ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ‘২১তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী- ২০১৮’ তরুণ প্রজন্মের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর এক বিশেষ আয়োজন। নির্ধারিত বয়স সীমা ২১ থেকে ৩৫ এর মধ্যে তরুণ শিল্পীরা তাদের কাজ জমা দেন। এই প্রথম প্রায় ৭৮৭ জন শিল্পী কাজ জমা দিয়েছেন। যার মধ্য থেকে ৩৮

নবীন চিত্রকর প্রদীপের কথা

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ১৪ আগস্ট ২০১৮

নবীন চিত্রকর প্রদীপের কথা

ডি-প্রজন্ম : জন্ম, বেড়ে ওঠা, পরিবার, শিক্ষা। প্রদীপ : জন্ম ১৯৮৯ সালে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায়। আমরা এক ভাই এক বোন। বাবা প্রভাস চন্দ্র সাহা, মা গৌরী রানী সাহা। আমার বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহে। ২০০৫ সালে নজরুল বিদ্যা নিকেতন থেকে এসএসসি, এবং ২০০৮ সালে শহীদ স্মৃতি সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলা বিভাগে ড্রইং এ্যান্ড পেইন্টিং বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করি। আমি মাস্টার্সে চারুকলা বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছি। রাজশাহী বিশ্ববিদালয়ের বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীতে মাধ্যম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছি ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে। ডি-প্রজন্ম : শিল্পী হয়ে ওঠার প্রেরণা কার কাছ থেকে এবং কীভাবে পেলেন? প্রদীপ : আমার মায়ের আশীর্বাদ, তার শিল্পের প্রতি ভাললাগাটাই হচ্ছে আমার প্রথম প্রেরণা। আমার বড় বোন ভাল ছবিতে আঁকত। ছোটবেলায় ওর দেখাদেখি আমিও ছবি আঁকতে ভাল বাসতাম। যখন আমি দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র শিল্পী শাহাবুদ্দিনের আঁকা ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি পেইন্টিং আমার খুব ভাল লেগেছিল। এই ভাললাগাটা আমাকে ভীষণভাবে উৎসাহিত করে। আমি দ্বাদশ শ্রেনীতে পড়াকালীন আমার পিতা পরলোকগমন করেন। এর পরের সময়টা বেশ কষ্টের। দিদিকে বিয়ে দিয়েছি। দুলাভাইও আমার শৈল্পিক কাজের বিষয়ে আমাকে অনেক সাপোর্ট করেন। সকলে বলেছে চাকরি করার কথা। ছবি এঁকে কি হবে? শিল্পী হয়ে লাভ কি? দুলাভাই তখন আমাকে সাহস যুগিয়েছে, ‘বলেছে যেহেতু তোমার মধ্যে শিল্পবোধ আছে, তোমার এ কাজ করতে ভাললাগে, তুমি শিল্পীই হবে।’ আমি তোমার পাশে আছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজও আমাকে সাপোর্ট দিয়ে চলেছেন। আজও তাঁরা আমার খবর নেন। আমার কাজের খবর নেন। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা আমাকে পরামর্শ দেন। আমার কোন শিল্পকর্ম ভাল হলে তাঁরা খুশি হন। আমায় উৎসাহ দেন। তাঁদের এ উৎসাহ আমার মনোবলকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তাঁদের ভালবাসা আমার কর্মের আর একটি বড় উৎস। ডি-প্রজন্ম : আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শিল্পকে কতটা প্রভাবিত করে বলে আপনি মনে করেন... প্রদীপ : এখন যে প্রেক্ষাপট সেখানে শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রায় ১০০%। তবে এখন আবার এটাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার সময় চলছে। এখনকার সময়টা হচ্ছে পোস্ট মর্ডানিজম। এখন প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক। অনেকে প্রযুক্তির মধ্যে আটকে গেছে সেখান থেকে বেড় হতে পারছে না। এ বিষয়ে আমার মতামত হচ্ছে, প্রযুক্তি আমি অবশ্যই ব্যবহার করব। কারণ এটা আমাদের কলাণ্যের জন। কিন্তু শুধু প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি কথা আমার খুব ভাললাগে তা হচ্ছে, কলা এবং কৌশল মিলে সৃষ্টি হয় শিল্পের। কিন্তু কলাকে যদি কৌশল ছাড়িয়ে যায় তাহলে তা আর্টিফিসিয়াল হয়ে যায়। তাঁর এ কথাটি আমি খুবই বিশ্বাস করি। ডি-প্রজন্ম : বর্তমানে বাংলাদেশে শিল্পকে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে আপনি মনে করেন... প্রদীপ : শিল্পের প্রদর্শনী আরও বেশি হতে হবে। এবং তা শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক নয়, বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়েও হতে হবে। একটা শিল্প তৈরির পেছনে শিল্পীর যে খরচ, আবার যারা ঢাকার বাইরের শিল্পী তাদের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতে হলে তার শিল্পকর্ম নিয়ে ঢাকায় আসা এবং তা আবার নিয়ে যাওয়া এটা ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য। এই যাওয়া-আসাতে যে ট্রান্সপোর্ট খরচ হয় তা বহন করাও অনেক শিল্পীর ক্ষেত্রে কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। কেননা আমরা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। একটি চিত্রকলা প্রদর্শনীতে ছবি ফ্রেমিং করাসহ অন্যান্য আরও অনেক কাজ থাকে। এসব কিছুর পরেও ছবি বিক্রি হয় কম। আমরা শুধুই ইনভেস্টের মধ্যে আছি। মনের খোরাক থেকেই কাজ করে চলেছি। আবার ঢাকার বাইরের যারা প্রদর্শনী দেখতে চান, বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসে প্রদর্শনী দেখা তাদের পক্ষে সব সময় সম্ভব হয় না। অন্যান্য জেলাগুলোতেও শিল্পকলা একাডেমি আছে। সেখানেও প্রদর্শনী হওয়া উচিত। আমরা সেখানে পার্টিসিপেট করব। চারুকলা বিষয়টা সবার জানা দরকার। এবং তা স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করা উচিত বলে আমি মনে করি। কিছুদিন পূর্বে বিষয়টি স্কুলে বাধ্যতামূলক ছিল কিন্তু এখন এর গতি খানিকটা মন্থর। এ বিষয়ে সরকারের সদয় দৃষ্টি শিল্পকে আরও উন্নত এবং প্রসারিত করবে। সরকার যদি আমাদের নার্সিং করে তাহলে শিল্প বিষয়টি এমনিতেই উঠে আসবে। কারণ শিল্প ছাড়া কোন দেশ সুন্দর হতে পারে না। ডি-প্রজন্ম : সমাজ সুন্দর করে গড়ে তুলতে একজন শিল্পীর দায়িত্ব... প্রদীপ : সমাজ তথা দেশ সুন্দর করার জন্য একজন শিল্পীর দায়িত্ব অনেক। একজন শিল্পী তার সততা এবং সৌন্দর্য দিয়ে তার চারপাশের জগত দেখে। তার কর্মের মাধ্যমে সেই সুন্দর, ভালকে তুলে ধরার চেষ্টা করে এবং তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। মানুষ সুন্দর হয়ে ওঠে। যখন সকলের ভাবনা সুন্দর হবে, কাজ সুন্দর হবে তখন দেশ এমনিতেই এগিয়ে যাবে এবং সুন্দর হয়ে উঠবে। ডি-প্রজন্ম : আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিল্পকর্মের পাশে আমাদের দেশীয় শিল্পের অবস্থান... প্রদীপ : আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এটা প্রায় ইক্যুয়াল। যদি আমরা আরও ভাল নার্সিং পাই, সরকার আমাদের সাপোর্ট দেন আমার বিশ্বাস সেদিন বেশি দূরে নেই যখন বাংলাদেশ শিল্পে লিড দেবে। এই বাংলাতেই রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের মতো শিল্পীর জন্ম হয়েছে। আমাদের জাতির পিতাও ছিলেন শিল্পমনা। শিল্পকে তো আমরা ধারণ করি। ডি-প্রজন্ম : যে বিষয়টিতে আপনি ২১তম নবীন চারুকলা প্রদর্শনীতে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার (চিত্রকলা) পেয়েছেন, বিষয়টির নাম এবং বিষয়বস্তু যদি ব্যাখ্যা করেন... প্রদীপ : আমার চিত্রশিল্পের নাম হচ্ছে ‘রি জেনারেট-২’। এর মানে হচ্ছে নবজন্ম প্রদান করা। পুরাতন বিষয়বস্তুগুলোকে নতুন করে প্রকাশ করা। আমি স্পেচুলাতে স্ট্রোকে কাজ করতে বেশি পছন্দ করি। এখানেও তাই করেছি। এখানে কিছু ভঙ্গুর বিষয়ের মধ্য দিয়ে নতুনের সৃষ্টিকে প্রকাশ করা হয়েছে। শুধু গড়ার মাঝে সৌন্দর্য, এটা আমি বিশ্বাস করি না। ভাঙ্গার মাঝেও সৌন্দর্য আছে, অনেক ভাবার্থ আছে, তাৎপর্য আছে। না ভাঙ্গলে তো আর নতুনের সৃষ্টি হয় না। ছবিটির মধ্যে একটি সাইকেলের বেল আছে যা রিসাইকেলের প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে। ডি-প্রজন্ম : কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান? প্রদীপ : শৈল্পিক বাংলাদেশ দেখতে চাই। যেখানে সবাই সচেতন হবে। যে যার জায়গা থেকে ১০০% দিয়ে কাজ করবে। প্রত্যেকে দেশকে সত্যিকারের ভালবাসবে।
×