ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় কাল বটতলার নাটক ‘ক্রাচের কর্নেল’

প্রকাশিত: ০২:২৭, ১১ আগস্ট ২০১৮

শিল্পকলায় কাল বটতলার নাটক ‘ক্রাচের কর্নেল’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে আগামীকাল রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় বটতলার ‘ক্রাচের কর্নেল’ নাটকের মঞ্চায়ন হবে। শাহাদুজ্জামানের ‘ক্রাচের কর্নেল’ উপন্যাস থেকে নাট্যরূপ দিয়েছেন সৌম্য সরকার ও সামিনা লুৎফা নিত্রা। ‘ক্রাচের কর্নেল’ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। বটতলার নবম প্রযোজনা ‘ক্রাচের কর্নেল’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ইমরান খান মুন্না, কাজী রোকসানা রুমা, সামিনা লুৎফা নিত্রা, তৌফিক হাসান ভুঁইয়া, পঙ্কজ মজুমদার, ইভান রিয়াজ, ম. সাঈদ, মনজুরুল ইসলাম রনি, গোলাম মাহবুব মাসুম, নাফিউল ইসলাম। নাটকের নেপথ্যে সহকারী নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনা ইমরান খান মুন্না, পোশাক পরিকল্পনা হুমায়রা আক্তার, কোরিওগ্রাফি সামিনা লুৎফা নিত্রা, আলোক পরিকল্পনা খালিদ মাহমুদ সেজান, আলোক প্রক্ষেপণ এটিএম মহিবুল্লাহ, দ্রব্যসামগ্রী পরিকল্পনা ম. সাঈদ, আবহসঙ্গীত পিন্টু ঘোষ, আবহসঙ্গীত নিয়ন্ত্রণ শেগুফতা সারি, পোস্টার ডিজাইন জাহেদুল হক রনি, প্রযোজনা তত্ত্বাবধান তৌফিক হাসান ভুঁইয়া, মঞ্চ ব্যবস্থাপক মনজুরুল ইসলাম রনি, রূপসজ্জা আব্দুল কাদের। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায় একটি নাটকের দল এত এত দুঃখ, কান্না, সাহসের গল্প থেকে বলতে শুরু করে এক কর্নেলের গল্প। এক বা একাধিক স্বপ্নবাজ, পাগল, মৃত্যুর নেশায় পাওয়া মানুষদের গল্প। একটি সময় ও দুঃসময়ের গল্প। একটি স্থানের ও কালের গল্প হয়েও যেটি কেবল একটি স্থানের ও কালের গল্পমাত্র নয়। লোকে বলবে ‘ঐতিহাসিক গল্প’ কিন্তু যারা জানে ইতিহাস মানুষের হাতে রচিত হয় অনেক সময় কিছু মানুষের প্রয়োজনে, যে মানুষগুলো ক্ষমতাধর তাদের কাছে ইতিহাস একটি জটিল বিষয়Ñ আর যেহেতু সময়ের বদলে ইতিহাসের ব্যাখ্যা বদল হয়! নাটকের দলটি তাই তাদের গল্প তাদের মতো করে বেছে নেয় আর তাদের মতো করে বুঝবার ও বোঝাবার চেষ্টা করে। কিন্তু এই দলটি যেহেতু সমকালের অংশ তাই সেও সঙ্কটমুক্ত নয় তাদের সঙ্কট তারা এখনও নায়ক খুঁজে পায়নি, নায়ক বুঝেও পায়নি তারা আবার এমন এক দেশের গল্প বলে যে দেশটিও নায়ক খুঁজে পায়নি, বুঝে পায়নি। কিন্তু নায়ক কেন লাগবে? বোকার প্রশ্ন! নায়ক ছাড়া চলবে কেন? গ্যালিলিও নাটকের চরম সঙ্কটকালে শিষ্য আন্দ্রেয়া বলে বসে : ‘সেই দেশই দুর্ভাগা যে দেশ কোন নায়কের জন্ম দেয় না’। গ্যালিলিও মৃত্যুর ভয়ে এইমাত্র তার সত্য বিক্রি করে এসেছে চার্চের কাছে আন্দ্রেয়া তাই গভীর মর্মবেদনায় উচ্চারণ করে এই বাক্য : গ্যালিলিও যে তার নায়ক ছিল! গুরু গ্যালিলিও জবাব দেয় মর্মপীড়ায় : ‘না আন্দ্রেয়া, সেই দেশই দুর্ভাগা যে দেশের একজন নায়কের প্রয়োজন হয়’। কিন্তু এ তো আর রবীন্দ্রনাথের আইডিয়াল রাজ্য নয় যেখানে আমরা সবাই রাজা! নাটকের দলটি সেই অর্থে দুর্ভাগা, বাংলাদেশ সেই অর্থে দুর্ভাগা! কর্নেল তাহেরের জীবনের প্রস্তুতি, প্রেম, সংগ্রাম ও মৃত্যুর গল্প বলতে গিয়ে নাটকের দলটিকে যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধপূর্ব ও পরবর্তী বিস্তৃত ঘটনারাশির কথা বলতে হয় তখনই সঙ্কট! মিডিয়ার দখলে থাকা সংস্কৃতির ভাগিদার হয়ে, পরস্পরবিরোধী ইতিহাস ব্যাখ্যার অংশ হয়ে দলটির সদস্যদের কাছে ইতিহাস জটিল হয়ে ওঠে, কেউ না কেউ ইতিহাস খেলে বলে মনে হয় কিন্তু এত বড় জাল ছিঁড়ে কে নায়ক বনবে? কে হবে যোগ্য কর্নেল তাহের? অথবা কর্নেল তাহেরই কি সেই আরাধ্য নায়ক যাকে দেশ খুঁজে পায়নি? অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বের নায়কেরা ও খলনায়কেরা, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নায়কেরা ও খলনায়কেরা, মুক্তিযুদ্ধের পরের নায়কেরা ও খলনায়কেরা কি তাদের পরিচয়ে স্থির থেকেছেন? এইসব প্রশ্ন অবধারিত। সবাই না হলেও অনেকেই আসেন মঞ্চে, চলে যান। মঞ্চের বাইরে থাকেন কেউ থিয়েটারের ভাষা এভাবে তৈরি হয়। মূল কথা সময়। সামষ্টিক সময়। একটি দল যেমন দেশের সঙ্কটকে মূর্ত করে, দেশও তেমনি বিশ্বের বাইরের নয়। একটি কাল কাউকে নায়ক হওয়ার পথ তৈরি করে দেয়, আবার কালই পথ ভেঙ্গে ফেলে। এককাল অতিক্রান্ত হলে সেই কালের ব্যাখ্যা দাঁড় করায় মানুষ। নায়ক ও খলনায়ক বেছে নেয় তারাই। ক্রাচের কর্নেলও একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চেয়েছে যেটা ধ্রুব ব্যাখ্যা নয়, একটি ব্যাখ্যা। শুধু তাই নয় অনেকের কাছে বাংলাদেশের অনেক অজানা রাজনৈতিক ইতিহাস নানা যুক্তিতর্কের মাধ্যেমে দর্শকের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছে বটতলা তাদের নাটক ‘ক্রাচের কর্নেলে’র মাধ্যমে। না জানা অনেক বিষয়ের বিশ্লেষণাত্মক উপস্থাপনা এবং ইতিহাসের অলিগলিতে বিচরণ করার মাধ্যমে বটতলা উন্মোচন করতে চেয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অস্থির সময়কে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এ নাটকটি মঞ্চে আনে বটতলা, কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই নাটকটি দর্শকের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। দেশী-বিদেশী দর্শক চাহিদার ফলে মাত্র এক বছরের মধ্যেই নাটকটির ২৫টির বেশি মঞ্চায়ন সম্ভব হয়েছে।
×