ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবু আফজাল মোহা. সালেহ

ঈদের আড্ডা চলে ফেসবুকে

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১৬ আগস্ট ২০১৮

ঈদের আড্ডা চলে ফেসবুকে

‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম ... ’ বাউল শাহ আব্দুল করিমের এ গানের একটু সংশোধন করে বলতে পার ‘আগে কী সুন্দর ঈদ কাটাইতাম...’। ধরনে, আয়োজনে ঈদ উৎসবে অনেক পরিবর্তন এসেছে একাল আর সেকালের ঈদে। একটা সময় ছিল যখন ঈদের দিন গ্রামের পাড়ায় পাড়ায়, শহরের মহল্লায় মহল্লায় আড্ডা বসত। ঈদের ছুটিতে এই আড্ডায় মেতে ওঠা ছিল খুব সাধারণ ঘটনা। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মানুষের হাতে হাতে মোবাইল, আইপ্যাড। যোগাযোগ করতে এখন আর কোথাও সশরীরে উপস্থিত হতে হয় না, আড্ডা চলে ফেসবুক, ফোনেই। এ কারণে ঈদ আড্ডার চিরপরিচিত দৃশ্যও এখন আর দেখা যায় না, ঈদ উদযাপনে ঈদ আড্ডার প্রয়োজনীয়তা এখন ফিকে হয়ে গেছে। সেকালের সঙ্গে একালের ঈদের যে পার্থক্য তার মধ্যে অন্যতম এই ঈদ আড্ডার অনুপস্থিতি। ভার্চুয়াল আর ডিজিটালের যুগে ঈদ উৎসব হয়ে গেছে ভার্চুয়াল। শহরে বসবাসকারী পরিবারগুলো অবশ্যম্ভাবীভাবে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যেত যেখানে তাদের পরিজনেরা অপেক্ষা করে আছে। শহরের অফিস-আদালতে কর্মব্যস্ত প্রাপ্তবয়স্করা আর স্কুলের পড়ার চাপে নাভিশ্বাস ওঠা শিশুরা নিশ্বাস নেয়ার সুযোগ পেত আপন ঠিকানার নির্মল পরিবেশে গিয়ে। সে সময় প্রতি গ্রামে ঈদের জামাত হতো না, কয়েক গ্রাম মিলে একটি জামাত হতো। কয়েক গ্রামের লোক একত্রিত হওয়ার সুযোগ পেত ঈদ জামাতকে ঘিরে। এ ছাড়া ঈদ শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ঈদ কার্ড আদান-প্রদানের রীতি ছিল। এখন প্রায় গ্রামেই একাধিক ঈদের জামাত হয়। নিজেদের মধ্যে বন্ধন কমে যাচ্ছে। শুভেচ্ছা বিনিময় আর ঈদ উৎসব আয়োজনে এসেছে বৈচিত্র্য। আনন্দ আর আগের মতো নেই। শুভেচ্ছা বিনিময়ের ক্ষেত্রে মেসেজ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে সারছেন অনেকে। স¤পর্কে কৃত্রিমতা এসে গেছে। অনেকক্ষেত্রে হয়ে গেছে কমার্শিয়াল। একটু কল দিয়ে কথা বলার সময় পাচ্ছি না আমরা। কারণ বন্ধুর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিভিন্ন রকম বন্ধু- শৈশব বন্ধু, ফেবু বন্ধু, স্কুল-কলেজের বন্ধু, কমার্শিয়াল বন্ধু, আড্ডা বন্ধু ইত্যাদি বন্ধু। বন্ধু সংখ্যা বাড়লেও বা অর্থ-প্রাচুর্যে ঈদ উৎসবে ভিন্নমাত্রা আনলেও আনন্দ কিন্তু ফিকে হয়ে যাচ্ছে ক্রমেই। ঈদ উপলক্ষে শহর থেকে গ্রামে গিয়ে আমরা আত্মীয়স্বজন, শৈশব বন্ধুদের সময় কম দিচ্ছি। সে সময় কেড়ে নিচ্ছে ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কোনক্ষেত্রে টিভির সিরিয়াল। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। বিভিন্ন চ্যানেল ও গ্রামের উন্নয়নের জন্য অবাধ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে কিংবা স্বাধীনতা পাচ্ছে শিশুরা। তাই ঈদ উৎসবে বাড়তি আনন্দ পাচ্ছে খুব কম শিশুই। আগে ছিল ঠিক এর উল্টো। আগের শিশুরা, ক্ষেত্রমতে বড়রাও ঈদ বা সামাজিক অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় থাকত। এখন সেটা বিরল হয়ে পড়ছে। ঈদ উৎসবের উপাদানগুলোর মধ্যে বৈচিত্র্য, ভিন্নতা ও নতুনত্ব থাকবে। সময় আসলে বড় ফ্যাক্টর। তবে এগুলো আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আবহমানকালের রীতি-নীতিকে বদলে দিতে পারবে না। ঈদে সবাই নতুন নতুন পোশাক পরবে, সকল ভেদাভেদ ভুলে যাব, সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব- ঈদে আমরা এ প্রত্যাশাই করি। দামুরহুদা, চুয়াডাঙ্গা থেকে
×