ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গণিতের বিস্ময় তরুণ অক্ষয় ভেঙ্কটেশ

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ১৪ আগস্ট ২০১৮

গণিতের বিস্ময় তরুণ  অক্ষয় ভেঙ্কটেশ

ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরোতে গণিতের নোবেল পুরস্কার হিসেবে খ্যাত, ‘ফিল্ডস মেডেল’- ২০১৮-এর তালিকায় নাম লেখালেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অক্ষয় ভেঙ্কটেশ। নম্বর থিওরি, জিওমেট্রি, এ্যারিথমেটিক, টোপেলজিসহ গণিতের একাধিক বিষয়ে অবদানের জন্য তিনি এ সম্মান পেলেন। জন্ম ২১ নবেম্বর, ১৯৮১ নয়াদিল্লীতে। বয়স যখন দুই বছর, তখন মা-বাবা চলে যান অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে। মা শ্বেতা কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ, এখন ওই বিষয়ে অধ্যাপিকা। বাবার বিষয়ও তা-ই। অক্ষয়ের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং কলেজের প্রথম পাঠ অস্ট্রেলিয়াতেই। পরে অবশ্য তার ঠিকানা আমেরিকা মাত্র ২০ বছর বয়সে পিএইচডি ডিগ্রী নিয়ে গবেষণার জন্য পা রাখেন এমআইটিতে। প্রিন্সটন, ম্যাসচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-তে গবেষণার পরে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের অধ্যাপক। এই মুহূর্তে প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট ফর এ্যাডভান্সড স্টাডিতে ভিজিটিং প্রফেসর তিনি। ওই শিক্ষায়তনই একদা ঠিকানা ছিল আলবার্ট আইনস্টাইন, কার্ট গোয়েডেল বা জন ফন নয়ম্যানের মতো প্রতিভার। অবশ্য, এ মাসের মাঝামাঝি অক্ষয় স্থায়ীভাবে যোগ দিচ্ছেন ইনস্টিটিউট অব এ্যাডভান্সড স্টাডিতেই। শৈশবেই নজরকাড়া প্রতিভা। মাত্র ১১ বছর বয়সে ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে মেডেল। পরের বছরেই, বয়স ১২ না পেরোতেই, ম্যাথমেটিকস অলিম্পিয়াডে মেডেল। তখন থেকেই জানান দিচ্ছিলেন নিজের প্রতিভার। এবার তো রীতিমতো গণিতের নোবেল। আজ পর্যন্ত আর কোন অস্ট্রেলীয়র ভাগ্যে এমন সম্মান জোটেনি। প্রত্যেক চার বছর অন্তর ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথমেটিক্যাল ইউনিয়ন-আয়োজিত গণিতজ্ঞদের বিশ্ব সম্মেলনে দেয়া হয় ফিল্ডস মেডেল। এ বছর রিও শহরে আয়োজিত ওই সম্মেলনে ‘ফিল্ডস’ পেয়েছেন চার গণিতজ্ঞ। গণিতে নেই কোন নোবেল পুরস্কার, সে জন্য কানাডীয় গণিতজ্ঞ ফিল্ডসের নামে প্রচলিত এই শিরোপার সঙ্গে জুড়ে থাকে নোবেল নামটি। তবে, নোবেলের সঙ্গে এর ফারাক এই যে, ও পুরস্কার পেতে বয়সের বাধা নিষেধ নেই। আর ফিল্ডস পেতে বয়স অবশ্যই ৪০-এর কম হওয়া দরকার। যেমন, অক্ষয়ের বয়স এখন ৩৭। নিজের বেলায় জিনিয়াস মিথটা অক্ষয়ের ঘোর অপছন্দ। ওর মতে, ওই মিথটা অযথা মহত্ত্ব আরোপ করে কোন কোন গবেষকের ঘাড়ে। যেন, তিনি একাই করে ফেলছেন সবটা। আসলে, গবেষণা মানে বহু মানুষের কাঁধে চাপা। এই যেমন, ওর নিজের কাজও দাঁড়িয়ে আছে অঙ্কের তথাকথিত অনেক জিনিয়াসের কৃতকর্মের উপরে। মিতবাক অক্ষয় অসম্ভব লো-প্রোফাইল। ‘এমন আর কী করেছি’, এই ভাবটি অক্ষয়ের আচরণে সর্বদা প্রকট। পদার্থবিদ্যা থেকে যখন প্রেম পাল্টে গেল গণিতে, তখনও ভাললাগেনি অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতা। গণিতে বেশিদূর এগোবেন না ভেবে এক সময়ে গবেষণা ছেড়ে চাকরি নেয়ার কথাও ভেবেছেন। বিখ্যাত গণিতজ্ঞ পিটার শারনাক তখন তাকে বোঝান, ওর মধ্যে কী প্রতিভা লুকিয়ে আছে। গণিতের বহুধা-বিভক্ত গবেষণায় অক্ষয়ের প্রিয় বিষয়, ‘নম্বর থিয়োরি।’ ১, ২, ৩ ইত্যাদি সংখ্যার নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ কিংবা অন্বেষণ। এ বিষয়ে বিখ্যাত এক ধাঁধার নাম ‘রিম্যান হাইপোথিসিস।’ মৌলিক সংখ্যা (২, ৩, ৫, ৭ ইত্যাদি) বিষয়ে। যে ধাঁধার সমাধানে ঘোষিত হয়েছে ১০ লাখ ডলার পুরস্কার। না, অক্ষয় এখনও সল্ভ করেননি সেই পাজল। তবে, অনেকের অনুমান, ওর প্রদর্শিত পথেই মিলবে সেই সমাধান। ডিপ্রজন্ম ডেস্ক সূত্র : আনন্দবাজার
×