ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে শিক্ষকের নির্যাতনে দশম শ্রেণীর ছাত্রীর আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৩:০৪, ১৬ আগস্ট ২০১৮

মাদারীপুরে শিক্ষকের নির্যাতনে দশম শ্রেণীর ছাত্রীর আত্মহত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ মাদারীপুর পৌর এলাকার চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নূর হোসেন হাওলাদারের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে সাথী আক্তার (১৫) নামের দশম শ্রেণীর মানবিক শাখার এক ছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনার পর ঐ প্রধান শিক্ষক পালিয়ে গেছেন। শিক্ষকের নির্যাতনে সহপাঠি আত্মহত্যা করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ঐ স্কুলের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর গ্রামের ইকবাল বেপারীর প্রথম পক্ষের মেয়ে সাথী আক্তার তার মামার বাড়ী একই উপজেলার মধ্য পেয়ারপুর গ্রামে থেকে চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করত। গত শনিবার সাথীর সঙ্গে তার দুই সহপাঠির কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনাটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ নূর হোসেন হাওলাদার জানতে পেরে সাথী ও তার বান্ধবীদের ডেকে নিয়ে মারপিট ও গালিগালাজ করে। এ অপমান সইতে না পেরে সাথী ঐদিন স্কুল থেকে মামা বাড়ী ফেরার পথে চরমুগরিয়া থেকে বিষ কিনে নিয়ে যায় এবং ঐদিন সন্ধ্যায় বাড়ির সবার অলক্ষ্যে সে বিষ পান করে। মুমূর্ষূ অবস্থায় মামা বাড়ির লোকজন সাথীকে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সাথীর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরদিন সকালে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ৫দিন পর বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাথী মারা যায়। এ সংবাদ মাদারীপুরের চরমুগরিয়ায় পৌঁছলে স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ সময় তারা চরমুগরিয়া বন্দরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। নিহত সাথীর সহপাঠি রিতু আক্তার ও অন্তরা আক্তার বলেন, ‘ঘটনার দিন সাথীর সঙ্গে দুই বান্ধবীর ঝগড়া হয়। স্যার (প্রধান শিক্ষক) সাথীকে মারধর ও গালাগাল করে রোদের মধ্যে দাঁড় করে রাখায় সে মারাত্মক ভাবে অপমানিত হয়। এই অভিমান সইতে না পেরে সাথী আত্মহত্যা করেছে।’ এ ব্যাপারে সাথীর মামী মুক্তা বেগম বলেন, ‘আমার ভাগ্নীকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মারপিট ও গালিগালাজ করে রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে। আমি এঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’ চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালায় প্রধান শিক্ষক মো. নুর হোসেন হাওলাদার সাথী মারা যাওয়ার পূর্বে সাংবাদিকদের বলেন, সাথী ও আর এক ছাত্রী গালাগালি করায় আমি তাদের দুইজনকেই ডেকে এনে সবার সামনেই শাসন করে ক্লাসে পাঠিয়ে দিই। আর এই ঘটনা দুপুরে হয়েছে। সামান্য এ ঘটনায় সাথী যে ঔষুধ খাবে তা ভাবতে পারিনি। আমি তার চিকিৎসার সকল দায়ভার নিয়েছি।’ তবে সাথী মারা যাওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, নিহত ছাত্রীর পরিবারের লোকজন ও স্কুলের সহপাঠিরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা প্রকৃত অপরাধীকে আটক করার আশ্বাস দিয়েছে। তাছাড়া নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ করে নাই। মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশের একাধিক টিম এলাকা পরিদর্শন করেছে। এখনো মামলা হয় নাই। মামলা হলে আমরা সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
×