ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাতৃদুগ্ধ শিশুদের প্রধান জীবনী শক্তি

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ১০ আগস্ট ২০১৮

মাতৃদুগ্ধ শিশুদের প্রধান জীবনী শক্তি

সদ্যোজাত শিশু পৃথিবীর আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে কান্না করে তার আগমন বার্তা জানিয়ে দেয় সবাইকে। নয় মাস নয়দিন মাতৃজঠরে তার নিরাপদ নিঃশব্দ বাসযোগ্য বিশ্বকে পেছনে ফেলে কোলাহলপূর্ণ জগতে নিজের অবস্থান জানান দেয় সশব্দ কান্নার আওয়াজে। ভীতসন্ত্রস্ত ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুটি আবারও মায়ের কোলেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মায়ের আশ্রয়ই তার কাছে জন্মের শুভ মুহূর্তের শ্রেষ্ঠ এবং প্রথম উপহার। ছোটকাল থেকে যে প্রবাদ বাক্যটি সমস্ত নারী হৃদয়ে মাতৃমহিমার দ্যুতি ছড়ায় তা হলো বন্যরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। তার চেয়েও বড় কথা একটি অবোধ বালিকা পুতুল খেলার মধ্য দিয়ে মাতৃত্বের আস্বাদে পুলকিত হয়, মায়ের আবরণে নিজেকে সাজায়। তাই এই মাতৃত্ব হঠাৎ জেগে ওঠা কোন অকল্পনীয় ভাবানুভূতি নয়। মায়ের আদলে আপন সত্তাকে বিকাশ করতে করতে এক সময় কঠিন রূঢ় বাস্তবের মুখোমুখিও হয়। একজন মেয়ে বধূবেশে নিজেকে রাঙিয়ে তোলে। সেই রঙিন স্বপ্নমাখা দিনগুলো পার করার মধ্য দিয়ে এক সময় মাতৃত্বের শুভযোগে জীবন কানায় কানায় ভরে ওঠে। সন্তানকে গর্ভে লালন করাই শুধু নয় তাকে একটি নিরাপদ বিশ্ব উপহার দিয়ে শিশুকাল থেকে পালন করাও মাতৃত্বের এক অনবদ্য মাঙ্গলিক পর্ব। পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে সযতœ পরশে স্বচ্ছ আর স্বাভাবিক ছন্দে সন্তানের জীবন প্রবাহ পূর্ণতার দিকে ধাবিত করা প্রত্যেক সচেতন মায়ের প্রাত্যহিক কর্মযোগের আকাঙ্খা হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিশুদ্ধ প্রতিবেশই শুধু নয় স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর খাবার সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের মূল নিয়ামকও। আর এক্ষেত্রে সদ্যোজাত শিশুর মায়ের দুধের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। একজন নারীর বহু কাঙ্খিত এবং প্রত্যাশিত এই মাতৃত্ব তার সন্তানটির যথার্থ পরিচর্যার ক্ষেত্রে ও সময়োপযোগী ভূমিকা রাখা বিশেষ দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। মাতৃদুগ্ধই সন্তানের নিয়ামক এবং জীবনী শক্তি যার ব্যত্যয় ঘটলে একজন শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পদে পদে বিপত্তি ঘটা অসম্ভব কিছুই নয়। এক সময় সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মায়ের বুকের যে প্রথম দুধটুকু আসে যাকে আমরা শালদুধ নামে চিহ্নিত করি তা খাওয়ানো হতো না। মনে করা হতো এটা শিশু স্বাস্থ্যের জন্য তেমন অপরিহার্য তো নয়ই স্বাস্থ্যহানির মতো আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে। ক্রমবর্ধমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিত্যনতুন গবেষণা সেই প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণই শুধু করেনি প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকে মায়ের থেকে আসা প্রথম দুগ্ধ শিশুর জন্য সবচাইতে বেশি উপকারী। এ ছাড়াও মাতৃদুগ্ধ যে কোন সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে আরম্ভ করে শারীরিকভাবে আরও অনেক সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। মেধা ও মনন বিকাশে মায়ের দুধের প্রয়োজন সবাচাইতে বেশি। শুধু কি তাই? মার সঙ্গে সন্তানের যে নাড়ির সম্পর্ক থাকে আরও নিবিড়তম জায়গায় নিয়ে যায় কোলের শিশুটিকে মা যখন দুধপান করায়। মায়ের দুধে সমস্ত খাদ্যপুষ্টি তো আছেই তার চেয়েও বেশি বাইরের খাবারের হরেক রকম অস্বাস্থ্যকর পর্যায় দৃশ্যমান হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। তাই যথাসম্ভব যতখানি পারা যায় অন্তত একটা বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধই সন্তানের সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার। তবে লক্ষণীয় যা তাহলো মায়ের দুধের সন্তানের পর্যন্ত ক্ষুধা মিটছে কি না। কারণ শিশুর যদি পেট না ভরে সেটাও তার জন্য কোন স্বাস্থ্যকর বিষয় হতে পারে না। খেয়াল রাখতে হবে মায়ের দুধ তরল পানীয়। সুতরাং শিশুর প্র¯্রাবের সঙ্গে তা বেরও হয়ে যায়। তাই পেট খালি হওয়াটা স্বাভাবিক। যে কোন সচেতন মা বুঝতে পারে তার দুধ সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত কতখানি। সেভাবে সন্তানের খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করতে হবে। জীবনের আর এক নাম পানি। মায়ের দুধ সেই পানির অভাবও পূরণ করে। মায়ের দুধে পারিপার্শ্বিক অনেক ঝামেলাও কমে যায়। যেমন অন্য কিছু তৈরি, থালা, বাটি, চামচ কিংবা ফিডার ব্যবহার করা অত্যন্ত ঝুঁকি। কারণ পানিবাহিত সমস্ত রোগবালাই এসবের মধ্য দিয়ে শিশুকে আক্রান্ত করে। কচি শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও অপেক্ষাকৃত কম। ফলে মায়ের দুধের মতো নিরাপদ এবং শঙ্কামুক্ত খাদ্য অন্য কিছু হতে পারে না। ১ থেকে ৭ আগস্ট সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। তবে এতবড় মহৎ কার্যক্রম কোন নির্দিষ্ট দিন বা সপ্তাহের মধ্যে আটকে থাকতে পারে না। আসলে সপ্তাহটির মূল উদ্দেশ্য সচেতন মাদের সন্তানের ব্যাপারে আরও সতর্ক করে দেয়া। যাতে কোন অবস্থাতেই মাতৃদুগ্ধ থেকে তার কোলের সন্তান বঞ্চিত না হয়। এসব কার্যক্রমের লক্ষ্যই থাকে চিরপুরনো মাতৃস্নেহের অনির্বাণ ধারাকে শুধু নতুনভাবে জাগিয়ে দেয়াই নয় সময়ের মিছিলে দাবি মেটানো এমনকি মাতৃদুগ্ধ পান বিষয়টিকে চিরস্থায়ীভাবে মর্যাদা দেয়াও। এমন মহৎ এবং যুগান্তকারী কর্মের শুভযোগ প্রতিদিনের অনুক্ষণের সব মাকেই তা নিয়মিতভাবে পালন করে যেতে হবে।
×