ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারকাজে গতি আনতে

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৩ জুলাই ২০১৮

 বিচারকাজে গতি আনতে

মামলার জটে ভারাক্রান্ত আদালতের বিচারকাজে গতি আনতে বিচারকদের কাছেই সমাজের প্রথম প্রত্যাশা। বিজ্ঞ বিচারকদের কাজে বিশেষ সক্রিয়তা যুক্ত হলে একটি মামলার নিষ্পত্তি হতে যে সময় কমে আসবে, এতে কারও সংশয় থাকার কথা নয়। আদালতে পাহাড়সম মামলাজটের কথা আমরা ঢের শুনে আসছি বেশ ক’বছর ধরেই। জনকণ্ঠে শতবর্ষী মামলার দৃষ্টান্ত নিয়েও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল! সত্যি বিচিত্র এ মামলাজগত। দীর্ঘ ১০৫ বছরেও ওই মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। মামলার আইনজীবী জানিয়েছিলেন, এটিই তার জীবনে সবচেয়ে দীর্ঘায়িত মামলা। এমন দৃষ্টান্ত নিয়ে কৌতুক করা গেলেও এটি আমাদের বিচার ব্যবস্থাপনার জন্য মোটেও পরিহাসের বিষয় নয়। বরং এটি অমোচনীয় কুণ্ঠা আর অসহায়ত্বের বাস্তবতাই আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছিল। মামলায় ভারাক্রান্ত আমাদের বিচার বিভাগ। বছরের পর বছর নিষ্পত্তিকৃত মামলাকে ছাড়িয়ে অমীমাংসিত মামলার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, গত কয়েক বছরে উচ্চ ও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩০ লাখের নিচে নামানো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে! আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, দেশের আদালতসমূহে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার ৬৪৯। ইংরেজীতে একটি কথা আছেÑ জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড, অর্থাৎ বিচার বিলম্বিত হওয়া বিচার না পাওয়ার শামিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে বিচারপ্রার্থীদের প্রায়ই এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। উচ্চ আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তাদের হয়রানির শিকার হতে হয় নানাভাবে। যেমন- মামলা দায়েরের পর তা কার্যতালিকায় না ওঠা, সেকশন থেকে বেঞ্চে সময়মতো ফাইল না আসা, রায়ের কপিতে স্বাক্ষর হতে বছরের পর বছর সময় লেগে যাওয়া, রায়ের নকল পেতে নির্ধারিত ফির কয়েকগুণ বেশি অর্থ লাগা, মামলার জট বেড়ে যাওয়া, প্রতারণার ফাঁদে পড়া ইত্যাদি। মামলার সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, সে তুলনায় আদালত বা বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়নি। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচারপ্রার্থীর বিবিধ বিড়ম্বনার নজির আমাদের জনপদে পাওয়া যাবে। বর্তমান সরকার বিচারকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ব্যবস্থা করেছে যার আওতায় নয় বছরে তিন হাজার ৯৩৫ বিচারক দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। আইনবিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিচারকরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন। লিগ্যাল সিস্টেম উপকৃত হচ্ছে। কী ভাবে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, দ্রুত বিচারপ্রার্থীরা সুবিচার পায় সেসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্যই তাদের বিদেশে নেয়া হয়। এতে মামলা জটও কমে যাবে বলে আশা করা যায়। উচ্চতর প্রশিক্ষণের কারণে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে মামলা শুনানিতে কম সময় লাগার উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে এবং আইনের সামগ্রিক ব্যাখ্যার প্রতি মনোযোগ দেখা যাচ্ছে। বিচারব্যবস্থা রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। এই স্তম্ভকে সর্বতোভাবে সুস্থ রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের। মামলার মিছিল নিষ্পত্তিতে সাত বাধা ইতোমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে। মামলার জট কমাতে আইন কমিশনের ২৭ দফা সুপারিশও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিচারকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের ফলে বিচারপ্রার্থীরা প্রত্যাশিত উপকার পাবেন বলে ধারণা করা যায়। একইসঙ্গে মামলা জটও অনেকাংশে কমে আসবে বলে আমরা আশাবাদী হতে পারি।
×