ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কখনও দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি দেখতে ‘সেইন্ট মার্টিন’, আবার কখনও শুধু গোসল করতে কোন ঝর্নায়, মশালের আলোয় তাঁবু পেতে কোন ঝর্নার পাশে শুয়ে থেকে কাটিয়ে দেয়া পুরো একটি রাত, আবার সারা রাত জেগে অপেক্ষা পাহাড়ের ভোর দেখার প্রতীক্ষায়- খুব সহজেই এমন কিছু অভিজ্ঞতার মুখ

ভ্রমণ আয়োজনে চার তরুণের ‘বৃত্ত’

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ১৪ আগস্ট ২০১৮

 ভ্রমণ আয়োজনে চার তরুণের ‘বৃত্ত’

‘গোল এই পৃথিবীতে ঘুরতে ঘুরতে একদিন না একদিন সবার সঙ্গে দেখা হবেই’... এই মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে ২০১৬ সালের ১২ আগস্ট যাত্রা শুরু করি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বৃত্ত’ নাম নিয়ে আমরা ৪ জন ভ্রমণপিপাসু। ডাঃ জিয়ন, শাওন, আসলাম ও জুবায়রা এই ৪ জন ছিলাম শুরুর মূল কারিগর। আর সঙ্গে জয়, ইতি, সাইমুন, ইমরান, সাব্বির ও সৌরভের মতো সুদক্ষ হেল্পিং হ্যান্ড যাঁদের কারণে আমাদের বিভিন্ন ট্যুরগুলো হয়ে উঠল আরও প্রাণবন্ত। রূপের রানী আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে হাজারো সৌন্দর্য যার কিছুটা আবিষ্কৃত, কিন্তু বেশিরভাগটাই লুক্কায়িত। প্রতিনিয়ত তাই এই সৌন্দর্যের পিছনে ছুটে চলেছি আমরা ট্রাভেলার এবং ট্যুরিস্টরা। কখনও মেঘ ছুঁতে বান্দরবানের সুউচ্চ কোন পাহাড়ে অথবা রাঙ্গামাটির মেঘের রাজ্য ‘সাজেক’ এ, কখনও বা গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকতে পাহাড়ের গহীন কোন ঝিরি পথে। কখনো বৈঠা বাইতে সোয়াম্প ফরেস্ট ‘রাতারগুল’, কখনও পেয়ারা বাজার ঘুরে দেখতে ‘স্বরূপকাঠি’। ‘বাঘ’ মামার সঙ্গে দেখা করতে ‘সুন্দরবন’ও যাই আবার শীতের অতিথি পাখি দেখতে আর পূর্ণিমা উপভোগ করতে যাই ‘হাওর’এ। কখনও দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি দেখতে যাই ‘সেইন্ট মার্টিন’, আবার কখনও শুধু গোসল করব বলে যাই কোন ঝর্নায়! মশালের আলোয় তাঁবু পেতে কোন ঝর্নার পাশে শুয়ে থেকে কাটিয়ে দেই পুরো একটি রাত, আবার সারা রাত জেগে থেকে অপেক্ষা করি পাহাড়ের ভোর হবার দেখার প্রতীক্ষায়! ‘বৃত্ত’ নামটি পছন্দ করার পিছনে আমাদের বেশ কিছু লজিক কাজ করেছে। কোথাও না কোথাও ঘুরতে গিয়ে নিজেদের পরিচিত অনেকের সঙ্গেই আমাদের দেখা হয়ে গিয়েছে- এমনটা হরহামেশাই ঘটেছে আমাদের প্রায় সবার ভ্রমণ পথে। তার মানে আমরা ‘ট্র্যাভেলিং ও ট্যুরিজম’ কে কেন্দ্র করে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি যা এমনিতেই একটি বলয় তৈরি করছে আমাদের জীবনে। দেখা গেল হয়তো কোন পাহাড়ি ট্রেইলে হাঁটছেন, হঠাৎ করে আপনার নাম ধরে কেউ একজন ডেকে উঠল; কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো বুকে। নৌকার সামনে গলুই এর উপরে বসে রাতারগুল/স্বরূপকাঠি কিংবা কোন লঞ্চের ছাদে করে চাঁদপুর/সুন্দরবন ঘুরছেন- দেখলেন যে বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য কোন নৌকা/ লঞ্চ থেকে আপনার পরিচিত কোন মুখ আপনার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে, হাত নাড়ছে। এগুলো সব কিছুই ভ্রমণের আনন্দ, ভ্রমণপিপাসী মানুষগুলোর সুন্দর মনের পরিচায়ক! বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক ঘোরাঘুরি করছেন, দেশে-বিদেশে সর্বত্র। কিন্তু অনেকেই প্রোপার প্ল্যানিংয়ের অভাবে আসল মজাটা নিতে পারছেন না। তাই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, প্রকৃতিকে একটু ভিন্নভাবে উপভোগ করার সুযোগ সবাইকে করে দেবার। বাংলাদেশে গতানুগতিক ধারার ট্যুরিজমের বাইরে গিয়ে আমরা বৃত্ত থেকে চেষ্টা করেছি ভিন্নভাবে প্রকৃতিকে উপভোগ করার ট্যুর আয়োজন করতে। যেমন, নাফাখুম ঝর্নার পাশে ক্যাম্পিং, সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং, পাহাড় চূড়ার উপরে পূর্ণিমা রাতে ক্যাম্পিং, কক্সবাজার সমুদ্র পাড়ে মেরিন ড্রাইভে ক্যাম্পিং, পাহাড়ের গহীনে বিভিন্ন ঝর্না খোঁজার উদ্দেশ্যে ট্র্যাকিং বিগত ২ বছরে এই ধরনের এডভেঞ্চারাস এবং ফ্যামিলি ফ্রেন্ডলি ট্যুর মিলিয়ে প্রায় ৭০টির মতো ট্যুর পরিচালনা করেছি দেশ ও বিদেশ মিলিয়ে। এই ধরনের ট্যুরগুলোর কারণে যার কারণে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম ব্যাপকভাবে ভ্রমণের দিকে ঝুঁকছে। তেঁতুলিয়া থেকে সেন্ট মার্টিন, সিলেট থেকে বান্দরবান চেষ্টা করেছি দেশের লুক্কায়িত ও দৃশ্যমান সকল সৌন্দর্যগুলো সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে। শুধু দেশেই নয়, বিদেশের মাটিতে যেমন- ভুটান, মেঘালয়, নেপাল, দার্জিলিংয়ের মতো জনপ্রিয় স্পটে ট্যুর পরিচালনা করেছে বৃত্ত। বৃত্ত ট্র্যাভেল এ্যান্ড ট্যুরিজম ছাড়াও আমাদের রয়েছে একটি রেস্টুরেন্ট যা মোহাম্মদপুর আদাবর থানার পাশে বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটিতে অবস্থিত; নাম ‘ক্যাফে বৃত্ত’ আর রয়েছে মেঘের রাজ্য সাজেকে নিজস্ব রিসোর্ট ‘মেঘপুঞ্জি’। ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ, ভবিষ্যতে দেশের আরও বেশ কিছু জায়গায় ইকো রিসোর্ট করার। আমরা ঘুরবো সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কিন্তু অবশ্যই প্রকৃতিকে নষ্ট করে নয়। ‘Leave No Trace Behind’- এই তত্ত্বে বিশ্বাস করি আমরা। এই প্রকৃতিকে বাঁচতে দিলে, পরিবেশটাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও দেখাতে পারব। প্রোপার ম্যানেজমেন্ট এর স্বার্থে, আমাদের প্রতিটি ট্যুরকে সফল করতে আমরা committed & dedicated. যার ফলাফল বর্তমানে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মেম্বার প্রায় ৩৫০০০ এবং পেইজ ফলোয়ার প্রায় ৬০০০০ এর কাছাকাছি। বর্তমানে ডাঃ জিয়ন, শাওন, জয়, ইতি, সাইমুন, রানা ও রবিন এই ৭ জনের সমন্বয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ট্যুরগুলো পরিচালনা করছি। এছাড়াও অতনু, মাসুদ, বিপু, সাব্বির, ইমরান, রিদওয়ান, মাহমুদ, হারুন, রাসেল, সোহেল ভাই, মৌ, এমি, নাদিয়া, শাম্মি আপুদের মতন অগণিত গুণগ্রাহী যাঁদের কারণে আমরা আরও অনুপ্রেরণা পাই ভাল ট্যুর করার। শুধু ট্যুরের মাঝেই বৃত্ত নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি, মানবিক কার্যক্রম যেমন বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও ওষুধ বিতরণ, পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা; এসকল কাজে বৃত্ত নিজেদের সংযুক্ত করেছে শুরু থেকেই। আমরা কোন অলাভজনক গ্রুপ বা সংগঠন নই! আমাদের লাভ হলো সকলের সন্তুষ্টি এবং মুখের হাসি। আমরা-আপনারা নিয়েই কিন্তু ‘বৃত্ত’...ঘুরব আমরা বৃত্তে থেকেই কিন্তু সীমানা থাকবে বৃত্তেরও বাইরে! হ্যাপি ট্র্যাভেলিং...বি ট্র্যাভেলার উইথ বৃত্ত
×