ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রেলের ট্রান্সমিশন ক্যাবল ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে গ্রামীণফোন

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২২ জুলাই ২০১৮

রেলের ট্রান্সমিশন ক্যাবল ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে গ্রামীণফোন

ফিরোজ মান্না ॥ রেলওয়ের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক কেবল লিজ নিয়ে গ্রামীণফোন ৭ বছর ধরে টাকা দিচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, অপারেটরটি অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে এই নেটওয়ার্ক ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কেবলটি নিজেরা ছাড়া অন্য কাউকে ভাড়া বা ব্যবহার করতে দিতে পারবে না। গ্রামীণফোন কেবলটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিচ্ছে। উল্টো গ্রামীণফোন রেলওয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আদালতে মামলা চলছে ৭ বছর ধরে। মামলার ফাঁদে ফেলে রেলওয়েকেও কোন টাকা পরিশোধ করছে না অপারেটরটি। রেলওয়ে জানিয়েছে, গ্রামীণফোনের কাছে তাদের পাওনা ৩শ’ কোটি টাকার ওপরে। সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ২৬ জুন পাওনা টাকা চেয়ে গ্রামীণফোনকে চিঠি দেয় রেলওয়ে। সেখানে তারা গ্রামীণফোনের কাছে বর্ধিত চার্জ বাবদ ৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাওনার কথা উল্লেখ করে। এই চিঠি প্রাপ্তির পরই ২৪ জুলাই আদালতে মামলা করে গ্রামীণফোন। সেই থেকে কোন টাকাই রেলওয়েকে দিচ্ছে না কোম্পানিটি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত রেলওয়ের হিসাবে তাদের পাওনা ৯৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের শেষে সব মিলিয়ে রেলওয়ের পাওনা ৩শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এখন গ্রামীণফোনের কাছ থেকে কোন টাকাই পাচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ২০ বছর আগে রেলওয়ের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছিল গ্রামীণফোন। সেই চুক্তির আলোকে রেলওয়ের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তারা ব্যবহার করছে। ২৬ বছর মেয়াদে চুক্তি করে উভয়পক্ষ। গ্রামীণফোন যখন রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তি করে তখন দেশে কোন এনটিটিএন (নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) লাইসেন্স ছিল না। পরবর্তীতে বিটিআরসি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে এনটিটিএন লাইসেন্স দিয়েছে। এগুলো হলো ফাইবার এ্যাট হোম, সামিট কমিউনিকেশন, বাংলাদেশ রেলওয়ে, পিজিসিবি (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড) ও বিটিসিএল (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড)। গ্রামীণফোন জানিয়েছে, রেলওয়ের সঙ্গে তাদের সব লেনদেন আইনসঙ্গতভাবেই হচ্ছে। আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে রেলওয়ের কেবল গ্রামীণফোনকে প্রাথমিকভাবে ২০ বছরের জন্য লিজ দেয়া হয়। পরবর্তীতে সংশোধনীর মাধ্যমে লিজের মেয়াদ ১০ বছর বাড়ানো হয়েছে। লিজ চুক্তির অংশ হিসেবে গ্রামীণফোন এরই মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে এক হাজার ৬শ’ কিলোমিটার ফাইবার নতুনভাবে স্থাপন করেছে। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে এনটিটিএন লাইসেন্স পাওয়ার পর অন্য যে কেউ তাদের কাছ থেকে সেবা নিতে পারবে। কিন্তু রেলওয়ের সঙ্গে গ্রামীণফোনের অসম চুক্তির ফলে রেলওয়ে অন্য কাউকে এই সেবা দিতে পারছে না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প ইনফো সরকারের সংযোগ দিচ্ছে না গ্রামীণফোন। গ্রামীণফোনের চেয়ে আরও বেশি দামে রবিসহ বেশ কটি টেলিকম অপারেটর রেলওয়ের এই নেটওয়ার্ক ভাড়া নিতে চাইলেও রেলওয়ে দিতে পারছে না। চুক্তির অজুহাতে অন্য কাউকে সে সুযোগ দেয়া যাচ্ছে না। ফাইবার লে আউটের বিধান লঙ্ঘন করেছে গ্রামীণফোন। একই সঙ্গে অনুমতি ছাড়াই গ্রামীণফোন রেলওয়ের ছয় কোরের ফাইবার ফেলে দিয়ে ৪৮ কোরের ফাইবার লে আউট করেছে। সেখান থেকে তারা তৃতীয় পক্ষের কাছে ফাইবারের ক্যাপাসিটি বিক্রি করছে। চুক্তি অনুযায়ী এটা করতে পারে না তারা। বিটিআরসি জনিয়েছে, রেলওয়ে যখন লাইসেন্স পেয়েছে তখন গ্রামীণফোনের সঙ্গে তাদের চুক্তি আপনা আপনি বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটা হয়নি। প্রতি মিটার ফাইবার অপটিকের সরকার অনুমোদিত লিজ রেট যেখানে দুই টাকা সেখানে গ্রামীণফোন রেলওয়ের কেবলের লিজ বাবদ দিচ্ছে মাত্র ৬৮ পয়সা। চুক্তি অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কোন অপারেটরের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা, ভাড়া ও লিজ দেয়া কিংবা সংস্কার করা গুরুতর অপরাধ। এই আইন লঙ্ঘন করলে ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা, লাইসেন্স বাতিল ও ১০ বছরের কারাদ-ের বিধান রয়েছে। অথচ গ্রামীণফোন লাইসেন্স ছাড়াই বহু প্রতিষ্ঠানের কাছে এই নেটওয়ার্ক ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে। একটি এনটিটিএন কোম্পানির কর্মকর্তা বলেন, সরকার ইতোমধ্যে পাঁচটি অপারেটরকে এনটিটিএন লাইসেন্স দিয়েছে। তারা এরই মধ্যে এই খাতে বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছে। তিন কোটি টাকা লাইসেন্স ফিসহ ১০ কোটি টাকা সরকারের ফান্ডে জমা রেখেছে। এই অবস্থায় লাইসেন্স ছাড়াই একটি কোম্পানি কীভাবে তাদের ট্রান্সমিশন অন্যের কাছে ভাড়া দিচ্ছে। এটা টেলিযোগাযোগ আইনের চরম লঙ্ঘন। বড় ধরনের অপরাধ।
×