ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মৃত্যুর মুখেও পিছু হটিনি ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৫ আগস্ট ২০১৮

 মৃত্যুর মুখেও  পিছু হটিনি ॥  প্রধানমন্ত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি জানি, আমার চলার পথ কখনই খুব সহজ নয়। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু পিছিয়ে যাইনি। পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করিনি। মঙ্গলবার বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফেনীর ফতেহপুর ওভারপাস ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ২৩টি সেতু উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সব সময় একটা জিনিস মনে হয়। এ দেশের মানুষের সুখ সুবিধার জন্য যদি একটু ছোট কাজও করতে পারি তাহলে আমার আব্বার আত্মা তো অন্তত শান্তি পাবে। নিশ্চয়ই তিনি একটু স্বস্তি পাবেন। এটা আমার উপলব্ধি।’ শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা সড়ক এবং সংযোগ সেতুগুলো করতে পারছি। এর ফলে আজকে শুধু বাংলাদেশ না, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটা দ্বার উন্মোচিত হলো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চারলেনে উন্নতি করার কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এর ফলে ঈদযাত্রায় অনেকটা যানজটমুক্ত ভ্রমণের সুবিধা পাবেন উত্তরবঙ্গসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ। ২০১৬ সালে শুরু হয় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। এ প্রকল্পের আওতায় উপআঞ্চলিক যোগাযোগ তৈরি করা হচ্ছে। এ উন্নয়নের ছোঁয়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পাবে। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে যতগুলো কাজ হচ্ছে (সড়ক-মহাসড়ক) তার পাশে আলাদা লেন করা হচ্ছে। সেগুলোতে স্থানীয় যানবাহন চলবে। যাতে ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়নের যোগাযোগ করা যায়। যোগাযোগ যাতে আরও উন্নত করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যমুনা-বঙ্গবন্ধু সেতু করার সময় আমরা পাশে রিক্সা-ভ্যান বা ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য লেন করেছিলাম। এসব রাস্তা করতে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনীর ৩৪ ও ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এবং কম খরচে এসব কাজ করেছে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলামসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও চিত্র তুলে ধরেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান। ২৩ সেতু ও রেলওয়ে ওভারপাস উদ্বোধন ॥ এদিকে বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে এগিয়ে নিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করতে তিনি অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর গণভবণের বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর যাত্রা কখনও সহজ ছিল না। কারণ তাকে বারবার মৃত্যুর হুমকির মুখোমুখি হতে হয়েছে। ১৫ আগস্ট কাল রাতের প্রাক্কালে আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু আমি কখনও পিছিয়ে যাইনি। যদিও আমি আমার সকল প্রিয়জনকে হারানোর বিরাট বেদনা নিয়ে বাস করছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু পরাজিত শক্তিও বসে থাকেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একটি অগ্রসরমান জাতির ওপর তারা চূড়ান্তভাবে আঘাত করে। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তাঁদের তিন ছেলে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে হত্যা করে যাতে তাঁর রক্তের উত্তরাধিকারী কেউ ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে না পারে এবং বাংলাদেশের জনগণ কোন নেতৃত্বের অধীনে কখনও একতাবদ্ধ হতে না পারে। সাউথ এশিয়া সাব-রেজিওনাল কো-অপারেশনের (সাসেক) অংশ হিসেবে জয়পুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা হাইওয়ের (এন-৪) বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ২৩টি সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফেনী জেলার ফতেহপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কে রেলওয়ের ওভারপাসও উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, এসব সেতু কেবল বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই নিশ্চিত করবে না, জাতির পিতার স্বপ্নের আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও নতুন যুগের সূচনা করবে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে একটি প্রেজেনটেশন প্রদান করেন। মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এখন থেকে স্থানীয় পরিবহন ও জনসাধারণের চলাচলের জন্য দুটি অতিরিক্ত সার্ভিস রোড রেখে চার লেন বিশিষ্ট মহাসড়ক নির্মাণ করছে। এসব সড়ক দুর্ঘটনা কমাবে এবং স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলও নির্বিঘœ থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে প্রয়োজন সেখানে আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, জয়পুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা হাইওয়ের ওপরে নির্মিত সেতুগুলো ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাবে এবং রেলওয়ের ওভারপাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রা সহজ করবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ জয়পুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা হাইওয়ের ওপর ৩০৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এই ২৩টি সেতু নির্মাণ করেছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৬৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে ফতেহপুরে ৮৬ দশমিক ৭৯ মিটার দীর্ঘ রেলওয়ে ওভারপাসটি নির্মাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ও অন্যান্য প্রধান নগরীগুলোর মধ্যে দ্রুতগামী ট্রেন চালু করার জন্য তাঁর সরকারের পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করতে ঢাকায় এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।
×