ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানোয় চার কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ আগস্ট ২০১৮

চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানোয় চার কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চুক্তিভিক্তিক বাস পরিচালনা বন্ধ হয়নি। পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বুধবার এমন ঘোষণা দেয়ার পরও বৃহস্পতিবার রাজধানীতে চুক্তিতে বাস চলতে দেখা গেছে। এমন কয়েকটি বাস পরিবহন মালিক-শ্রমিক নিয়ে গঠিত কমিটির হাতে ধরা পড়েছে। এই অপরাধে চারটি বাস কোম্পানির ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নিবন্ধন বাতিলও করা হয়েছে। বুধবার মালিক সমিতির এমন ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীতে বাস চলাচল একেবারেই কম ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়। অভিযান শুরুর খবরে গণপরিবহনের সংখ্যা আরও কমতে থাকে। তবে অভিযানে শামিল হয়েছিলেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেও। কেরানীগঞ্জে বিআরটিএর ইকুরিয়া কার্যালয়ে যাওয়ার সময় তিনি রাস্তায় নেমে গাড়ির কাগজপত্র নিজেই চেক করতে শুরু করেন। পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাজধানীর বাস কাউন্টারগুলোতে চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করে বাস ছেড়েছে পরিবহন মালিক সমিতি। ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে পঞ্চম দিনের মতো রাজধানীজুড়ে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করছে পুলিশ। এদিকে ট্রাফিক ও পুলিশের সঙ্গে গাড়ির কাগজপত্র চেক করতে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেই নেমেছেন রাস্তায়। একের পর এক গাড়ির লাইসেন্স ও কাগজপত্র যাচাই করছেন। তাকে ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড়। খবর পেয়ে ছুটে যান সংবাদমাধ্যমকর্মীরাও। ওবায়দুল কাদের প্রথমে একটি বাস থামান। এরপর সময় টেলিভিশনের একটি গাড়ি থামান তিনি। অবশ্য গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকায় এটিও ছেড়ে দেন মন্ত্রী। এরই ধারাবাহিকতায় মন্ত্রী আরও কয়েকটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গাড়ির কাগজ যাচাই করেন। এ সময় মন্ত্রী তার সঙ্গে থাকা ট্রাফিক বিভাগের লোকদের নির্দেশ দেন যাতে গতিসম্পন্ন সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা না চলে। ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চলাচল করে কিনা, স্থানীয়দের কাছে জানতেও চান তিনি। গত চার দিনের মতো রাজধানীতে সকাল থেকেই ফিটনেস, রুট পারমিট, রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করা হচ্ছে। পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, সারাদেশে ট্রাফিক সপ্তাহের প্রথম তিন দিনে প্রায় ৫৯ হাজার মামলা ও ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এদিকে সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রী তোলার আগেই যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করে পরিবহন মালিক সমিতি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া অনুমতি মিলছে না যানবাহন চলাচলের। মেয়াদোত্তীর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা ফিটনেস না থাকলে বন্ধ রাখা হচ্ছে সেসব বাস। এছাড়া রুট পারমিট না থাকলেও অনুমতি মিলছে না বাস চলাচলের। যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা নতুন এই নিয়মকে সাধুবাদ জানিয়ে বছরব্যাপী এ উদ্যোগ চালু রাখার দাবি জানিয়েছে। বুধবার ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এক বৈঠকের পর চুক্তিভিত্তিক বাস চলাচল বন্ধসহ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে গণপরিবহনের কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা তা চেক করছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ইউনিয়ন ও কমিটিগুলো। সকাল থেকে কমিটির সদস্যরা টার্মিনালে থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয় দুপুরের দিকে। দুপুরে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে গাড়ির কাগজপত্র চেক করতে দেখা গেছে। এছাড়া মহাখালী ও গুলিস্তানেও অভিযান চলছে। দুপুর ১২টা থেকে সায়েদাবাদ টার্মিনালে চার শতাধিক পরিবহনের কাগজপত্র চেক করা হয়েছে। ৩০-৪০টির মতো গাড়িতে কাগজপত্র আপডেট পাওয়া যায়নি। বাকি গাড়ি টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। এ টার্মিনালে চেকের দায়িত্বে রয়েছেন সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও শ্রমিক কমিটির নেতা রাজু আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা সকাল থেকেই কাজ শুরু করি। এ পর্যন্ত (দুপুর ২টা ২০ মিনিট) ৪০০ গাড়ি চেক করেছি। এর মধ্যে অধিকাংশের কাগজপত্র ঠিক আছে। আর যেসব গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই সেগুলো টার্মিনাল থেকে বের হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। অবৈধ পরিবহন বা কাগজপত্রবিহীন কোন পরিবহনকে ছাড় দেয়া হবে না। এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান জিরো ট্রলারেন্স। মহাখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের যা যা করণীয় তাই করছি। সকাল থেকে আমরা কাগজপত্র ছাড়া কোন গাড়ি ছাড়তে দিচ্ছি না। নগরীর টার্মিনালগুলোতে মালিকদের এ অভিযান ও ট্রাফিক সপ্তাহ চলার কারণে সড়ক জুড়ে লক্কড় ঝক্কড় পরিবহন চোখে পড়েনি। রাস্তায় গণপরিবহন ও কম দেখা গেছে। জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে গিয়ে চুক্তিভিক্তিক বাস চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজমিরি পরিবহন, স্কাইলাইন, বিএনআরসহ সুপ্রভাত পরিবহন, গাবতলী-সায়েদাবাদ রুটে চলা সাত নম্বর পরিবহন কোম্পানির বিরুদ্ধে সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এসব কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলেও সুপারিশ করার কথা জানান তিনি। খন্দকার এনায়েত জানান, আজ শুক্রবার থেকে চারটি কমিটি গঠন করা হবে। মালিক সমিতি সমন্বয়ে গঠিত কমিটি রাজধানীর সকল টার্মিনালসহ মহানগরীতে কাজ করবে। তারা কাগজপত্র পরীক্ষা করাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করবে।
×