ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতির পিতার সমাধি

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ১৫ আগস্ট ২০১৮

 জাতির পিতার সমাধি

এখানে শান্তিতে সমাহিত চিরনিদ্রায় কৃষ্ণচূড়ার নিবিড় ছায়ার নিচে আমাদের পিতা-নিপীড়িত মানুষের মহান ত্রাতা, এখানে ঘুমায় চির বিশ্রামে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা- সত্যের বাহক-ধরিত্রী মায়ের জঠরে। এখানে ঘুমায় সাদা মারবেল পাথরের ছাদের নিচে এক বিপ্লবী, এক মহান কবি, যে কখনও আর জাগবে না, কখনও আর গর্জে উঠবেনা লাখো-কোটি মরুসিংহের মতো- ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’ এখানে ঘুমায় নির্বাক একটি যুগ, সংগ্রামের এক অনন্য ইতিহাস মুক্তিকামী কোটি জনতার বুকের ভেতর, যাদের ভালবাসায় আবিষ্ট এক বিরাট স্বপ্ন, তাজা রক্তে রঞ্জিত। এখানে ঘুমায় স্বর্গের মহিমা নিয়ে এক কালজয়ী বীর, যে আমাদের নিয়ে গেছে যুদ্ধে দাসত্বের শেকল ভাঙ্গার জন্য, এখানে আমরা সবাই অসীম কৃতজ্ঞতায় দুদণ্ড থামি প্রতিদিন, মহান স্রষ্টার কাছে দোয়া চাই আমাদের নেতার বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য। ঠিক এখানেই এক দেবশিশু প্রাণ খুলে হেসেছিল বসন্তের ঊষার মতো মায়ের কোলে বসে কোন এক সোনালি রাত্রির শেষে, ঠিক এখানেই এক অস্থির বালক বেড়ে উঠেছিলো মরুসিংহের মতো বুক ভরে নিয়েছিল মাটির গন্ধ, বাতাসের স্বাদ আর সারা গায়ে মেখেছিল ধানক্ষেতের গাঢ় সবুজ, চোখে-মুখে ছিল তার একদিন মাথা তুলে দাঁড়াবার দারুণ এক প্রতিজ্ঞা। ঠিক এখানেই সে প্রথম চোখ তুলে চেয়েছিল বিস্তৃত নির্মেঘ আকাশের দিকে, ঠিক এখানেই সে প্রথম এঁকেছিল লাল এক পতাকা স্বাধীনতার, ঠিক এখানেই সে প্রথম শুনেছিল ক্ষুধার্ত জনতার তীব্র চিৎকার, ঠিক এখানেই সে প্রথম গ্রীষ্মের সূর্যের মতো তেজদিপ্ত দৃষ্টি মেলেছিল, ঠিক এখানেই সে প্রথম গেয়েছিল বিদ্রোহের গান মুক্তির জন্য। কে জানতো একদিন এক আশ্চর্য বালক মানুষের মুক্তি ছিনিয়ে আনবে? কে জানতো একজন শেখ মুজিব সব কালো রাত্রিকে আলোকময় করে তুলবে? কে জানতো একজন জাতির পিতা একদিন এক সোনালি সকাল নিয়ে আসবে? কে জানতো একজন বঙ্গবন্ধু একদিন আমাদের ভয় ভেঙ্গে বিদ্রোহ নিয়ে আসবে? কে জানতো একদিন এক বিদ্রোহী আমাদের মরা নদীতে জোয়ার নিয়ে আসবে? সে আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে, কিন্তু আমরা দিয়েছি তাকে এক নিষ্ঠুর মরণ সে আমাদের একটা পতাকা দিয়েছে, কিন্তু আমরা তাকে দিয়েছি এক ঝাঁক বুলেট সে আমাদের একটা পরিচিতি দিয়েছে, কিন্তু আমার তাকে দিয়েছি নীরব বিদায়। বুকে নিয়ে বোবা শোক আমরা তাকে কবর দিয়েছি ঠিক এখানেই ১৫ আগস্ট, ছিনিয়ে নিয়েছি সেই সুন্দর পৃথিবীকে, যে পৃথিবী সে এনেছিল আমাদের জন্য, ঠিক এখানেই আমরা তাকে সমাহিত করেছি গাছের ছায়ার নিচে অন্ধকারে- ছিল না কোন বিদায় অভিবাদন, শোকগাঁথা অথবা অশ্রুর বন্যা। এখনও আমরা শুনি এক দেবশিশু বাঁশি বাজায় উচ্চৈঃস্বরে সবার প্রাণে স্পন্দন জাগাতে, এখনও আমরা শুনি সেই বজ্রকণ্ঠ আরও এক সংগ্রামের চিরতরে শত্রু নিধনের জন্য, এখনও আমরা শুনি সেই কণ্ঠস্বর রেসকোর্স ময়দানে আমাদের রক্তে রঞ্জিত পতাকার জন্য, এখনও আমরা শুনি সেই ডাক বৈশাখের রক্তলাল সকালের মতো, চেতনায় জাগাতে নব উদ্দীপনা, এখনও আমরা শুনি সেই আহ্বান সকল কমরেডের প্রতি তার তুলে ধরা ব্যানারকে সালাম জানাতে, এখনও আমরা শুনি সেই ডাক জনতার একতার জন্য মৃত্যুর শেকলকে ছিন্নভিন্ন করতে, এখনও আমরা শুনি সেই ডাক যেনো সবাই মিলে আবারো এক হয়ে নিষ্পেষণের সব চিহ্ন উপড়ে ফেলি, এখনও আমরা শুনি সেই ডাক শহীদের কবর ছুঁয়ে যায় দেশের সকল প্রান্তরে।
×