ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মেলায় বৃক্ষপ্রেমীদের ভিড়

সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ফল বা ফুল

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ১৬ আগস্ট ২০১৮

সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ফল বা ফুল

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ‘সবুজে বাঁচি, সবুজ বাঁচাই, নগর-প্রাণ-প্রকৃতি সাজাই’ প্রতিপাদ্যে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাণিজ্যমেলার মাঠে চলছে মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা-২০১৮। মেলার বাকি আর মাত্র এক দিন। মাসব্যাপী এই বৃক্ষমেলায় শহুরে উদ্ভিদপিপাসু মানুষসহ পর্যটক ও ক্রেতা সমাগম বেশ ভালই ছিল বলে জানান বিক্রেতারা। গাছ কিনতে ও যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে প্রতিদিন মেলায় ছুটেছেন সব বয়সের মানুষ। বুধবারও এর ব্যতিক্রম ছিল না। বরং এদিন সরকারী ছুটি থাকায় মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতাসহ পর্যটকদের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। পছন্দের গাছ কেনার পাশাপাশি অনেকে আসেন সন্তানদেরকে বিভিন্ন গাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। শেষ সময়ে বেশিরভাগ ক্রেতাই পছন্দসই গাছ কিনতে ঢুঁ মারছেন মেলার বিভিন্ন বৃক্ষ স্টলে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফল বা ফুলের উঁকি-ঝুঁকি দেখে গাছ কেনার লোভ সামলানো দায়! কোন কোন গাছেতো পাতা থেকেও ফল বেশি। ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাত দিনব্যাপী পরিবেশ মেলার সঙ্গে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন। এবারের মেলায় সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার বৃক্ষ নিয়ে স্টল সাজিয়েছে ১০১টি স্টল। ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারি ও বেসরকারী ৫৭টি সংস্থার স্টল রয়েছে ৭৭টি। নন-নার্সারি ৯টি প্রতিষ্ঠানের আছে ৯টি স্টল, যেগুলোতে স্থান পেয়েছে নানা হস্তশিল্প। বাকি দুটি স্টলের মধ্যে একটি মেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও অপরটি তথ্যকেন্দ্র। বিভিন্ন ধরনের দেশী-বিদেশী ফল ও বাহারি ফুলের পাশাপশি বাগান করার বিভিন্ন সরঞ্জাম, ওষুধ ও টবের স্টলও রয়েছে। ফলের মধ্যে রয়েছে ড্রাগন, আমলকী, ডালিম, আনারস, আতা, গাব, নারকেল, জাম্বুরা, কদবেল, পেঁপে, সফেদা, লটকন, কমলা, এ্যাভোকাডো, বরই, করমচা, মাল্টা, পেঁয়ারা, আপেল, বিভিন্ন প্রজাতির আমসহ অসংখ্য গাছের চারা। বুধবার জাতীয় বৃক্ষমেলায় ৩ বছরের ছোট্ট মেয়েটিকে সঙ্গে করে মেলায় ঘুরতে আসেন মিরপুর-১০ নম্বর থেকে এক দম্পতি। তারা জনকণ্ঠকে জানান, ‘মেলার বাকি আর মাত্র ২দিন। সরকারী ছুটি থাকায় ঘুরতে এসেছি। মনে হচ্ছে এটি একটি প্রাকৃতিক উদ্যান। চারপাশে সবুজ আর সবুজ। আমরা প্রকৃতিপ্রেমী। অনেক অপরিচিত গাছ দেখছি। স্টল মালিক ও মালীদের কাছ থেকে এসব গাছ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি।’ তাদের বাসায় অনেক প্রকার গাছ রয়েছে বলেও জানান। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ফলদ, বনজ, ফুল ও ঔষধি গাছের পাশাপাশি এবারের মেলার বাড়তি আকর্ষণ অর্কিড। দেশী গাছের চেয়ে বিদেশী গাছের বিক্রি বেশি বলে জানান বেশ কয়েকজন বিক্রেতা। বরিশাল নার্সারির এক বিক্রেতা জানান, দেশী গাছের চেয়ে বিদেশী গাছের প্রতি মানুষের ঝোঁক বেশি। মেলায় ফলের চেয়ে ফুলের চারার উপস্থিতি বেশি। ফুলের চারার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আগ্রহও অন্য উদ্ভিদের তুলনায় বেশি বলে জানান কাশবন নার্সারির বিক্রেতা সুজন। তবে এবারের মেলায় আর্কষণ সৃষ্টি করেছে পতঙ্গভুক উদ্ভিদ। দেখতে ব্যতিক্রম ও বাড়ির পোকামাকড় দমনে কার্যকর এই উদ্ভিদটি পাওয়া যাচ্ছে ব্র্যাক নার্সারিতে। এছাড়াও মেলার দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে মেলার প্রবেশ দ্বারের কাছেই জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের চমৎকার সাজানো বাগান। আমাজান লিলির ছোট একটি জলাশয়ও তৈরি করেছে তারা, যেটি ঘিরেও প্রকৃতিপ্রেমীদের বেশ আগ্রহ। সেখানে সবাই মেতে উঠছেন সেলফিতে। ১০ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছেন হাবিবা তাবাসসুম। তিনি জানান, একসঙ্গে অনেক গাছের মিলনমেলা এখানে। প্রকৃতির মাঝে বিচরণ করছি এমন অনুভূতি কাজ করছে। মেলা প্রাঙ্গণটি যেন একটি বড়সর বাগানে পরিণত হয়েছে। সন্তানকে বিভিন্ন গাছ চেনাচ্ছি। পাশাপাশি ছাদের বাগানের জন্য শেষ সময়ে এসে গাছ কিনছি। ১৭ আগস্ট পর্যন্ত এই মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্রেতা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকছে।
×