনে মনোনয়ন চান। বিএনপির বাইরে থাকা সাবেক এমপি ও পৌর চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন খান দুলুও মনোনয়নের প্রত্যাশায় গণসংযোগ করছেন। সিপিবি থেকে এ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত মনোনয়ন চান। ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) ॥ আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেয়ায় গত সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি। জাপা থেকে এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক এমপি কেএম খালিদ বাবু, এ্যাডভোকেট বদর উদ্দিন আহমদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুর স্ত্রী সেলিমা সোবহান খসরু, পৌর মেয়র আব্দুল হাই আকন্দ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব তাহমিনা জাকারিয়া, সাবেক ছাত্রনেতা আহসান মোঃ আজাদ, প্রয়াত এমপি শামছুল হকের পুত্র মোঃ তারেক, কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম মনোনয়ন প্রত্যাশী। অন্যদিকে বিএনপি থেকে সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, তার সহোদর জাকির হোসেন বাবলু মনোনয়ন চান। জামায়াতে ইসলাম থেকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মতিউর রহমান আকন্দ, ইসলামী ঐক্য জোটের মুফতি হাবিবুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে জাকির হোসেন বাবুলও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে জাতীয় পার্টির সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি এমপি, আওয়ামী লীগের এ্যাডভোকেট বদর উদ্দিন আহমেদ, পৌর মেয়র আবদুল হাই আকন্দ ও মোঃ তারেক ছাড়া অন্য কোন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তেমন তৎপরতা নেই মুক্তাগাছায়। ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) ॥ এই আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন। তবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নেয়ায় সাবেক এই এমপিকে নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে রয়েছে নানা বিতর্ক। আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাকের অভিযোগ, একাত্তরে এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন পাকসেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এসবের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীন ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ পড়া নিয়ে আন্দোলনে এক শিক্ষক ও এক পথচারীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। অভিযোগ ওঠে সরকারকে বিব্রত করতে তথ্য গোপন করে ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজকে পাশ কাটিয়ে নিজ পরিবারের প্রতিষ্ঠা করা বেগম ফজিলাতুন্নেছা কলেজ জাতীয়করণে এই এমপি ভূমিকা রেখেছেন। জাসদের প্রার্থী সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টুর অভিযোগ, বিএনপি-জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন বর্তমান এমপি ও তার পুত্র মিলে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিনের দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়েও বর্তমান এমপি রয়েছেন ঝুঁকিতে। আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন ছাড়াও সাবেক এমএনএ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালেক সরকার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। অন্যদিকে বিএনপি থেকে ইঞ্জিনিয়ার শামছুদ্দিন আহমেদ, তার ভাতিজা আখতারুল আলম ফারুক, জাতীয় পার্টি থেকে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ কে আর ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, জামায়াত থেকে অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, জাসদ (ইনু) থেকে সাবেক ছাত্রনেতা ও ময়মনসিংহ পৌরসভার প্যানেল মেয়র সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু মনোনয়নের আশায় এলাকায় গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন। ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) ॥ আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেয়ায় গত নির্বাচনে এই আসনে এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির এম এ হান্নান। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এই এমপি বর্তমানে জেল হাজতবাস করছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার জোট হলে আগামী নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন বেগম রওশন এরশাদ। তবে আগামী নির্বাচনে আর ছাড় নয়, আওয়ামী লীগ থেকেই মনোনয়নের দাবিতে সোচ্চার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ থেকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি হাফেজ রুহুল আমিন মাদানি, সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট রেজা আলী, আব্দুল মতিন সরকার, জনপ্রিয় পৌর মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামান ও এ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন খান। বহিরাগত হঠাও ইস্যুতে সাবেক এমপি রেজা আলী দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরাগভাজনে পরিণত হয়েছেন। আর জায়গাটি লুফে নিয়েছেন মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামান। তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আগামীতে এবিএম আনিসুজ্জামানকেই এমপি হিসেবে দেখতে চান বলে স্থানীয়রা জানায়। এছাড়া বিএনপি থেকে ডাঃ মাহবুবুর রহমান লিটন ও উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মনোনয়ন চান। ওয়াকার্স পার্টি থেকে ময়মনসিংহ জেলা ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি ডাঃ সুজিত বর্মন মনোনয়ন চাইবেন। ময়মনসিংহ-৮(ঈশ্বরগঞ্জ) ॥ জোটের অঙ্কে এই আসনটি গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেয়ায় এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক এমপি আব্দুস সাত্তার, জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সুমন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৌমেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী, এ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের ডিআইজি আবদুর রহিম মনোনয়ন চান। অন্যদিকে বিএনপি থেকে সাবেক এমপি শাহ নুরুল কবীর শাহীন, লুৎফুল্লাহ হেল মাজেদ বাবু, এলডিপির আবুল বাশার মনোনয়ন চান। গণফোরাম নির্বাচনে অংশ নিয়ে এ্যাডভোকেট এএইচএম খালেকুজ্জামান এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন। জাতীয় পার্টি জোটগত নির্বাচন না করলে ফখরুল ইমাম মনোনয়ন চাইবেন। এমপি ফখরুল ইমাম এবং আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুস সাত্তার, মাহমুদুল হাসান সুমন এবং বিএনপির লুৎফুল্লাহ হেল মাজেদ বাবু ছাড়া কেউ মাঠে নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) ॥ এই আসনে গত নির্বাচনে নতুন মুখ আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন মনোনয়ন পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত চার বছরে এলাকায় অনেক উন্নয়ন করলেও তার কিছু কর্মকা-ের কারণে বিতর্কিতও হয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও দ্বিধাবিভক্ত। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রভাবশালী মন্ত্রীদের এলাকায় এনে সমাবেশ এবং নানা উন্নয়নের ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ইমেজ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন এমপি তুহীন। সর্বশেষ এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নান্দাইলের এক সমাবেশে এমপি তুহীনের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আনোয়ারুল আবেদীন তুহীন এমপি আবারও মনোনয়ন পাবেন বলেই তিনি আশাবাদী। তিনি ছাড়াও সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব) আব্দুস সালাম, এ্যাডভোকেট কবীর উদ্দিন ভ্ইুয়া, সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ও ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ্যাডভোকেট আব্দুল হাই, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চৌধুরী স্বপন, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান মনোনয়ন চান। অন্যদিকে বিএনপি থেকে সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরী ও সৌদি প্রবাসী শিল্পপতি একেএম রফিকুল ইসলাম মনোনয়ন চান। জাতীয় পার্টি থেকে হাসনাত মাহমুদ তালহা মনোনয়ন চাইতে পারেন। ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) ॥ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত এই আসনের একছত্র অধিপতি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। গত নির্বাচনে তারই পুত্র নতুন প্রজন্মের প্রিয়মুখ ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়নসহ দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি বছরজুড়ে এলাকার মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। তবে রাস্তাঘাটের দৃশ্যমান ও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করতে না পারায় কিছুটা হতাশ এই এমপি জানান, ময়মনসিংহ-গফরগাঁওয়ের খান বাহাদুর ইসমাইল হোসেন সড়ক ও গফরগাঁও-টোক সড়ক উন্নয়নসহ প্রায় ৪০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ একনেক ও প্রি-একনেকে পাস হওয়ার পাইপলাইনে রয়েছে। শীঘ্রই এই উন্নয়নের কাজ দৃশ্যমান হবে। আগামী নির্বাচনে ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। আর গফরগাঁও আওয়ামী লীগ এখন সুসংগঠিত এবং নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল ছাড়াও সাবেক এমপি অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর রেজা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও সাবেক মেয়র এ্যাডভোকেট কায়সার আহমেদ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে বিএনপি থেকে শিল্পপতি এবি সিদ্দিকুর রহমান ও প্রয়াত এমপি ফজলুর রহমান সুলতানের পুত্র মুশফিকুর রহমান, বিএনপি নেতা অধ্যাপক আবুল কাশেম, আক্তারুজ্জামান বাচ্চু মনোয়ন চান। জাতীয় পার্টি থেকে কারি হাবিবুল্লাহ বেলালী ও মুজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোট থেকে মাসিক মদিনার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আহমদ বদর উদ্দিন খান ও মাওলানা নুুরুল ইসলাম মনোনয়ন চাইতে পারেন। গফরগাঁওয়ে এমপি বাবেল ছাড়া কেউ মাঠে নেই বলে দাবি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের। ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) ॥ এই আসনটিও আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ এম আমানুল্লাহ। সাবেক এই স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এর আগেও একাধিকবার এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছান। আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী তিনি। সংসদ সদস্য ডাঃ এম আমানুল্লাহ ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজীম উদ্দিন ধনু, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফুল হক জর্জ, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরা সুলতানা মনি, পাপুয়া নিউগিনি থেকে আসা ওয়াহেদ আলী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে লবিং ও গণসংযোগ করছেন। প্রচার রয়েছে, পাপুয়া নিউগিনি শাখার আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াহেদ মনোনয়ন পেতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করছেন। অন্যদিকে বিএনপি থেকে ফখরুদ্দিন আহমদ বাচ্চু, এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল আজিজ টটুল ও শিল্পপতি মুহাম্মদ মোর্শেদ আলম মনোনয়ন চান। প্রচার রয়েছে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে সভা-সমাবেশসহ গণসংযোগ করছেন বিএনপির মোর্শেদ আলম। জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক এমপি আব্দুল হামিদ মনোনয়ন চাইতে পারেন।
×