ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চামড়ার দাম

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ১৪ আগস্ট ২০১৮

 চামড়ার দাম

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বরাবরের মতো এবারও সক্রিয় চামড়া সিন্ডিকেট। তাদের দাবি বা চাপের মুখে তাই এবার চামড়ার দাম কমাতে হলো। গতবারের মতো এবারও ঢাকা এবং সারাদেশের জন্য আলাদা দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। অথচ গতবার কোথাও সেই দর মেনে চামড়া বেচাকেনা হয়নি। প্রচুর পশু কোরবানি হয়েছিল। খুচরা বাজারে চামড়ার সরবরাহ ছিল আগের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু ট্যানারি মালিক, আড়তদার, চামড়া রফতানিকারক ও লবণ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট চামড়ার দাম নিয়ে কারসাজি শুরু করেছিল। ফলে কাঁচা চামড়া নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের বিপাকে পড়তে হয়েছিল। কয়েক বছর ধরেই ঈদ-উল-আজহায় আগের বছরের চেয়ে কমিয়ে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ বছর দাম কমিয়ে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫ টাকা, খাসি ১৮ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা পানির দরে কাঁচা চামড়া কেনার সুযোগ পেল। গত বছরের তুলনায় প্রতি বর্গফুটে দাম কমানো হয়েছে পাঁচ টাকা। এবার কম দামে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে চামড়া সংগ্রহ করবেন ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় গত বছর বিক্রেতাদের অনেকেই ত্রিশ শতাংশ কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়। অপরদিকে লবণের সঙ্কট সৃষ্টি করে চামড়া বিক্রিতে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করা হয়েছিল। কোরবানির পশুর চামড়া মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে ঢাকার আড়তে আসে। আড়তদাররা এসব চামড়া কিনে ট্যানারিতে সরবরাহ করে থাকেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী, ঢাকার আড়তদার ও ট্যানারি মালিক এই তিন পক্ষের মধ্যে বড় অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়। গত বছর ট্যানারি মালিকরা ব্যবসায়ীদের কোটি টাকার পাওনা পরিশোধ না করায় আড়তদারদের পুঁজির সঙ্কটে পড়তে হয়েছিল। যে দর বেঁধে দেয়া হয়েছিল তা যৌক্তিক ছিল না। লবণ সঙ্কটের কারণে স্থানীয়ভাবে চামড়া সংরক্ষণ অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সংগ্রহের পর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অনেক ব্যবাসায়ীকেই বাধ্য হয়ে লোকসানে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয় তার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ আসে ঈদ-উল-আজহায়। কোরবানিতে ভাল ও সুস্থ গরু জবাই হয় বলে এই চামড়ার মানও ভাল থাকে। ব্যবসায়ীদেরও এই চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ থাকে। চামড়ার দাম এবার কমানোর ফলে ট্যানারি মালিক ও এ শিল্প খাতে সংশ্লিষ্টরা লাভবান হলেও এতিম, অসহায়, এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দাম কমানোর বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজার, সাভারে বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর কমপ্লায়েন্স ইস্যু, ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার প্রবণতা এবং গত বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এই দর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ট্যারিফ কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে দেখা গেছে এ বছর বর্গফুট প্রতি বেঁধে দেয়া কাঁচা চামড়ার দাম ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ করা মূল্য থেকে কম। চামড়ার মানও কমে যাচ্ছে বলে ট্যানারি মালিকদের দাবি। এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া খাত খারাপ পর্যায়ে আছে। চামড়া খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে ১২ শতাংশ। কোরবানির চামড়া আমাদের দেশের সম্পদ। সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পের স্বার্থে কোরবানির চামড়া নিয়ে অসাধু বাণিজ্য বন্ধ করা জরুরী। দেশে চামড়ার দাম না পেলে চোরাই পথে পাচার হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তবে এবার বিজিবিকে সতর্ক রাখা হচ্ছে। চামড়ার বাজার স্থিতিশীল রাখা অর্থনীতির জন্যই প্রয়োজন।
×