ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১৪ আগস্ট ২০১৮

পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা

দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই ট্রাফিক আইন মানে না- শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত ডিএমপি কমিশনারের এই বক্তব্যটি সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সেইসঙ্গে তিনি হতাশাও ব্যক্ত করেছেন এই বলে যে, সেক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অসম্ভব কাজ। রাজধানীসহ সারা দেশে ৫ আগস্ট থেকে ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হয়। জনগুরুত্বসম্পন্ন বিবেচনায় এর মেয়াদ আরও দু’দিন বাড়ানো হয়েছে। এই উপলক্ষে সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সহায়তাকারী হিসেবে নামানো হয়েছে স্কাউটস ও গাইড সদস্যদের। তাদের পক্ষ থেকেও পথচারী বা যানবাহন চালক- প্রায় সবারই আইনকানুন না মানার প্রবল প্রবণতার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, বেপরোয়া বাসের চাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানী ও আশপাশের লাখো শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে এসে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে। সর্বস্তরের মানুষ, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এই আান্দোলনের সারবত্তা ও যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্যক উপলদ্ধি করে মন্ত্রিসভায় জরুরী বৈঠক ডেকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর অনুমোদন দেন। ট্রাফিক বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ত্বরিত পদক্ষেপ হিসেবে ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তবে দুঃখজনক হলো বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই কোথাও। রাজধানীর প্রায় সর্বত্র অসহনীয় ট্রাফিক যানজট, অপ্রশ্বস্ত সড়ক, ফুটপাথ বেদখল, অগণিত যানবাহন, যত্রতত্র পথচারী পারাপার, যেখানে-সেখানে পার্কিং, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, জলাবদ্ধতা, সড়কের পাশে কমিউনিটি সেন্টার, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শপিং মল, সুপার মার্কেট, বাজার ও পেট্রোল পাম্প, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, সর্বোপরি যানবাহন চালক ও পথচারীদের আইন না মানার প্রবণতা এবং প্রতিযোগিতা। এহেন জগদ্দল ও বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে রীতিমতো হতাশা প্রকাশ করে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, ঈদ-উল-আজহার পর ট্রাফিক পুলিশের অভিযান আরও জোরালো ও বেগবান করা হবে। নেয়া হবে ট্রাফিক ব্যবস্থা যথাযথ ও টেকসই করার, যাতে পরিবহন খাতসহ শৃঙ্খলা ফিরে আসে সড়ক-মহাসড়গুলোতে। এর পাশাপাশি দূর করতে হবে দীর্ঘদিন থেকে পরিবহন খাতে বিরাজমান অরাজকতা ও নৈরাজ্য। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মানতে হবে যে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কেবল ড্রাইভার দায়ী নয়। বিআরটিএসহ ট্রাফিক বিভাগের অব্যবস্থা, ঘুষ-দুর্নীতিও এর জন্য দায়ী অনেকাংশে। সভ্য ও উন্নত হতে হলে এ সব বাধা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে পর্যায়ক্রমে। তবু সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যেহেতু চালককে প্রাথমিকভাবে দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, সেহেতু শাস্তির বিধান একটু বেশি রাখা হলে সে সতর্ক ও সাবধান হতে পারে। আর সতর্ক ও সাবধান হলে সড়ক দুর্ঘটনার হার এমনিতেই কমে আসবে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দেশে বর্তমানে যানবাহনের তুলনায় দক্ষ চালকের অভাব প্রকট। ৮ম শ্রেণী পাস ড্রাইভার এবং ৫ম শ্রেণী পাস হেলপার পাওয়া তো আরও দুঃসাধ্য। এমনকি রাজধানীতেও অনেক কিশোর বয়সী চালকের সন্ধান মেলে। তাদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নৈশ বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি তৈরি করতে হবে পেশাদার দক্ষ চালক। তাদের শুধু গরু-ছাগল-মানুষ চিনলেই হবে না, নিজেদেরও মানুষ ও মানবিকবোধসম্পন্ন হতে হবে। তাহলেই তৈরি হবে দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন চালক। কমবে সড়ক দুর্ঘটনা। এর পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে বিকল্প যানবাহন তথা পরিবহন ব্যবস্থা, যেমন মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, ফ্লাইওভার, আন্ডার পাস, রাজধানী ঘিরে রিং রোড ইত্যাদি। আশার কথা, এসবের কিছু দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে।
×