ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৭ আগস্ট ২০১৮

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র জিলহজ মাসের ৫ম দিবস। পবিত্র হারামাইন শরিফাইন অর্থাৎ মক্কা এবং মদিনা শরিফ এখন লাখ লাখ হাজির লাব্বায়েক ধ্বনি ও দরুদ সালামের আওয়াজে মুখরিত। আমরাও এখন পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থান করচ্ছি। আর ২/১ দিনের মাথায় পবিত্র হজের মূল অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে। এখানকার সবচেয়ে সহজলভ্য ও প্রিয় পানীয় হলো পবিত্র যমযমের পানি। আরব দেশের ভাষায় একে বলা হয় মুইয়া আল যমযম। পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরিফের ব্যবস্থাপনায় যমযমের পানি বিনামূল্যে এবং অতি সহজে যত্রতত্র নারী পুরুষ সকলের হাতের নাগালে পাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অথচ এ এক দুর্লভ নিয়ামত উম্মতে মুসলিমার জন্য। সৌদি আরব ছাড়া অন্য কোন দেশে এটি বাজারজাত করার সুযোগ নেই। তাই হাজী সাহেবরা হজ করতে আসলে এ পানির দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে। এমনকি যে কোন আহার্য থেকে এ পানিতে নিরাপদ, সুস্থতা ও সাওয়াবের নিয়তে পান করে থাকেন। মক্কা শরিফ মদিনা শরিফ পৌঁছলে কিংবা সেখান থেকে বিদায় হওয়ার পথে প্রথম যে উপহারটি পাওয়া যায় তা হলো যমযম পানীয়। বিভিন্ন দেশের হাজী সাহেবরা সেখানে ভাষা দিয়ে কিছু বুঝাতে পারেন না ঠিকই; কিন্তু হাসি মুখে একে অপরের হাতে তুলে দিচ্ছেন যমযমের গ্লাস, সাহায্য করছেন যমযম দিয়ে জগ ভর্তি করতে। অবশ্য যমযমের পানি দিয়ে এ মেহমানদারি নতুন কিছু নয়। সর্বকালে আরব সর্দাররা এ কাজে ব্রতী ছিলেন। মহানবী (স.)-এর জামানায় তার চাচা হযরত আব্বাসের হাতে আল্লাহর ঘরের মেহমান মুসাফিরদের জন্য এ পানি পান করার নেতৃত্ব ছিল। আমি এবার হজে যাওয়ার সময় আমার আরাফাতী ভাইদের জন্য যে ‘স্মরনিকা’ প্রকাশ করে নিয়ে এসেছি তাতেও আমি বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছি। চলুন সম্মানিত পাঠক আমরা আজ পবিত্র যমযম সম্পর্কে ইসলাম ইতিহাস এবং বিজ্ঞান কি বলে দেখি। ইমাম বদরুদ্দীন বিন সাহেব মিসরী যমযমের পানিকে অন্য পানির সঙ্গে তুলনামূলক ওজন করে দেখিয়েছেন যে, যমযমের পানি অন্য পানির চাইতে এক-চতুর্থাংশ বেশি ভারি। তারপর এর চিকিৎসা শাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে তুলনা করে বলেন, এটি অন্য যে কোন পানির চাইতে সেরা এবং শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকেও তিনি এটাকে অন্য সকল পানির চাইতে সর্বশ্র্রেষ্ঠ দেখতে পেয়েছেন। তার বক্তব্যের পেছনে তিনি নি¤েœাক্ত যুক্তিগুলো তুলে ধরেছেন। ১. আজ থেকে হাজার বছর আগে এই উষর মরুভূমিতে আল্লাহর হুকুমে জীবরাঈল (আঃ) হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর জন্য এই কূপটি বের করেন। ৩. রাসুলুল্লাহ (স.) মদিনায় হিজরত করার পর মক্কা থেকে যমযমের পানি মদিনায় পাঠানোর জন্য বলেছেন। ৪. রাসুলুল্লাহ (স.) এই পানি উদর ভর্তি করে পান করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। ৫. যমযমের পানি খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসা এবং অন্য যে কোন নিয়তে পান করলে আল্লাহ নিয়ত পূরণ করতে পারেন এই মর্মে রসুলুল্লাহ (স.) থেকে একাধিক হাদিস বর্ণিত আছে। ৬. হযরত জীবরাঈল (আঃ) যমযমের পানি দিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর বুক চিরে তা ধুয়েছেন। যাকে আমরা ইতিহাস ও সিরাতের ভাষায় শাক্কে সাদর বলি। ইমাম তকী ফাসী বলেন, যমযমের পানি পান করার মুস্তাহাব পদ্ধতি হচ্ছে: পানি পানকারী কিবলামুখী হয়ে আলাহকে স্মরণ করবে। তিনবার শ্বাস নেবে, পেট ভরে পানি পান করবে, পান শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলবে এবং পানি পান করার সময় হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) যে দোয়া পড়ে ছিলেন সে দোয়া পড়বে। ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) যমযমের পানি পান করার সময় নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেন- “আলাহুম্মা ইন্নি আস্আলুকা ঈলমান্ নাফিয়া ওয়া রিয্কান্ ওয়াসিয়া ওয়া শীফা’আম্ মিন কুলি দা’ইন্।” অর্থাৎ “হে আলাহ! আমি তোমার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিযিক এবং সকল রোগ থেকে আরোগ্য প্রার্থনা করি।”
×