ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. এম এ মাননান

১৫ আগস্ট ॥ এক অশুভ চক্রান্তের দিন

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ১৫ আগস্ট ২০১৮

১৫ আগস্ট ॥ এক অশুভ চক্রান্তের দিন

রাতটা ছিল টেনশনের। রাত পোহালেই যেতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্রে। সেখানে আসবেন জাতির পিতা যাকে সামনা-সামনি দেখেছি মাত্র দুবার, একবার একাত্তরের সাতই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে যেদিন তিনি দিয়েছিলেন সেই ঐতিহাসিক ভাষণ যা সাতকোটি বাঙালীকে অনাগত মুক্তিযুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করেছিল। আর দ্বিতীয় বার দেখেছি একই স্থানে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি যখন তিনি ফিরলেন শাসক-জল্লাদদের কারাগার থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের জনক হিসেবে। আগে দেখেছি তাঁকে পরাধীন দেশে। এই প্রথম স্বাধীন দেশে দেখতে পারব একদম কাছে থেকে এমন একজন মহান ব্যক্তিকে হিমালয়সম যার শৌর্যবীর্য, ব্যক্তিত্ব আর সাহসের উচ্চতা। দিনটি ১৫ আগস্ট ১৯৭৫। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক। আমাদের সকল শিক্ষককে বলে দেয়া হয়েছে সে দিন ৯টার আগেই ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্রে পৌঁছে যেতে। বঙ্গবন্ধু আসবেন, আসবেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে, যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাকিস্তানের শোষক সরকার তাঁকে বহিষ্কার করেছিল আন্দোলন করার কারণে। গুঞ্জন ছিল, সম্ভবত বিশেষ মর্যাদায় অভিষিক্ত করার উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের ’জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে ঘোষণা দিবেন তিনি, ঠিক মেলবোর্নের অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আদলে। আমরা তরুণ শিক্ষকরাতো শুনে খুবই উচ্ছ্বসিত। প্রবীণরা তো আরও বেশি। বুকের মধ্যখানে এসব উত্তেজনা-শিহরণ নিয়ে ঘুমাতে গেলাম রাত বারোটার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের একটু পূর্বে পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায়। ঘুম ভাঙ্গলো ভোরের দিকে, স্বাভাবিক নিয়মে নয়, হঠাৎ মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজে। মাত্র সাড়ে চার বছর আগে একাত্তরের নয় মাস এমন গোলাগুলির আওয়াজে আমরা ছিলাম অভ্যস্ত। তাই ভাবলাম, হয়তো প্রশিক্ষণ হচ্ছে ঝিকাতলার ওদিকে পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টারে। আওয়াজটা আসছিল ওদিক থেকেই। গোলাগুলির আওয়াজ থামছিল না দেখে রাস্তায় গিয়ে উঠলাম। দেখি লোকজন ছুটছে দলে দলে পশ্চিম দিকে শুক্রাবাদের দিকে। সবার চোখেমুখে অজানা আশঙ্কা। কোথাও কিছু একটা হয়েছে। আমিও ঔৎসুক্য নিয়ে তাদের সঙ্গে হাঁটা শুরু করলাম। শুক্রাবাদের রাস্তার মাথায় গিয়েই দেখি মিরপুর রোডে ধানমন্ডি লেকের পাশে ৩২ নম্বর রোডের মাথায় অনেকগুলো সৈন্যবাহী ট্যাঙ্ক আর আতঙ্কিত মানুষজন এদিক ওদিক উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কী ঘটেছে বুঝার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণ পরই পেছন থেকে একজন এসে বলল, রেডিওতে খবর দিচ্ছে বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছেন, সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এটুকু বুঝলাম, বাংলাদেশের সব আশা-ভরসার সূর্য অন্ধকার গুহায় ডুবে গেল। পরে জেনেছি, সেদিন বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ও তাঁদের তিন পুত্র, দুই পুত্রবধূসহ পরিবারের মোট ১৬ জনকে বর্বর ঘাতকরা নির্মমভাবে হত্যা করে। ৩২ নম্বর রোডের নিজস্ব ভবনের সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়েছিলেন সেদিন হিমালয়ের মতো উঁচুশির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী যাকে প্রায় সতের বছরের জেল-জীবন একটুও দমাতে পারেনি আর পাকিস্তানী শাসকদের নির্যাতন, ষড়যন্ত্র, মামলা-হামলা কোন কিছুই যাকে এক চুলও নড়াতে পারেনি তার অবস্থান থেকে। সেদিন যা ঘটেছিল তা নিয়ে সামরিক শাসকরা তৈরি করেছিল বিকৃত ইতিহাস। সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে তারা প্রচার করেছে, সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী/উচ্চাভিলাষী উচ্ছৃঙ্খল সদস্য হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। প্রকৃত ঘটনা হলো, দেশীয় স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত দেশটির সঙ্গে মিলে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতাকে সপরিবারে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। ষড়যন্ত্র ছিল অনেক গভীরে। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে হত্যা করতে চেয়েছিল বাংলাদেশকে আর বাঙালীত্বকে। ভাগ্যক্রমে তাঁর দুই কন্যা বিদেশে অবস্থান করার কারণে বেঁচে যান। ১৫ আগস্টের এই বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে শান্ত-শিষ্ট বাঙালীর এদেশে শুরু হয় হত্যা-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ঘৃণ্য রাজনীতি। এমন একজন মহামানবকে তারা দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিল যিনি ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ১৪ আগস্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত সময়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের সাত কোটি মানুষকে বাঁচানোর জন্য অনেকগুলো অভাবনীয় পদক্ষেপ নিয়ে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি যখন তিনি সৃষ্টির পতাকা উড্ডীন করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন এসব সহ্য হচ্ছিল না স্বাধীনতা-বিরোধী যড়যন্ত্রকারীদের। নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত কোন দেশেই স্বাধীনতার পর পর এতো অল্প সময়ে এতো বেশি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত হয়নি। তিনি কী না করেছিলেন এদেশের জন্য? বাহাত্তরের ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকেই শুরু হয় তার বিচক্ষণতায় ভরপুর রাজনৈতিক-কূটনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রচেষ্টা। ২৪ দিনের মাথায় তিনি ভারতের লৌহমানবী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে ১২ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ ভূ-খ- থেকে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সৈন্য ফিরিয়ে নিতে সম্মত করান যা বিশ্ব ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত। সাতচল্লিশ দিনের মাথায় সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) গিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে ডুবে যাওয়া জাহাজ ও পাকিস্তানী সৈন্যদের লুকিয়ে রাখা মাইন অপসারণে সে দেশের সাহায্য নিশ্চিত করেন। তাঁর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগের কারণে পরাজয়ের গ্লানিতে ডুবে থাকা পাকিস্তান ১৯৭৪-এর ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। তারই একক প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে একই বছর ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ নবীন বাংলাদেশকে সদস্যভুক্ত করে নেয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক দেশের স্বীকৃতি আদায়সহ খুব অল্প সময়ে দেশের ভেতরে অনেক কিছু করেছেন তিনি তার কৌশলিক নেতৃত্বের মাধ্যমে। মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণট্রাস্ট গঠন, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, ১১ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন, ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন, ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্রিজ-কালভার্ট-রাস্তাঘাট-রেলপথ মেরামত করে ব্যবহারের উপযোগীকরণ, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন, সকল প্রাইমারি স্কুলে বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবরাহ, এগার হাজার প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা, চল্লিশ হাজার বেসরকারী প্রাইমারি স্কুল সরকারীকরণ, ব্যাংক-বীমাসহ পাকিস্তানীদের পরিত্যক্ত ৫৮০টি শিল্পকারখানা জাতীয়করণ, বন্ধ কলকারখানা চালু করে কর্মহীন মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণ, রেসকোর্স ময়দানে ঘোড়দৌড়-এর নামে জুয়ার বিস্তার আর হোটেল-ক্লাবে মদ্যপানসহ ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ নিষিদ্ধকরণ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, এক বছরের মাথায় জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান, অর্থনৈতিক নীতিমালাকে ঢেলে সাজিয়ে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ, দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী গ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতি দমনসহ সকল সেক্টরে উৎপাদন বৃদ্ধি, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং আরও অনেক কিছু। ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই তাঁরই কন্যার হাতে যাত্রা শুরু হওয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের প্রথম উদ্যোক্তাও তিনি। তাঁর অবিশ্রান্ত উদ্যোগের ফলে দেশ যখন দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই কুচক্রীরা তাদের ছোবলটি মারে বাংলার বুকে, ঠিক হৃৎপিন্ডে মধ্যখানে। তারপর শুরু হয় দেশটিকে পেছনে টেনে নিয়ে যাওয়ার অভিযান। রাজনীতি-অজ্ঞ ব্যক্তিরা সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন দেশটাকে টানতে থাকে শূন্যের দিকে। শুরু হয় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পাক-আমলের প্রতিক্রিয়াশীল ধারায় দেশটাকে ফিরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা। স্বাধীনতার পরম শত্রু রাজাকার-আলবদর বাহিনীর হোতারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গাড়িতে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়িয়ে এর মর্যাদাকে করে ভূ-লুণ্ঠিত। অভ্যুত্থানের পর অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীতে সৃষ্টি হয় অস্থির অবস্থা, খাল খনন আর ছাগল প্রকল্পের নামে দেশটাকে পরিণত করা হয় হাস্যকর রাষ্ট্রে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে করে দেয়া হয় অকার্যকর, শুরু হয় শিক্ষাঙ্গণে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মেধাবী ছাত্রদের হাতে তুলে দেয়া হয় বইয়ের বদলে মারণাস্ত্র, সেশনজটের কবলে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তুলে দেয়া হয় মাস্তানদের হাতে, শিক্ষানীতির অভাবে আর মিস্ম্যানেজমেন্টের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় নেমে আসে ধস, আর উন্নয়নের নামে শুরু হয় অর্থনৈতিক অরাজকতা যার ফলশ্রুতিতে দেশবাসী দেখেছে বিদ্যুতের পরিবর্তে শুধু খাম্বা। গণতন্ত্রকে ঊর্দির ভেতরে বন্দী করে পরে ছেড়ে দেয়ার অভিনয় করা হয়েছে সেনানিবাসের ভেতরে দলছুটদের নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে। এতো ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশটাতে তারা কত যে ভেল্কিবাজি দেখিয়েছে দুই যুগ ধরে। ১৫ আগস্ট এলেই এসব দুঃখস্মৃতি ভেসে ওঠে মনের আয়নায় প্রতিটি বছর। দেশের মানুষ মনের ভেতর কষ্টের পাহাড় জিইয়ে রেখে পালন করে জাতীয় শোক দিবস, হৃদয় নিংড়ে ঢেলে দেয় বিনম্র শ্রদ্ধা জাতির পিতার চরণে। অজান্তেই মনের বীণায় অনুরণিত হয়: ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেতো বঙ্গবন্ধু মরে নাই, যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই, তবে বিশ্ব পেতো এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।’ মুছতে পারেনি তারা বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে। বরং ইতিহাস আরও বেশি বাঙ্গময় হয়ে উঠেছে। এক মুজিব শহীদ হয়েছেন কিন্তু বাংলার হাজারো মুজিবের বুকে লুকিয়ে আছে অমর সেই এক মুজিব। জবাব যাদের জানা আছে তাদের জন্য কয়েকটি প্রশ্ন রেখে এ লেখাটি শেষ করতে চাই: জাতির পিতার সরাসরি হত্যাকান্ডে জড়িত কয়েক জনকে চিহ্নিত করার পর বিচার করা হয়েছে বটে, কিন্তু পর্দার পেছনে থেকে যারা দাবার ঘুঁটির চাল দিয়েছে তাদেরকে আজো চিহ্নিত করে তালিকা প্রকাশসহ বিচার করা হচ্ছে না কেন? বিদেশে পলাতক স্বঘোষিত খুনিদের ছয় জনকে দেশে এনে আদালতের রায় কার্যকর করা হচ্ছে না কেন? জাতির পিতার হত্যাকান্ডের যারা সরাসরি বেনিফিসিয়ারি তাদের বিষয়ে মৌনতা অবলম্বন করা হচ্ছে কেন? বঙ্গবন্ধুর শহীদ হওয়ার পর স্বঘোষিত খুনিদের বিচারের জন্য ৩৪ বছর লাগানো হলো কেন এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এ বিলম্ব ঘটিয়েছে তাদের বিচার করবে কারা? ১২ জন খুনির মৃত্যুদ- বহাল রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও ২০০২-২০০৬ পর্যন্ত সময়ে মামলাটি আদালতের কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল যারা তারা কারা? বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্নভাবে হেয় করাসহ তার রাজনৈতিক অবদানকে ম্লান করার জন্য যারা এখনও তৎপর, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? যারা বিদেশে স্বনির্বাসনে গিয়ে জাতির পিতার গায়ে কালিমালেপনের অপচেষ্টায় লিপ্ত, তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় না কেন? যারা ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার পর হত্যাকারীদের বাঁচানোর অপকৌশল হিসেবে ’দায়মুক্তি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল, সংবিধানে সংশোধনী এনে কুখ্যাত এ কালো আইনটিকে সংবিধানে যুক্ত করে সংবিধানের পবিত্রতা নষ্ট করেছিল, বঙ্গবন্ধুুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল এবং সর্বোপরি, গণতন্ত্রকে হত্যা করে জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, তাদের বিচার কেন করা হয়নি আজো? দেশকে পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে বাঙালী জাতীয়তাবাদ ধ্বংসের চক্রান্ত কয়েক যুগ ধরেই চলছে; আর কতকাল ধরে চলবে? ওদের থামানোর সময় কি এখনও আসেনি? পাঠক, প্রশ্নগুলো জবাব পাওয়ার জন্য নয়, এগুলো সংশ্লিষ্টদের চিত্তে আঘাত করে তাদের চৈতন্যকে নাড়া দেয়ার জন্য। ভুলে যাওয়া চলবে না যে, এ মহান ব্যক্তির জন্যই আজ আমরা আপন ভুবনে স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বিচরণ করছি, আপন ভাষায় কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করছি, নির্ভয়ে চলাচল করছি, বাকস্বাধীনতা ভোগ করছি, নিজের সম্পদ নিজেরাই পরিচালনা করছি আর নিজের মতো করে দেশটাকে গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছি। প্রশ্নের পিঠে জবাব রেখে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে স্বাধীনতার রূপকারকে হত্যার মাধ্যমে ‘বেঈমান’ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে অঙ্কিত কলঙ্ক থেকে বাঙালী জাতিকে বের করে আনতেই হবে যে কোন মূল্যে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম ও আদর্শের আলোকে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন হোক প্রত্যেকটি জাতীয় শোক দিবসের অঙ্গীকার।
×