ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ এ এইচ এম রেজাউল হক

মাংসপেশীর আঘাত

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১৪ আগস্ট ২০১৮

মাংসপেশীর আঘাত

মাংসপেশীর আঘাত হলো মাংসপেশী ছিঁড়ে যাওয়া, টান খাওয়া বা আঘাতের জন্য রক্ত জমাট বাঁধা। বর্তমানে বিশ্বের সেরা ফুটবলার মেসির খেলা দেখার জন্য আমি সারা রাত জেগে থাকি; সেই মেসি যখন হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ে সাইডলাইনে বসে থাকেন, খেলার আকর্ষণ তখন অনেকটাই কমে যায়। আর আমার মতো মেসি-ভক্তদের খেলা দেখাই বন্ধ হয়ে যায়। এই ম্যামস্ট্রিং ইনজুরি হলো হ্যামস্ট্রিং মাংসপেশীর আঘাত। মাংসপেশীর এই আঘাত খুবই বিরক্তিকর। একজন খেলোয়াড়কে অনেক দিন খেলা থেকে দূরে রাখে। স্পোর্টস ইনজুরির ১০-৩০ শতাংশ হলো মাংসপেশীতে আঘাত। আর ফুটবলের ইনজুরির ৩০ শতাংশ হলো মাংসপেশীতে আঘাত। মাংসপেশীতে আঘাত হলো সরাসরি আঘাতের জন্য অথবা অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য ছিঁড়ে যাওয়া- রক্ত জমাট হওয়া মাংসপেশীর ভেতরে মাংসপেশীর মধ্যবর্তী স্থানে যখন মাংসপেশীকে এমন কাজ করতে হয, যা মাংসপেশীর স্বাভাবিক ক্ষমতার চেয়ে বেশি, তখনই আঘাতপ্রাপ্ত হগয়। টানে সাধারণত যেসব মাংসপেশী ছিঁড়ে যায়, যারা দুটি জয়েন্টকে যেমন- হ্যামস্ট্রিং, বাইসেপস ইত্যাদি। মাংসপেশী ছেঁড়া গুরুত্ব অনুসারে তিন প্রকার। প্রথম- ৫ শতাংশ মাংসতন্তু ছিঁড়ে যায়। শক্তি ও অস্থিসন্ধি নাড়াতে ব্যথা হবে এবং শক্তিও কম থাকবে। দ্বিতীয়- ৫ শতাংশের অধিক মাংসতন্তু ছিঁড়ে যায়। অস্থিসন্ধি রাড়াতে ব্যথা হবে এবং শক্তিও কম থাকবে। তৃতীয়- সম্পূর্ণ মাংসপেশী ছিঁড়ে যায়। লক্ষণ- মাংসপেশীতে ব্যথা হবে। মাংসপেশীতে নাড়াচাড়ায় ব্যথা বাড়বে এবং বিশ্রামে ব্যথা কমবে। পার্শ্বিয়াল ছেঁড়াতে একটা গর্ত পাওয়া যাবে এবং সম্পূর্ণ ছেঁড়াতে মাংস ফুলা তৈরি হবে। পার্শি¦য়াল ছেঁড়াতে ব্যথার জন্য নাড়াতে পারবে না আর সম্পূর্ন ছেঁড়ার কারণে বাড়াতে পারবে না। আঘাতের স্থানের রং পরিবর্তন হবে ও ফুলে যাবে। মাংসপেশীতে রক্ত জমাট বাঁধা খেলাধুলার সময় মাংসপেশীতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। আঘাতে এই মাংসপেশীতে কী পরিমাণ রক্তক্ষরণ হবে তা নির্ভর করবে কী পরিমাণ রক্ত মাংসপেশীতে চলাচল করছিল, এই মাংসপেশী কেমন টানে ছিল। আঘাতের পরবর্তী ফলাফল নির্ভর করবে কোথায় এবং কী পরিমাণ আঘাত পেয়েছিল। মাংসপেশীর ভেতরে মাংশপেশির মধ্যবর্তী স্থানে রক্তক্ষরণ মাংসপেশীর ভেতরে ছিঁড়ে যাওয়া বা চাপের কারণে হতে পারে। জমাট রক্ত মাংসপেশীর ভেতরে চাপ বাড়িয়ে দেয় এবং রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। মাংসপেশীর ভেতরে চাপ বাড়িয়ে দেয় এবং রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। মাংসপেশীতে ব্যথা ও কার্যকারিতা কমে যায়। মাংসপেশীর মধ্যবর্তী স্থানে রক্তক্ষরণ হয পার্শ্ববর্তী রক্তনালী যখন ছিঁড়ে যায়-একটা ফোলআপ তৈরি হয় রক্ত জমাট রাখার জন্য। সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর। কার্য়কারিতাও তেমন হারায় না। সহজে আরোগ্য লাভ করে। যে যে কারণে মাংসপেশী আঘাতপ্রাপ্ত হয়- পর্যাপ্ত পরিমাণ ওয়ার্মআপ না হলে আগেই আঘাতপ্রাপ্ত মাংসপেশী, যা পরিপূর্ণ চিকিৎসা হয়নি আগে আঘাতপ্রাপ্ত মাংসপেশী, বা স্কার টিস্যু দিয়ে সেরেছে অতিরিক্ত ব্যবহৃত বা অবসন্ন মাংসপেশী টেন্স মাংসপেশী, যা সম্পূর্ণরূপে নাড়াচড়া করা যায় না। অতিরিক্ত ঠা-ায় মাংসপেশী, যা স্বাভাবিক সম্প্রসারণ করা যায় না। চিকিৎসা- চিকিৎসা, সুস্থতা ও পুনর্বাসন নির্ভর করে কোন ধরনের, কী পরিমাণ এবং কোথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে তার ওপর। আঘাতপ্রাপ্ত মাংসপেশীতে রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য নিম্ন লিািখত পদ্ধতি অবলম্বন করবেন। বিশ্রাম ঠান্ডা সেক ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ আহত অঙ্গ উঁচুতে রাখবেন আহত অঙ্গ কোন ধরনের চাপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে (ক্র্যাচ/এ্যালবো ব্যাগ) ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ফোলা কমে গেছে কি-না ফোলা ছড়িয়ে পড়েছে কি-না আঙ্গুল নাড়াতে পারে কি-না। এই সময় রোগ নির্ণয় খুব জরুরী। কেননা যদি মাংসের ভেতরে রক্তক্ষরণ অথবা সম্পূর্ণ মাংসপেশী ছিঁড়ে যায়। সম্পূর্ণ চিকিৎসার আগে ব্যায়াম শুরু করলে স্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। যদি অল্প আঘাত হয়, তাহলে ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ, গরম সেক ও ব্যায়াম করলেই সেরে যায়। পরবর্তীকালে- Static Exercise Co-ordination Trading ধীরে ধীর কাজের গতি ও পরিমাণ বাড়াতে হবে। খেলার ধরন অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। যদি আশানুরূপ উন্নতি না হয় তবে বুঝতে হবে মাংসের ভেতরে ছিঁড়েছে। সার্জারি করতে হবে যখন- ১. জমাট রক্ত বের করতে ২. ছেঁড়া মাংসপেশী জোড়া লাগাতে, তাহলে স্কার টিস্যু কম তৈরি হবে। পুনর্বাসন অপারেশনের পর কখন ব্যায়াম ও কাজ শুরু করবে তা নির্ভর করে কোন মাংসপেশী এবং কত গভীরভাবে ছিঁড়েছে তার ওপর। যত আগে ব্যয়াম ও পুনর্বাসন শুরু করবে তত তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে। যখন মাংসপেশীর সঙ্কোচন ও প্রসারণের সময় ব্যথা পাওয়া যায় না, তখন বুঝতে হবে যা শুকিয়ে গেছে। যখন মাংসপেশী স্বাভাবিক কাজ ও স্বাভাবিক নাড়াচড়া করবে তখন থেকে ট্রেনিং প্রোগ্রাম শুরু করতে পারে। মাংসপেশীর আঘাত সারাতে ৩ থেকে ১৬ সপ্তাহ লাগে। কন্ডিশনিং ব্যায়াম ধীর ধীরে শুরু করতে হবে। যত দিন ব্যায়াম করার সময় ব্যথা লাগে তত দিন প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশগ্রহণ করবে না। মাংসপেশীর আঘাত থেকে মুক্তির উপায়- পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রস্তুতি। শারীরিক ও মানসিক। খেলার আগে ওয়ার্মআপ করে নিতে হবে। অতিরিক্ত গরম, ঠান্ডা, শুষ্ক আবহাওয়া ও উঁচু স্থানে খেলার শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্দিষ্ট মাংসপেশীর নির্দিষ্ট ব্যায়াম করে প্রতিটি মাংসপেশীকে সম্প্রসারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের মাধ্যমে মাংসপেশীর ক্ষমতা বাড়াতে হবে। লেখক : কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক্স ডিপার্টমেন্ট ইউনাইটেড হসপিটাল
×