ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জুবায়ের বারি

অগ্ন্যুৎপাতের পূর্বাভাসের জন্য অভিনব প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ১০ আগস্ট ২০১৮

অগ্ন্যুৎপাতের পূর্বাভাসের জন্য অভিনব প্রকল্প

২০১০ সালে আইসল্যান্ডে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে গোটা ইউরোপে বিমান চলাচল প্রায় ১ মাসের জন্য বন্ধ ছিল। ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয়ের জন্য আরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে আরও জানতে নানা সাজসরঞ্জাম কাজে লাগানো হচ্ছে। অগ্ন্যুৎপাতের পরিণতি আইসল্যান্ড ও তার আশপাশে ৩৫টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। ২০১০ সালে একটি গর্জে ওঠায় প্রায় ১ মাস ধরে ইউরোপে বিমান চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছিল। বিমান সংস্থাগুলো বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখ দেখেছিল। আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরিগুলোতে যে কোন সময়ে অগ্ন্যুৎপাত হতে পারে। তাই ইউরোপের বিজ্ঞানীরা সেগুলোর ওপর কড়া নজর রাখছেন। অগ্ন্যুৎপাতের আগে, অগ্ন্যুৎপাত চলাকালীন ও পরে ঠিক কী ঘটে, সেটা তাঁরা জানতে চান। ভূবিজ্ঞানী ফ্রেইস্টাইন সিগমন্ডসন এ বিষয়ে বলেন, ‘আগ্নেয়গিরির কাছে কীভাবে আরও ভাল করে থাকা উচিত, আমরা তা বুঝতে চাই। আইসল্যান্ডে এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। ২০১০ সালের মতো মাঝে মধ্যে পৃথিবীর আরও অনেক মানুষের ওপর তার গুরুতর প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাব এবং দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে ছাই ও গ্যাসের হুমকি কীভাবে প্রশমিত করা যায়, আমরা তা শিখতে চাই।’ সেই লক্ষ্যে অনেক রকম প্রক্রিয়া সৃষ্টি করা হয়েছে। ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা আইসল্যান্ডের এক জঙ্গলে এক ইনফ্রাসাউন্ড ডিভাইস লাগিয়েছেন। গোটা দেশে মোট পাঁচটি এমন ডিভাইস চালু থাকবে। ভূবিজ্ঞানী মাউরিৎসিও রিপেপে বলেন, ‘এটা হলো কেন্দ্রীয় স্টেশন, যেখানে সব তথ্য সংগ্রহ করা হয় ও ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। এই মুহূর্তে ইতালির ফ্লোরেন্সে সেই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে সেটি রেইকইয়াভিকে আইসল্যান্ডের আবহাওয়া দফতরেও পাঠানো হচ্ছে। আজ আমাদের একটি ইনফ্রাসাউন্ড সেন্সর পরীক্ষা করতে হবে।’ অগ্ন্যুৎপাত ঘটলে বিস্ফোরণের চাপে সৃষ্ট তরঙ্গ বায়ুম-লে প্রবেশ করে। ইনফ্রাসাউন্ড ডিভাইসেও তা ধরা পড়বে। রিপেপে বলেন, ‘এই সব ইনফ্রাসাউন্ড সেন্সর ও সেগুলোর সমন্বয়ে এক ধরনের এ্যান্টেনার মাধ্যমে আমরা অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট চাপের মধ্যে পার্থক্য শনাক্ত করতে পারছি। চাপ শক্তিশালী হলে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূর থেকেও তা টের পাওয়া যায়।’ কিন্তু ইউরোপীয় সুপারসাইট রিসার্চ প্রজেক্টে শুধু ইনফ্রাসাউন্ড ডিভাইস নয়, আরও সরঞ্জাম কাজে লাগানো হচ্ছে। জিপিএস, স্ট্রেন নেটওয়ার্ক, গ্যাস সেন্সর, ইলেকট্রিক ক্ষেত্র পরিমাপের সেন্সর, আবহাওয়ার রাডার ও ছাই পড়া পরিমাপের যন্ত্রও রয়েছে। ফ্রেইস্টাইন সিগমুন্ডসন বলেন, ‘আইসল্যান্ডে ফিউচারভল্ক প্রকল্পে অনেক গবেষক জড়িত রয়েছেন। এবার তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান সমন্বয় করে আগ্নেয়গিরির অবস্থা সম্পর্কে আরও উন্নত তথ্য সংগ্রহের সময় এসে গেছে। আর অগ্ন্যুৎপাত ঘটলে তার অগ্রগতি, নির্গত ছাইয়ের পরিমাণও জানতে পারব। নিরাপদ বিমান চলাচলের জন্য সেটা জানা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন মনিটরিং নেটওয়ার্কের সব তথ্য আইসল্যান্ডের আবহাওয়া দফতরে বিশ্লেষণ করা হয়। আসলে এই প্রতিষ্ঠান প্রাকৃতিক বিপর্যয় পর্যবেক্ষণ করে। ২৪ ঘণ্টা ধরে নজর রেখে নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ও এয়ার ট্রাফিক কনট্রোলকে তথ্য দেয়ার কাজ করে তারা।’ সিসমোলজিস্ট ক্রিস্টিন ভিয়োগর্ড বিষয়টির আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘ম্যাগমা চলাচলের ওপর নজর রাখতে আমরা ভূমিকম্পের সিসমিক লোকেশন ব্যবহার করি। জিপিএস নেটওয়ার্ক আগ্নেয়গিরির আকার পরিবর্তন দেখিয়ে দেয়। সম্প্রসারণ, সঙ্কোচন, নড়াচড়া হচ্ছে কিনা, এভাবে তা বোঝা যায়। আমরা ‘ফিউচারভল্ক’ নামের এক তথ্যভা-ার ও তথ্য পরিষেবা সৃষ্টি করছি। মানুষ সব নেটওয়ার্কের সব তথ্যের নাগাল পাবে, এমনকি স্যাটেলাইট থেকেও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করবে।’ আইসল্যান্ডের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি কাটলা জেগে উঠলে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে আরও বড় আকারের বিঘœ ঘটবে। ইউরোপের অর্থনীতি আরও লোকসানের মুখ দেখবে। কিন্তু এসব নতুন প্রক্রিয়া ও এই সঙ্কট সম্পর্কে আরও বেশি জ্ঞানের মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদি হলেও সতর্কতা জারি করা সম্ভব হবে। সূত্র : বিবিসি
×