ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদ উৎসবে যত আয়োজন

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ১০ আগস্ট ২০১৮

ঈদ উৎসবে যত আয়োজন

ঈদ-উল-ফিতরের রেশ কাটতে না কাটতেই দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ-উল-আযহা। ঈদকে সামনে রেখে উৎসবের আমেজে সেজেছে পুরো দেশ। অপরূপ সুন্দর আমাদের এই বাংলাদেশ। এই সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে ষড় ঋতুর ছোঁয়ায়। ঋতুভিত্তিক বাংলাদেশ অনেক বেশি বর্ণিল। কতই না রং। কি অনবদ্য শিল্পীর ছোঁয়া, রং রূপের যেন এক মহাসম্মিলন ঘটে এই দেশে। যে দেখে সেই ভালবেসে ফেলে এই দেশটাকে। সেই সঙ্গে যদি যোগ হয় কোন উৎসব, তাহলে তো কথাই নেই। উৎসবের রঙিন আকাশের বর্ণিল আভা যেন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তেমনি এক উৎসব হচ্ছে ঈদ-উল-আযহা। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যে কারণে মুসলিমপ্রধান এই দেশে এ উৎসবের মাত্রা যেন বহু গুণে বৃদ্ধি পায়, এ উৎসবে পশু কোরবানির মাধ্যমে মনের পশুত্বকে দূর করা ছাড়াও একে অপরকে উপহার দেয়াটাও একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আর এ উপহারের তালিকায় পোশাক হচ্ছে অন্যতম। মেয়েদের নিত্য ব্যবহার্য পোশাক সালোয়ার-কামিজ, দেশীয় শাড়ির পাশাপাশি বিদেশী শাড়ি ও অন্যান্য পোশাক ঈদের কেনাকাটার তালিকায় স্থান পায়। শাড়ি বিবর্তনের ধারায় শাড়ি আজ বাঙালী রমণীর প্রথম পছন্দের পোশাক। এক সময় হাতে বুনন হতো যে শাড়ি তা আজ বিদ্যুতচালিত তাঁতকলেও যেমন তৈরি হয়। একইভাবে হাতে বুনন করা শাড়িও পাওয়া যায় সর্বত্র। বাংলার এই প্রাচীন পোশাকের রয়েছে এক ধ্রুপদী ঐতিহ্য। বাংলার সুবিখ্যাত মসলিন, জামদানি, টাঙ্গাইল, পাবনা, সিরাজগঞ্জের তাঁতের শাড়ির কদর আজ সর্বজন সুবিদিত। একসময় শুধু হাতে বোনা শাড়ি বাংলার নারীরা পরিধান করলেও পরবর্তীতে সূচিত হয় যন্ত্রচালিত তাঁতের শাড়ি বুননের যুগ। এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে মসলিনের মতো ইতিহাসখচিত শাড়ি। নারায়ণগঞ্জের জামদানি শাড়ির নিবিড় মায়াবি ফুলেল আর বিমুগ্ধ ধারা, টাঙ্গাইল, পাবনা, সিরাজগঞ্জের তাঁতের বর্ণোজ্জ্বল আকণ্ঠ সুন্দর কারুকার্যময় শাড়ি এবং মিরপুরের শিল্পিত কাতান-বেনারসী নারীর কাছে আজ অনন্য পোশাক হিসাবে বিবেচিত। আবহমানকাল ধরে বাংলার সব বয়সী, সব প্রান্তের নারীরই প্রিয় পোশাক শাড়ি। অন্যান্য সময়ের মতো আসন্ন ঈদেও পাওয়া যাবে বিভিন্ন শপিং মলের ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে বিভিন্ন শাড়ির দোকানে। অন্যান্য শাড়ির পাশাপাশি দেশীয় প্রিন্টেড শাড়িও পাওয়া যাবে সহনীয় দামে। সেই সঙ্গে ভিনদেশী জর্জেটও সংগ্রহ করা যাবে। দেশের তৈরি সুতি, সিল্ক, টিস্যু, জুটকাতান, বেনারসী কাতানসহ নানা বর্ণ ও কারুকাজের শাড়ি ঈদসহ সকল উৎসবেই পাওয়া যায় বিভিন্ন আউটলেটে। সালোয়ার-কামিজ পাজামা, ওড়না ও কামিজের ভিন্নধর্মী নকশা সালোয়ার-কামিজকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে, যা সহজেই দৃষ্টি কাড়ে ক্রেতাদের । ভয়েল, পপলিন, প্রিন্ট, আদ্দি কটন, কটন জর্জেট, টিসি সিনথেটিক ইত্যাদি কাপড়ের সমন্বয়ে এবার প্রস্তুত হয়েছে সালোয়ার-কামিজ। আবহাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে সালোয়ার-কামিজের কাপড় সিলেকশন করা হয়েছে। সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি ওড়নার বৈচিত্র্য এবার লক্ষণীয়, এর কাটিং ডিজাইন এবং লেআউটে রয়েছে ভিন্নতা। সুতার কাজ, ক্রিস্টাল, মেটাল আইটেম এবং কড়ি দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে সালোয়ার-কামিজ এবং ওড়নায়, তাছাড়া শিপন জর্জেটের স্ট্রাইপ প্যাটার্নের হেভি কাজের সালোয়ার-কামিজ প্রচুর উঠেছে বাজারে। স্টোন এবং স্ট্রিং পাইপের ডিজাইনের সালোয়ার-কামিজ এবার বাজারে বেশ। সুতি কাপড়ের চাহিদাও এবার বেশ রয়েছে। পাইপিন এবং টারসেলের সমন্বয়ে কটন এবং এন্ডি কটনের ডিজাইন করা হয়েছে। এ সম্বন্ধে ডিজাইনার হাসান বলেন, সব বয়সী মেয়েদের জন্য সালোয়ার-কামিজ প্রস্তত হলেও নতুন নতুন ডিজাইনের সালোয়ার-কামিজ মূলত তরুণীদের কথা মাথায় রেখে করা হয়। সেভাবেই কাপড় এবং ডিজাইন প্রস্তত করে থাকি। তাছাড়া প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে ডিজাইন ভেরিয়েশনের কোন বিকল্প নেই, এবারের ঈদেও নতুন কিছু ডিজাইনের ড্রেস এসেছেম, যা খুবই আকর্ষণীয় এবং ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় এবং বেচাকেনাও বেশ ভাল বলে বিক্রেতারাও সন্তুষ্ট। কটন ও তাঁত কাপড়ে তৈরি সালোয়ার-কামিজের মূল্য পড়বে ৮৫০ টাকা থেকে ১৮৫০ টাকা, জর্জেট এবং শিপনের মাঝারি সাইজের সালোয়ার-কামিজ পড়বে ১১০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকা এবং হেভি কাজ পড়বে ১৬০০ টাকা থেকে ৪২০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও আদ্দি ভয়েল, এপ্লিক মোটা সুতার কাজ পড়বে ১০০০ থেকে ১৬০০ টাকা। দেশীয় ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি শপিংমলেই বিক্রি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ও সমন্বয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সালোয়ার-কামিজের। প্রতিবারের মতো এবার ঈদের জন্য নতুন কিছু শর্ট-কামিজ বাজারে এসেছে যাতে থাকছে, বাড়তি কিছু কাজ। হাতা এবং বুকের ওপর আলাদা স্টাইল করা। নিচের দিকে থাকছে হাল্কা কুঁচকানো। সব মিলে ২৫-৩০টি ডিজাইন এবং ১৬টি রঙের প্রাধান্য রয়েছে। ইতোমধ্যেই নতুন এই কামিজগুলো ক্রেতার নজরে এসেছে। দেশী-বিদেশী শর্ট কামিজ ক্রেতাদের মধ্যাকর্ষণে পরিণত হয়েছে। তারামার্কা, ইজি, ক্রে-ক্র্যাফট, ওটু, কৃষাণী, বৃত্ত, আরশী, যাত্রা এবং আড়ংয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের শর্ট কামিজের একটা আবহ তৈরি হয়েছে। যাত্রার বিক্রয় প্রতিনিধি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ঈদ একটি উৎসব। সবাই চায় উৎসবটা সুন্দর হোক; চমৎকার হোক। তাই তাঁদের পোশাকের প্রতি টানটাও আলাদাভাবে তৈরি হয়। বিশেষত, পোশাকপ্রিয় এসব মানুষের কথা ভেবে বিভিন্ন রঙ যেমনÑবেগুনি, লাল, এ্যাশ, জলপাই, ডার্ক, কলাপাতা, মেরুণসহ বাহারি ডিজাইনসমৃদ্ধ করা হয়েছে মেয়েদের শর্ট কামিজ। তারুণ্যের পোশাক এই সময়ের এমনি একটি জনপ্রিয় পোশাক শর্ট পাঞ্জাবি। এর প্রচলন খুব বেশিদিনের নয়। খুব অল্প সময়েই জয় করে নিয়েছে তারুণ্যের হৃদয়। সাধারণ পাঞ্জাবির তুলনায় একটু শর্ট বিধায় এর নাম শর্ট পাঞ্জাবি। বাকি সব বৈশিষ্ট্য সাধারণ পাঞ্জাবির মতোই। শর্ট পাঞ্জাবির দামও হাতের নাগালেই। শর্ট পাঞ্জাবি ৬৫০ থেকে শুরু করে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের রয়েছে। ছেলেদের যেমন শর্ট পাঞ্জাবি তেমনি মেয়েদের বেলায় এখন চলছে শর্ট কামিজ। এবারের ঈদে মেয়েদের পছন্দের পোশাকের তালিকায় রয়েছে শর্ট কামিজ। ঈদের কেনাকাটার আগে অবশ্য আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখা প্রয়োজন। আর শিশুদের পোশাক নির্বাচনের বেলায় এ বিষয়টি তো আরও জরুরী। ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। এই খুশি যেন ম্লান না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পোশাক নির্বাচন জরুরী। ঈদের আনন্দ রঙিন পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে ঝলমলে হয়ে উঠুক সেই প্রত্যাশা ফ্যাশন ডেস্ক মডেল : পলাশ, জয়শ্রেয়ী ও রিবা পোশাক : কে ক্রাফট ছবি : সাগর হিমু মেকআপ : বিন্দিয়া
×