ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়নের মাইলফলক বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১১ আগস্ট ২০১৮

উন্নয়নের মাইলফলক বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক

সরকারের উন্নয়নের আরও একটি মাইলফলক বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক। প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দৃশ্যমান বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের কাজ শেষ হয়েছে। বিশাল এ সড়কটির সৌন্দর্য দেখতে এবং মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তাগণ ছাড়াও ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় করছে প্রতিদিন। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এ সড়কের ২৫০ মিটার মিয়ানমার অংশে এবং বাকি এক হাজার ৭শ’ মিটার বাংলাদেশ অংশে। বাংলাদেশ অংশের এক হাজার ৭শ’ মিটার সড়কের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সড়কের দু’পাশে সবুজ পাহাড় ও বাড়িঘর। সড়কের ওপাশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ঢেকিবনিয়া, আর এপারে বাংলাদেশ অংশে বালুখালী ও ঘুমধুম। কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি গ্রামের মুক্ত বাতাসে বিকেলে ভ্রমণ পিপাসুরা ওই সড়কে যাওয়া-আসা করে চলেছে প্রতিদিন। সরকার বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মৈত্রী সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালের আগস্ট-পরবর্তী সময়ে রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার কারণে রাস্তার সীমান্তের কাছাকাছি অংশের কাজে জটিলতা দেখা দেয়। মিয়ানমার অংশে সেতু ও সড়ক নির্মাণের বিষয়ে মিয়ানমারের সম্মতি পাওয়া যাচ্ছে না। জানা যায়, এ সড়কের মাধ্যমে চীন, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারসহ আঞ্চলিক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। তবে রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত নাফ নদীতে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। মিয়ানমারের আগ্রহ না থাকায় নাফ নদীর ওপর সেতু এবং নদীর অন্য প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণে গৃহীত বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে (পিইসি) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে নাফ নদীতে সেতু নির্মাণ ও সড়ক নির্মাণে মিয়ানমারের সম্মতি পাওয়া যায়নি। ফলে প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সড়কের কাজ তদারকিতে থাকা একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ অংশের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতিতে নাফ নদীতে সেতু নির্মাণ এবং নদীর ওপারে সড়ক নির্মাণ করা যাচ্ছে না। এ কারণে প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হচ্ছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, সেতু ছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের আওতায় দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় বাড়িয়ে ১১৫ কোটি টাকা করা হয়। সেই সঙ্গে ২০১৮ সালের জুনে কাজ শেষ করার লক্ষ্য পুনর্নির্ধারণ হয়। সম্প্রতি প্রকল্পটি মেয়াদ বাড়িয়ে দ্বিতীয়বার সংশোধনের প্রস্তাব করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর পিইসি সভায় প্রকল্পটির মেয়াদ না বাড়িয়ে সমাপ্ত ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। এ পর্যন্ত সে অর্থ ব্যয় হওয়ায় ৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকাকে প্রকল্প ব্যয় হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে প্রাণে বাঁচতে গত বছরের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফে অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছে। -এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে
×