ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই

প্রকাশিত: ০১:৩২, ১৫ আগস্ট ২০১৮

পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানি সামনে রেখে পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই। কোনভাবে দামের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। পেঁয়াজের ঝাঁজে দিশেহারা ভোক্তা। খুচরা বাজারে ভাল মানের প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। আমদানিকৃত বড় সাইজের ভারতীয় পেঁয়াজের দাম সেই তুলনায় কিছুটা কম। প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। এই দামও সাধারণ ভোক্তাদের কাছে অনেক বেশি। পেঁয়াজের পাশাপাশি সব ধরনের মসলার দামও বাড়তির দিকে রয়েছে। উন্নতমানের প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। এছাড়া রসুন ও গরম মসলার বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জানা গেছে, শুধু কোরবানির সময় অতিরিক্ত আড়াই লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকে। কোরবানির মাংস রান্নায় সারাদেশে এই পেঁয়াজের প্রয়োজন হয়। এছাড়া বছরের অন্য যেকোন সময় মাসে দ্ইু থেকে আড়াই লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও আমদানি স্বাভাবিক থাকলে গড়ে ৩৫-৪০ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু গত দুই মাস ধরে একটু একটু করে বেড়ে এখন তা প্রায় দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ার ফলে সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছে, পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ার কারণে এখন বেশি দামেই পেঁয়াজ বিক্রি বিক্রি করতে হচ্ছে। কোরবানির আগে দাম কমার আর কোন সম্ভাবনা নেই। তাদের মতে, বাজারে পেঁয়াজের কোন সঙ্কট নেই কিন্তু দাম দিতে হচ্ছে বেশি। এ কারণে খুচরা বাজারেও পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাপ্তান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মনির জনকণ্ঠকে বলেন, সহসা আর পেঁয়াজের দাম কমছে না। কোরবানি সামনে তাই মাংস রান্নার জন্য সবাই বাড়তি পেঁয়াজ কিনছেন। দাম বেশি হলেও কেনাকাটার কমতির নেই। তিনি বলেন, শ্যামবাজার পাইকারি মার্কেট হতে দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে, আর এ কারণে খুচরায় দাম বেশি। সম্প্রতি ভোগ্যপণ্যের মজুদ, আমদানি ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনা করা হয়। কেন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে এবং এর পেছনে কোন কারসাজি রয়েছে কিনা সে বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, এটা ঠিক দেশে এখন একটু বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, পেঁয়াজের কোন সঙ্কট নেই। তবে এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ভারতে উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। হয়তো এ ধরনের একটি আশঙ্কা থেকে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। তিনি জানান, কোরবানি সামনে রেখে দাম যত বেড়েছে আবার ঈদের পর হয়তো সেভাবেই হ্রাস পাবে। কারণ এটা পচনশীল পণ্য, মজুদ করে রাখার কোন সুযোগ নেই। সরকারী বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ এবং আমদানিকৃতটি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোরবানি সামনে রেখে টিসিবি ডাল ভোজ্যতেল ও চিনিসহ আরও কয়েকটি পণ্য বিক্রি করলেও সেই তালিকায় পেঁয়াজ রাখা হয়নি। ভোক্তারা বলছে, পেঁয়াজ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তাই টিসিবির উচিত, ভর্তুকি দিয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করা। এতে সাধারণ ভোক্তারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। একই সঙ্গে পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজিও বন্ধ হবে। তাই দ্রুত টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রির দাবি রয়েছে তাদের। এদিকে, কোরবানি সামনে রেখে মসলা পাতির দামও উর্ধমুখী। বিশেষ করে আদা, রসুন, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, জিরা হলুদ ও শুকনো মরিচের মতো পণ্যের দামও একটু বেড়েছে। এক্ষেত্রে আদার দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৪০ টাকায়। অথচ গত সপ্তায় এই আদা ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আদার দাম বাড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাওরান বাজারের খুচরা বিক্রেতা খলিল জানান, পাইকারি মার্কেটে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদেরকে বেশি দামে বেচতে হচ্ছে। প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকায়। এছাড়া তেজপাতা ১৪০-১৬০, ধনে ১৩০-১৬০, এলাচ ২২০০-২৪০০, লবঙ্গ ১২০০-১৫০০, দারুচিনি ৩০০-৩৫০, জিরা ৩৮০-৪৬০, হলুদ ১৮০-২১০, শুকনো মরিচ ১৮০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোরবানি সামনে রেখে দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে কাপ্তান বাজারের মসলা ব্যবসায়ী সালাম জানান, এ সময় সব ধরনের মসলার দাম একটু বেড়ে থাকে। তবে কোরবানির পর আবার দাম হ্রাস পাবে। তিনি বলেন, বাড়তি চাহিদার কারণে দাম বেশি হয়ে থাকে।
×