ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাচ্ছে ধরন;###;আরিফ হোসাইন হিয়া

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ ঈদের সেকাল-একাল

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১৬ আগস্ট ২০১৮

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ ঈদের সেকাল-একাল

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো ঈদ। প্রতিবারের মতো আবারও ঈদ আমাদের দরজায়। আর কয়েকদিন পরই ঈদ। ঈদ-উল-আজহা যা আমরা সাধারণ ভাষায় কোরবানির ঈদ বলে থাকি। কোরবানি মানে ত্যাগ যা পশু কোরবানির মাধ্যমে লক্ষ্য করা যায়। তবে এই ত্যাগের পরীক্ষা দিতে হয় মুসলিম ব্যক্তিদের। কেননা এর মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা ব্যক্তির তাকওয়ার পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। কোরবানির পশু ক্রয় করা থেকে শুরু করে মাংস বণ্টন করা পর্যন্ত যে সকল নিয়ম-কানুন আছে তা সঠিকভাবে পালন করা। ছোটকালে ঈদ মানেই ছিল আনন্দের প্রতিশব্দ। বছরের শুরু থেকেই ঈদের জন্য ছিল প্রতীক্ষা। সময়ে সময়ে ঈদের দিনক্ষণ গণনা শুরু। এরপর একটা সময় খুব কাছাকাছি চলে আসত। তখন উত্তেজনা পারদ দীর্ঘ হতে থাকে। আহ্ সেই দিন! যখন ছোট ছিলাম দৈহিক অবয়বে তখন বড়দের মতো নিজের জামা নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো। কার চাইতে কারটা সুন্দর বেশি এ নিয়ে নানা কথাবার্তা চলত। ঈদ মানে সেমাই-পায়েশ এমন একটা কথা জোর প্রচলন ছিল আগে থেকেই এবং এখনও আছে কিন্তু তখন আমাদের খাওয়া-দাওয়ার চাইতে বেশি টানত খেলাধুলায়। আজ থেকে একযুগ আগের কথা মনে পড়লে আমার হাসি পায়। ঈদের নামাজ শেষ করে ঈদগাহ মাঠের পাশের রাস্তায় মার্বেল খেলতাম এবং আমাদের গ্রামে ঈদ-উল-আযহাতে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হতো। টিমগুলো গঠন হতো এভাবে- বিবাহিত বনাম অবিবাহিত, ছোট টিম বনাম বড়টিম, রাস্তার পূর্বপাড়া বনাম পশ্চিমপাড়া। এ ধরনের টিম নিয়ে ঈদের আগে থেকেই নানা ধরনের তর্কবিতর্ক চলত। সত্যিই খুব আনন্দ লাগত। এছাড়াও গ্রামে যাদের বাড়িতে মেহেদি গাছ ছিল সেখান থেকে পাতা সংগ্রহ করে ঈদের আগের দিন রাতে শিল-পাটা দিয়ে মেহেদি বাটতে বসত আর তাকেই ঘিরে বাকিরা বসত। চলত গল্প-গুজব আর হাসি-ঠাট্টা। মেহেদি প্রস্তুত হলে একটি ছোট কাঠি দিয়ে হাতে মেহেদির নক্সা আঁকা হতো। পরে দেখা যেত লাল নক্সা হয়েছে। নিজের চাচাত, ফুফাত ভাই বোনদের সঙ্গে সেই মেহেদি লাগানো কি মধুর ছিল! কিন্তু বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি ও স্যাটেলাইট টিভির প্রভাবে ঈদ উদযাপনের পদ্ধতি পাল্টে গেছে। আগে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ঈদ কার্ড প্রেরণ বেশ জনপ্রিয় ছিল কিন্তু বর্তমানে অফিস ও কর্পোরেট জগতে এর প্রচলন থাকলেও ব্যক্তি পর্যায়ে তেমন একটা নেই। এখন ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হয় ফেসবুক, ভাইবার, টুইটার, মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে। শহর ও গ্রামের মধ্যে ঈদ উদযাপনের কথা বলতে গেলে বিভিন্ন ফারাক দেখা যায়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ঈদের দশ-পনেরো দিন আগে থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। শহরের অধিকাংশ পরিবারই টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখে আনন্দ উদযাপন করে। মানুষের মাঝে আগের যে আন্তরিকতা ছিল তা বর্তমানে লক্ষ্য করা যায় না। সবকিছুতেই মানুষ লাভ-ক্ষতির হিসাব কষে। তবে ঈদ মানে যে আনন্দ এটা উদযাপনের ধরন বদলে যাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×