ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তস্বল্পতার মুখের রোগ

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৪ আগস্ট ২০১৮

 রক্তস্বল্পতার মুখের রোগ

মানবদেহে রক্তে যখন হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় তখন এ অবস্থাকে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা বলে। রক্তস্বল্পতার কারনে মুখের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। (১) জিহ্বায় ঘাঃ রক্তস্বল্পতার কারণে জিহ্বায় ঘা হতে পারে। প্রাথমিক রক্তস্বল্পতায় এ জিহ্বায় স্বাভাবিক রঙের পরিবর্তন হতে পারে। রক্তস্বল্পতা বেশী হলে জিহ্বায় এট্রফিক প্রদাহ হতে পারে। জিহ্বার রং লাল হয়ে থাকে এবং জিহ্বায় ঘা দেখা দেয়। যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করলে জিহ্বার এ ঘা সহজেই ভাল হয়ে যায়। (২) মোয়েলারস গ্লসাইটিস ঃ প্রাথমিকভাবেক ভিটামিন বি১২ এর অভাবে জিহ্বায় ঘা দেখা যায় এবং জিহ্বায় লাল লাল দাগ দেখা যেতে পারে। এটি সাধারণত জিহ্বায় অগ্রভাগে দেখা যায়। কিন্তু এ লক্ষণ খুব কম রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে জিহ্বার উপরিভাগে লাল দাগ দেখা যায়। কোনো কোন সময় লাল ক্ষতের মত দাগ ও হতে পারে। (৩) প্যাটারসন কেলি সিনড্রোমঃ আয়রনের অভাবজনিত কারণে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় প্যাটারসন কেলি সিনড্রোম লক্ষ্য করা যায় যখন জিহ্বায় প্রদাহ বা জ্বারা পোড়া অনুভব হতে পারে। (৪) ক্যান্ডিডসিসঃ রক্তস্বল্পতার কারণে মুখের ক্যান্ডিডসিস রোগ আরো সক্রিয় হতে উঠতে পারে। আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতার ক্ষেত্রে ক্যান্ডিডোসিস এর চিকিৎসায় এন্টিফাঙ্গাল ওষুধের সাথে আয়রন প্রদান করলে দ্রুত রোগ নিরাময় হয়। (৫) ঠোটের প্রদাহ ও চিলাইটিস ঃ ঠোটের প্রদাহ বা ঠোটের কোণায় ঘা রক্তস্বল্পতার একটি লক্ষণ বিশেষ করে আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতার ক্ষেত্রে। কিন্তু অল্প সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে এ রকম হয়ে থাকে। বর্তমানে ঠোটের প্রদাহ বা চিলাইটিস হয়ে থাকে সাধারণত সংক্রমনের দ্বারা প্রধানত ক্যানডিডা অ্যালবিকানস দ্বারা। এ অবস্থায় রক্তস্বল্পতা থাকেলে রোগটি আরো বিস্তৃতি লাভ করে থাকে। (৬) অ্যাপথাস স্টোমাটাইটিস ঃ রক্তস্বল্পতায় মাঝে মাঝে স্টোমাটাইটিস বা প্রদাহ হতে পারে। বিশেষ করে ফলেটের অভাবে এমনটি হতে পারে। মধ্য বয়সী বা আরো বেশী বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে ফলেটের অভাব হতে পারে। সাধারণত আমাদের দেশে আপামর জনসাধারনের মাঝে রক্তস্বল্পতার ব্যাপারে একটি ভুল ধারণা রয়েছে। সেটি হল অনেকেই মনে করেন যে রক্তস্বল্পতা মানে শরীরে রক্ত কমে যাওয়া। আসলে ব্যাপারটি মোটেও সেরকম নয়। রক্তের হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কমে গেলেই ডাক্তারী ভাষায় একে রক্তস্বল্পতা বলা হয়। আর রক্তস্বল্পতা থাকলে আপনার মুখে, জিহ্বায় এবং ঠোটে যে সব সমস্যা দেখা যায় সেগুলো ইতিমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে। আবার রক্তস্বল্পতা থাকলে যে কোন রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। রক্তস্বল্পতায় কখনও ঔষধের দোকানে যেয়ে স্যালাইন এর ভিতর রঙ্গীন ভিটামিন ইনজেকশন শরীরে গ্রহণ করলে সাথে সাথে আপনার রক্তস্বল্পতা চলে যাবে এমন ধারণা মন থেকে মুছে ফেলুন। স্যালাইন ইনজেকশন আকারে বেকল তখনই দেওয়া হয় যখন রোগী মুখে খেতে পারে না বা খেলে সমস্যা দেখা দেয়। অতএব অহেতুক দুর্বলতা বা রক্তস্বল্পতায় স্যালাইন ইনজেকশন গ্রহণ না করে সেই টাকায় মুখে খাবার ঔষধ সেবন করুন এবং শাক সবজি ও ফলমুল খান। তাই আপনার মুখের যে কোন সমস্যায় অবশ্যই সচেতন হতে হবে এবং রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় করে ওষুধ সেবন করতে হবে। তবেই অহেতুক দুঃশ্চিন্তা এবং হয়রানি থেকে আপনি রেহাই পেতে পারেন। এসব সমস্যায় কখনই বিদেশে যেয়ে চিকিৎসার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ আমাদের দেশেই উন্নত চিকিৎসা বিদ্যমান। ডা. মোঃ ফারুক হোসেন মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
×