ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন গোলাম সারওয়ার

প্রকাশিত: ০০:৩৪, ১৬ আগস্ট ২০১৮

বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন গোলাম সারওয়ার

অনলাইন রিপোর্টার ॥ শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চলে গেলেন সাংবাদিকতার দিগপাল গোলাম সারওয়ার। আলোর দেশে আঁধার নামিয়ে শায়িত হলেন মহাঘুমের দেশে, যে ঘুম আর কখনই ভাঙবে না সাংবাদিকতার এই বাতিঘরের। রক্তের বন্ধন ছাড়িয়ে আত্মার বন্ধন যে দৃঢ় হয়, আজ তারই হাজারো গল্প মিললো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এদিন বেলা ১১টায় সাংবাদিক গোলাম সারাওয়ারের মরদেহ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আনার পরপরই শোকের ছাঁয়া নেমে আসে। শ্রদ্ধা, ভালোবাসার পরশে পরশে স্মরণ হতে থাকে সাংবাদিকদের এই অভিভাবকের নাম। প্রাণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে শহীদ মিনারে। বিশেষ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিকরা তাদের এই প্রিয় মানুষকে শেষ বিদায় জানাতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে থাকেন। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও সরকারের মন্ত্রীরাও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে শহীদ মিনারে ছুটে আসেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, র্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, বেসরকারি সংগঠন ‘নিজেরা করি’র খুশি কবিরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন গোলাম সারওয়ায়ের মরদেহের প্রতি। শ্রদ্ধা নিবেদন করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শোক মন্তব্যে বলেন, ‘তিনি (গোলাম সারওয়ার) সাংবাদিকতার নক্ষত্র ছিলেন, যার আলোতে আলোকিত হয়েছে দেশের গণমাধ্যম দুনিয়া। দৈনিক যুগান্তরের যখন সম্পাদক ছিলেন, তখন গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে সখ্যতা আমার। কোনো লেখা বা শিরোনাম তার সম্পাদনায়, তা সহজেই বুঝতে পারতাম। তার চলে যাওয়ায় যে ক্ষতি হলো তা কখনই পূরণ হবার নয়।’ সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ১৯৪৩ সালের ১ এপ্রিল বরিশালের বানারিপাড়ায় জন্ম নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ১৯৬২ সালে দৈনিক আজাদী পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। ১৯৬৩ সালে দৈনিক সংবাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে তার পেশাগত জীবন শুরু। রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭৩ সালে যোগদান করেন দৈনিক ইত্তেফাকে। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠা দেন দৈনিক যুগান্তর। এরপর ২০০৫ সালে তার হাতেই প্রতিষ্ঠান পায় দৈনিক সমকাল। এছাড়া খেলা, বিনোদন এবং বিভিন্ন ম্যাগাজিনও সম্পাদনা করেন তিনি। চমকপ্রদ আর আকর্ষণীয় শিরোনাম সৃষ্টিতে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। মুক্তিযুদ্ধ আর অসম্প্রদায়িক চেতনার সঙ্গে আপোস করেননি, জীবনের শেষ বেলাতেও, যার সহস্র প্রমাণ মিলেছে তার দীর্ঘ জীবনের সাংবাদিকতায়। পত্রিকায় দায়িত্বপালনের সুবাধে দায়িত্ব পালন করেছেন আরও বিভিন্ন সংগঠনে। নিষ্ঠা আর একাগ্রতার স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক ছাড়াও অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছেন সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার। বৃহস্পতিবার শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে তিনি (গোলাম সারাওয়ার) ছিলেন তুলনাহীন। জাতির সংকট মুহূর্তেও তিনি তার সাহসী ভূমিকা রেখেছেন লেখনির মাধ্যমে। আজ আসরের নামাজের পর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শায়িত হন তিনি। এর আগে সকাল ৯টায় গোলাম সারওয়ার শেষবারের মতো আসবেন তেজগাঁওয়ে তার প্রিয় কর্মস্থল সমকাল কার্যালয়ে। এরপর সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার পাঁচ দশকের আড্ডাস্থল জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সেখানেই রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবেই অনুষ্ঠিত হয় তার চতুর্থ জানাজা। গত ২৯ জুলাই অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন ৭৫ বছর বয়সী সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। অবস্থার অবনতি ঘটলে গত ৩ আগস্ট সিঙ্গাপুর নেয়া হয় তাকে। গত সোমবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।
×