ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীনে ডাকটিকিটে শুকরের ছবি ॥ তোলপাড়

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ১৪ আগস্ট ২০১৮

চীনে ডাকটিকিটে শুকরের ছবি ॥  তোলপাড়

অনলাইন ডেস্ক ॥ শুকরের ছবি সম্বলিত স্মারক ডাকটিকিটে অবমুক্ত করাকে কেন্দ্র করে চীনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালকে ইয়ার অব পিগ ঘোষণা করে দেশটির সরকার এই ডাকটিকিট অবমুক্ত করে। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। খবর বিবিসির। ঘটনার শুরু গত সপ্তাহের শুরুতে, এক শুকর দম্পতির সঙ্গে তিনটি শুকর ছানার ছবি সম্বলিত একটি ডাক টিকেট অবমুক্ত করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দেশটির সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, সরকার পরিবার পরিকল্পনার কড়াকড়ি তুলে নিতে যাচ্ছে? আপাত দৃষ্টিতে নীতি বদলানোর কোন আভাস সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বলছেন, দুই বছর আগে যখন সরকার এক-সন্তান নীতি বিলুপ্ত করে, চীন ইয়ার অব মাঙ্কি উদযাপন উপলক্ষে ডাকটিকেট অবমুক্ত করে, যাতে দুটি বানর শিশুর ছবি দেখা যায়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন সরকার দম্পতিদের একের বেশি সন্তান নেবার জন্য খুব উৎসাহ দিচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর রেয়াত দেয়া এবং শিক্ষা ও বাসস্থান তৈরির জন্য ভর্তুকি দেয়াসহ বাসিন্দাদের নানাভাবে উৎকোচ উপঢৌকন দিচ্ছে। আর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও বলা হচ্ছে, পরিবর্তন আসন্ন। সম্প্রতি চায়না টাইমস পত্রিকা এক সম্পাদকীয়তে বলছে, দুই সন্তান নীতি দেশটির সন্তান-জন্মদানের হারে কোন উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেনি। ১৯৭৯ সালে এক-সন্তান নীতি চালু করেছিল চীন, এবং ২০১৫ সালে সে নীতি রদ করা হয়। এক-সন্তান নীতির লক্ষ্য ছিল চীনে জন্মহার কমানো এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনা। কিন্তু পরের দিকে চীনে এই নীতি পরিবর্তনের জন্য চাপ তৈরি হচ্ছিল। এক-সন্তান নীতি বাতিলের পর নতুন ডাকটিকেট ছাপনো হয়েছিলো বিশেষ করে যেভাবে চীনের জনসংখ্যায় তরুণদের তুলনায় প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে তা নিয়ে। এই নীতির কারণে চীনে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছিল। ধারণা করা হয়, চীনের এক সন্তান নীতির কারণে দেশটিতে অন্তত ৪০ কোটি জন্ম নিরোধ করা গেছে। এক-সন্তান নীতি সফল করতে দেশটির কম্যুনিস্ট সরকার অনেক কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিল। যেসব দম্পতি এই এক সন্তান নীতি লঙ্ঘন করেছেন, তাদের জন্য জরিমানা থেকে শুরু করে কর্মচ্যুতি এমনকি জোর করে গর্ভপাত ঘটানোর মত কঠোর সাজার বিধান ছিল। কিন্তু দুই সন্তান নীতিও কাজ করছে না, কারণ অনেকের জন্য একটি সন্তান লালন-পালন করাই মুশকিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বলছেন, ১৯৮০ সালের ডাকটিকেটে একা একটি বাদরকে দেখা গিয়েছিলো। কিন্তু ২০১৬ সালে আবার আরেক ডাকটিকেটে দেখা যায়, মা বাদর দুটি সন্তান নিয়ে আছে। এটি অবমুক্ত হয়েছিল এক-সন্তান নীতি বিলুপ্ত হবার কিছুদিন পরেই। চীনের শ্রম বাজার থেকে প্রতি বছর আড়াই কোটি লোক অবসর নিচ্ছেন, এবং তাদের এক ধরণের সামাজিক সুরক্ষা দিতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে। ২০৫০ সাল নাগাদ দেশটির এক চতুর্থাংশের বেশি মানুষের বয়স হবে ৬৫ বছরের বেশি। আর দেশটির মানুষের প্রজনন ক্ষমতা বিশ্বের সবচেয়ে নিম্নতম দেশগুলোর একটি। সেই সঙ্গে দেশটিতে জেন্ডার সমতার অবস্থা খুবই খারাপ। কারণ এক-সন্তান নীতির সময় ছেলে সন্তান না হলে গর্ভপাত করানো এবং মেয়ে শিশুহত্যার কারণে এই ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু দেশটিতে এই মুহূর্তে সরকারের এই উদ্যোগের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এই মুহূর্তে দারিদ্রের কারণে তরুণদের একটি বড় অংশ সন্তান গ্রহণের ব্যপারেই আগ্রহী নয়। তবে, তিনটি শুকর ছানার ডাকটিকেট নিয়ে যে জল্পনা আর কল্পনা, সেটি কিন্তু চীনে এই প্রথম নয়। এর আগে সর্বশেষ ইয়ার অব পিগ ছিল ২০০৭ সালে, সেসময় একটি ডাকটিকেট ছাড়া হয়েছিল যেখানে পাঁচটি শুকরছানা ছিল। কিন্তু দেশটির অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, একটি স্বাধীন জন্মনীতি হয়ত শিগিরই ঘোষণা করবে চীন সরকার।
×