ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেধাবী আলোকচিত্রী শহিদুল আলম!

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৪ আগস্ট ২০১৮

 মেধাবী আলোকচিত্রী শহিদুল আলম!

শেখ হাসিনাকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয় ভার্সন ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন। এটি যে শুধু নামের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিলÑ এই সত্যটি অনেকে জানার পরেও সমর্থন করেছে, জনমত গড়ে তোলার কাজেও নিয়োজিত ছিল! আর তার পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণও ছিল যা, ধীরে ধীরে দেশের জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠে। এখনও আপনি শুনে থাকবেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দেশের জন্য কী করেছে? নাতি-পুতিদের জন্য কোটা পদ্ধতির সুবিধা রাখতে হবে কেন? বছর বছর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের টেনে ধরে রাখতে হবে কেন? এটি একেবারেই স্পষ্ট যে, সমাজ-রাষ্ট্রে যাঁদের আলোরবর্তিকা মনে করা হয়, এই তাঁরাই পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্ত ছড়িয়েছে। অনেক বুদ্ধিজীবী বিবৃতি প্রদান করে কোটা সংস্কারের মোড়কে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলনের পক্ষ নিয়েছে। অনেকে আবার কলাম লিখেও তাঁদের সমর্থন দিয়ে যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করে উস্কে দিয়েছে। আর তাই এদেশের কতিপয় শিক্ষার্থী- না জেনে, না বুঝে ব্যবহার হয়েছে। ঠিক এমনি করে বাচ্চাদের সড়ক নিরাপদ আন্দোলনকে রীতিমতো ব্ল্যাকমেইল করেছে বিএনপি-জামায়াত। আর এই তাদের সমর্থন দিয়েছে এদেশের তথাকথিত কিছু বুদ্ধিজীবী ও পাবলিক সেলিব্রেটি! পরিকল্পিতভাবে এখানেও তাঁরা ব্যবহার করেছে সোশ্যাল মিডিয়াকে। মনে হচ্ছে এইমাত্র জীবন বাঁচানোর তাগিদে দৌড়ে লাইভে এসেছে! অভিনয় করে এমন ভিডিও ভাইরাল করেছে(!) যা দেখে সাধারণ এ্যাক্টিভিস্ট বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল খুব সহজে। সেই সঙ্গে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আরও আগে। চোখ তুলে ফেলা হয়েছে, চারজনকে হত্যা করা হয়েছে, দুইজন মেয়ে শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে শেখ হাসিনার দলীয় কার্যালয়ে ধর্ষণ করছে; এগুলো নিজের চোখে দেখা- এই ধরনের মিথ্যাচার, গুজব ছড়িয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে আক্রমণাত্মক সেন্টিমেন্ট তৈরি করেছে তথাকথিত সেলিব্রেটি ও বুদ্ধিজীবীরা। আর এটি যে বাচ্চাদের সড়ক নিরাপদ আন্দোলনকে ব্ল্যাকমেইল করা বিএনপি-জামায়াতের নতুন ষড়যন্ত্র তা কিন্তু নয়। তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনেও করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবি সিদ্দিককে পুলিশ বাহিনী গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, ছাত্রলীগের নেত্রী আরেক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে- এই ধরনের গুজব ছড়িয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রথমে চারুকলায় পহেলা বৈশাখের সকল আয়োজন ধ্বংস করে, অগ্নিসংযোগ করে এবং দ্বিতীয়ত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনকে ঘিরে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠে। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে তারা ঔদ্ধত্য দেখানোর সুযোগ পেয়েছে সরকারের অদক্ষতার কারণেও। কোটা সংস্কার তথা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল ও সরকার পতনের নীল নক্সার আন্দোলনে যাঁরা গুজব ছড়িয়েছিল, যাঁরা পুলিশ বাহিনীর ওপর কলঙ্কলেপন করার ষড়যন্ত্র করেছিল, যাঁরা পরিকল্পিতভাবে যুব-সমাজকে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছিল; সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে বলেই বাচ্চাদের যৌক্তিক ও সুন্দর একটি আন্দোলনকে ব্ল্যাকমেইল করে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছিল স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির ও তাদের দোসর বিএনপি। আর সেসব গুজব বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অন্যতম আমাদের মেধাবী আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। তিনি পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক এ্যাকাউন্ট। কারণ, তাঁর এই ফেসবুকের সঙ্গে যুক্ত আছে দেশী-বিদেশী মিডিয়ার ব্যক্তি ও মানবাধিকারকর্মী। বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই! মানবাধিকার নেই। মানুষের বাক-স্বাধীনতা নেই ইত্যাদি বোঝানোর জন্যই শহিদুল আলম এই সোশ্যাল মিডিয়ার ফ্লাটফর্ম ব্যবহার করেছে। আর তাই সড়ক নিরাপদ আন্দোলনে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস’ ছড়াতে ইন্টারনেটে ‘কল্পনাপ্রসূত উস্কানিমূলক মিথ্যা’ তথ্য প্রচারের অভিযোগ এনে রমনা থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা এই শহিদুল আলমকে। আর এই গ্রেফতারকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের মাঝে আলোচনার পাশাপাশি, সমালোচনাও দেখা যাচ্ছে। দুঃখজনক হলো, এদেশের সিনিয়র বুদ্ধিজীবীগণ এই আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের ব্যাপারে ভাল তথ্য রাখলেও তারা নীরবতা পালন করে এক প্রকার তার প্রতিই যেন মৌন সমর্থন করছে। আর এতে বিভ্রান্ত হচ্ছে দেশের কোটি কোটি যুব সমাজ। অনেকে বলেন, শহিদুল আলম আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব! কিন্তু যতদূর জানি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফটো বিক্রেতা হিসেবে যতটুকু ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করেছেন সেটা তার ব্যক্তিত্ব ও দেশাত্মবোধ প্রতিনিধিত্ব নেতৃত্ব থেকে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান হতে পারেননি বরং বিতর্কিত। শহিদুল আলম ১৯৮৪ সালে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন দৃক। আর এটি আলোকচিত্র গ্রন্থাগার হিসেবে শুরু করলেও পরে দৃকের সঙ্গে যুক্ত হয় দৃক গ্যালারি, পাঠশালা, দৃক আইসিটি। সরকারী কোন সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই দেড় যুগ ধরে তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠানের চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফির সার্টিফিকেট কোর্স চালিয়ে এসেছে আলোকচিত্রী, দৃকের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম। সে তাঁর নিজস্ব বিবেচনায় স্নাতক, ডিপ্লোমা, শর্ট কোর্স, লং কোর্সসহ বিভিন্ন নামে সনদ দিয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট থেকে। আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহকৃত তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, শহিদুল আলম তাঁর পাঠশালায় নিজের একক আধিপত্য বিস্তার করতেই সরকারী অনুমোদন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি সব সময় এড়িয়ে গেছেন। একদিকে নিজেই এড়িয়ে গেছেন নিজের একক স্বার্থের জন্য অন্যদিকে দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থী ও বন্ধুদের কাছে প্রচার করেছে সরকারের উপর দোষ চাপিয়ে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিবাদ আর অভিযোগের মুখে বাধ্য হয়েই গত বছর সরকারী সংস্থার অনুমোদন নিয়েছেন। এটাকে বলতে পারেন, রীতিমতো বাধ্য হয়েই তিনি সরকারের নীতির আওতায় নিজেকে যুক্ত করেন। ১৯৮৯ সালের অনুমোদনহীন ফটোগ্রাফিক কোর্স ২০১৮ সালে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করান। শহিদুল আলম তার প্রতিষ্ঠানকে অলাভজনক বললেও এক বছর মেয়াদী কোর্সের জন্য পাঠশালায় আদায় করতেন ৮০ হাজার টাকা। অন্যান্য কোর্সের জন্য রয়েছে আবার পৃথক ফি! ২০১৬ সালে পাঠশালার সিনেমা বিভাগের প্রধান চলচ্চিত্র নির্মাতা ইশতিয়াক জিকোসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করেন আমাদের এই মেধাবী আলোকচিত্রী। তখন শিক্ষকদের ওইভাবে ছাঁটাইয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন সিনেমা বিভাগের এক বছর মেয়াদী কোর্সের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু জিকোসহ চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা সে সময় আর প্রতিষ্ঠানটিতে ফিরতে পারেননি। এ নিয়ে কালো ব্যানারে সাদা রং-এ লেখা ‘গুরু (জিকো স্যার) ছাড়া পাঠশালা মানি না!’-শিরোনামে আমাদের মেধাবী আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের অপকর্মের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা তখন মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হন। পাঠক, আমি ব্যক্তিগতভাবে এই শহিদুল আলমকে চিনি সেই গণজাগরণের আন্দোলন থেকে। তিনি একদিকে নিজের শরীরে ব্লগার লেখা টি-শার্ট পরে নিজেকে ব্লগার দাবি করত আর অন্যদিকে মৌলবাদীদের উস্কে দিত। কারণ, তিনি ব্লগে লেখেন- মানুষের অধিকার নিয়ে, ইসলাম প্রচার করতে এবং সর্বোপরি ইসলামী শাসন কায়েম করতে এবং তার পাগড়ি নিয়ে গবেষণা করলেও আইএসআইয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক ধরনের সমর্থক প্রচারও তিনি অব্যাহত রেখেছে বলে ধারণা করা হয়। শাহবাগে আমরা কেন জড়ো হয়েছিলাম? আমাদের দাবি কী ছিল (?)-এটা পুরো জাতি জানলেও আমাদের মেধাবী আলোকচিত্রী শহদিুল আলম তুলে ধরেছেন ভিন্নভাবে। তিনি ‘আ ফরটি ইয়ার কোয়েস্ট ফর জাস্টিস’ নিবন্ধে লিখেছেন, Years of kleptocratic rule, nepotism, corruption and abuse of power have eroded trust in government in Bangladesh. People feel that the system is so corrupt that change cannot possibly emerge in the electoral arena. That’s why hundreds of thousands of Bangladeshis have gathered in the past month in a spontaneous movement that quickly spread across the country. আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মূল উদ্দেশ্য বের হয়ে আসে ৫ মে’র তথাকথিত হেফাজতি আন্দোলনের মাধ্যমে। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর দেয়া সকল তথ্যের সঙ্গে তিনিও একমত পোষণ করে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করেন। শহিদুল আলম যে সত্যটা জানেন না, তা কিন্তু নয়। তিনি জেনে-শুনে এবং বুঝেই পরিকল্পিতভাবে মিথ্যাচার করেছে! কারণ, তারা একটা এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার মিশনে জোট বেঁধে নেমেছিল। সেই এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নে ডেভিট বার্গম্যানের সঙ্গে এক হয়ে মাঠে নামে। সঙ্গে ছিল আরেক জামায়াতি বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার। আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী বলেন, শহিদুল আলম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার পক্ষে কাজ করেছেন। আর এই কথার রেফারেন্স টানেন তাঁর নিউইয়র্ক টাইমসের লেখা দিয়ে। ‘আ ফরটি ইয়ার কোয়েস্ট ফর জাস্টিস’ নিবন্ধে শহিদুল লিখেছেন, Bangladesh’s founding leader, Sheikh Mujibur Rahman, set up special tribunals to try the collaborators. Several thousand cases were filed, but the quest for justice was derailed in late 1973 when Sheikh Mujibur declared a general amnesty for the collaborators against whom trial had not yet been initiated. আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের লেখা থেকেই বোঝা যায়, সেও তথাকথিত প্রগতিশীলদের মতো ১৯৭৩ সালের সাধারণ ক্ষমার প্রসঙ্গ টেনে রাজাকারদের পক্ষ অবলম্বন করেছে। ঠিক যেমনিভাবে রাজাকারদের প্রতি সহানুভূতিশীল অন্য লেখকরা অবস্থান নিয়ে থাকেন। শহিদুল আলমের লেখার মূল উদ্দেশ্য মোটেও রাজাকারদের বিচার করার পক্ষে ছিল না, বরং আমি বলব আওয়ামী লীগ বিরোধিতার কয়েকটি ফ্রন্টের একটিকে কার্যকর রাখাই ছিল তাঁর আসল উদ্দেশ্য। আমাদের মেধাবী আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ওই লেখায় Only in 2010 was a tribunal at last established to investigate the 1971 war crime আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মিথ্যাচারের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমাকে দায়ী করেছেন। আর অন্যদিকে দালাল আইনের কী হয়েছিল (?), কে বন্ধ করেছিল (?) এটিও সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন। Bangladesh’s original Constitution had four basic principles: nationalism, democracy, socialism and secularism. Military dictators replaced that with “absolute trust and faith in the Almighty Allah as the basis of all actions” in 1977, and made another change in 1988 that led to our once-secular nation’s being redefined as an Islamist one. Martial law, amnesty and political deals allowed the collaborators to go free and Jamaat-e-Islami to gradually rejoin the political mainstream-শহিদুল আলমের লেখামতে সামরিক আইন, বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা এবং রাজনৈতিক ঐক্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীকে ফিরিয়ে আনা নিয়ে তাঁর এই মিথ্যা তথ্য প্রচার-প্রকাশের মাধ্যমে কী প্রমাণ হয় সে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পক্ষে কাজ করেছে? পাঠক! একটু লক্ষ্য করলে আপনিও দেখবেন, বিএনপি সব সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কয়েকটি ফ্রন্টকে ব্যবহার করে থাকে। যেমন ধরুন, জামায়াত-শিবির ও জামায়াত মনস্ক বিএনপির কর্মীরা সব সময় আওয়ামী লীগকে ভারতের দালাল আর ইসলামের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে সদা সক্রিয় থাকে এবং বিপুলসংখ্যক জনগণ এদের বিভ্রান্তির শিকার হয়, শিকার হয়ে আছে। অন্যদিকে মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও জনগণের একটি অংশের জন্য সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে, তা যখন ইতিবাচক বলে গণ্য হয়, তখনই আরেকটি ফ্রন্ট সক্রিয় হয় এবং ট্রল করা হয় মদিনা সনদের নামে। আবার নিজেদের ট্রল প্যাকেজ নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার করে আওয়ামী লীগ মৌলবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও অনুগত! বিএনপি ভাল করেই জানে, এদেশের কতিপয় মানুষ খুব সহজে বিভ্রান্ত করা যায়। যেমন রাজাকার সাঈদীর ছবি চাঁদের ছবির সঙ্গে যুক্ত করে দেশের ভেতরে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগারদের নাস্তিক বলে শুধু বিতর্কিত নয়, হত্যার লিস্ট তৈরি করে হত্যা পর্যন্ত করতে সফল হয়েছে। আর এই হত্যাকে জায়েজ বা বৈধতা দেয়ার জন্য তাদের আদর্শ ও অনুগত ব্যক্তি ও মিডিয়াকে ব্যবহার করেছে। যেমন, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কাবা শরীফের গিলাব পরিবর্তনের ছবি নিয়ে খোদ কাবা শরীফে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে মর্মে তাঁর পত্রিকায় সংবাদ প্রচার-প্রকাশ করেছে। সাম্প্রতিক নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে তা কি শুধু সড়কের নিরাপত্তার অভাবেই শুরু হয়েছে নাকি এর পেছনে আরও বড় কিছু রয়েছে (?) এমন প্রশ্নের জবাবে আমাদের মেধাবী আলোচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে, যারা আসলে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই শাসন করছে, ব্যাংক লুট করছে, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটিয়ে চলেছে, বিরোধী মতের লোকজনকে গুম করা হচ্ছে, সরকারের প্রত্যেকটি স্তরে ঘুষ, এসবই চলছে দেশে। যে আবেগ বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই আন্দোলনে তা আসলে শুধু নিরাপদ সড়কের দাবিতে নয় এসবের কারণেও হয়েছে। একটি অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে বলে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম মূলত ৯ম ও ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন এবং দেশের সার্বিক অবস্থা সরকার এতটাই খারাপ করেছে যা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ইত্যাদি ইত্যাদি বোঝাতে চেয়েছেন। এখানেও কৌশলটা তাঁর সেই পুরনো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক তবে আন্তর্জাতিক মানের, স্বচ্ছতার সঙ্গে! আর এই বিচারকাজ শুরু করেছিল ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী সরকার। আর এই সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তাই সরকার ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত করতে পারলেই রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজও বিতর্কিত করা সম্ভব। আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের পক্ষে সাফাই সুর তোলার পক্ষে কোন তথ্য-উপাত্ত আমার জানা নেই। কারণ, শহিদুল আলম তার ব্যক্তি পর্যায়ের বিশ্বাস পরিকল্পিতভাবে যুব সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন, দিয়েছেন। যা একাদশ জাতীয় সংসদের এই মুহূর্তে সমাজ-রাষ্ট্রের মাঝে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ হতে পারে। সে যেভাবে জামায়াতের মুখপত্র হয়ে আল জাজিরায় বক্তব্য দিয়েছেন, মিথ্যাকে সত্য বলে জাস্টিফাই করেছেন। এটা ব্যক্তি শহিদুল আলমের জন্য স্বাভাবিক হলেও গোটা দেশ ও জাতির জন্য অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরির ষড়যন্ত্র। সেই সঙ্গে আলোরবর্তিকাখ্যাত বুদ্ধিচর্চার বুদ্ধিজীবী সমাজকেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এটি অপ্রত্যাশীত অপরাধ! আর অপরাধবোধ আর অনুসূচনাবোধ কিংবা অপরাধ করেছে মর্মে বিবেকবোধ জাগ্রত করতে হলে অবশ্যই তার দ্বারা সংঘটিত অপরাধের শাস্তি প্রদান করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) [email protected]
×