ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদে বাড়ি ফেরা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৭ আগস্ট ২০১৮

ঈদে বাড়ি ফেরা

ঈদ মানে আনন্দ। আর সেই আনন্দে শামিল হতে বাঙালী মুসলমান শহর, নগর, বন্দর, গঞ্জ ছেড়ে শিকড়ের টানে গ্রামে যাবার জন্য আকুলি-বিকুলি করে থাকে। এ এক চিরায়ত দৃশ্য। কিন্তু স্বস্তিতে বাড়ি ফেরা সহজতর নয়। সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে চলাচল মসৃণ হয়ে ওঠে না ঈদপূর্ব যাত্রায়। সবখানে এক বেহাল অবস্থা। মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কোন বিকল্প না থাকলেও সে ব্যবস্থা গ্রহণে তেমন কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে প্রয়োজন আগাম পদক্ষেপ। কিন্তু তেমন উদ্যোগ সব সময় নেয়া হয় না। ঈদের সময় অতিরিক্ত ব্যবসা তথা মুনাফা লাভের আশায় মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা গাড়িগুলো, এমনকি নছিমনও হাইওয়েতে চলাচল করে। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে হাইওয়ে পুলিশকে সক্রিয় রাখা সঙ্গত। সড়ক ক্ষেত্রে বিদ্যমান অব্যবস্থার বিরুদ্ধে সারাদেশে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে এসেছিল। তারা দেখিয়ে দিয়েছে সড়ক পরিবহনে নৈরাজ্য কত ভয়াবহ। কোথাও কোন সঠিক ব্যবস্থাদি নেই। তারপরও পরিস্থিতির পরিবর্তন তেমন ঘটেনি। ঈদে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে প্রধান বিড়ম্বনা শুরু হয় আগাম টিকেট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। ভোগান্তির শুরু এখান থেকেই। টিকেট প্রাপ্তি থেকে শুরু করে ঘরে পৌঁছানো পর্যন্ত পদে পদে বিড়ম্বনা সইতে হয় গ্রামমুখো তথা ঘরমুখো মানুষকে। ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে ট্রেন, বাস ও লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রি নিয়ে চলছে মহা ঝুট ঝামেলা। কালোবাজারে পাওয়া নিয়েও তৈরি হচ্ছে মহাজটিলতা। বাড়ি ফেরার প্রস্তুতিটা শুরু হয় ঈদের ছুটির আগে থেকেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকে বলেই বাড়িমুখো হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। কিন্তু টিকেট মেলে আরও পরে। এবার দু’সপ্তাহ আগে হতে টিকেট বিক্রি শুরু হয় ট্রেনে। কিন্তু দিন কয়েকের মধ্যে টিকেট বেচা শেষ। ভরসা এখন কালোবাজার। লঞ্চ ও বাসের টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। টিকেট পাওয়া যেন সোনার হরিণ লাভ। এক্ষেত্রে যেসব অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে তার নিরসনে কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি কোন উদ্যোগ নেয়নি। যাত্রীরা দুর্ভোগ লাভকে যেন ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়। মূল ভাড়ার দ্বিগুণ, তিনগুণ হলেও টিকেট প্রাপ্তির আনন্দ বুঝি অপরিসীম। ‘টিকেট শেষ’ লটকানো ফলক দেখা এবং পাশে টিকেট কালোবাজারির ফিসফিসিয়ে ‘বাড়তি দাম দিলে পাবেন’ ভাষ্য শোনা চিত্রগুলো পুরনো। এই ডিজিটাল যুগেও এসব দৃশ্যপটের কোন পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যায় না। অনলাইনে টিকেট কেনার স্বাদ ও আনন্দ হতে বঞ্চিত থেকে যেতেই হচ্ছে। কালোবাজারির স্বার্থ সমুন্নত রাখার জন্যই বুঝি অনলাইন ব্যবস্থাকে সচল করা হয় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকেট না পাওয়ার ব্যর্থতায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ে। কিন্তু কিছুই করার নেই। এই চিরায়ত অব্যবস্থা দূরীকরণে যেন কারও কোন দায়ভার নেই। এ একটা সময়, যখন যাত্রীরা জিম্মি হয়ে যায় পরিবহন ব্যবসায়ীদের দাপটের কাছে। কর্তৃপক্ষ তখন থাকেন নির্বিকার। দৃশ্যবিদ্যমান কর্তা ব্যক্তিরা যতই হাঁকডাক দেন প্রতিবছর যে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের কোন কষ্ট হবে না। যানবাহনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, বাড়তি ভাড়া নেয়া হবে নাÑ এসবই বাহুল্যচর্চিত মুখরোচক কথা ছাড়া আর কিছুই নয়। বছরের পর বছর একই পরিস্থিতির ফলে ঈদে ঘরে ফেরার অর্থ দাঁড়ায় একগাদা দুর্ভোগ, কষ্ট আর জীবনের ঝুঁকি। কোরবানির ঈদে সড়কে পশুর হাট বসবে না বলে প্রতিবার ঘোষণা দেয়া হলেও হাটের দৃশ্য বদলায় না। বর্ষা আর বাদলে রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা দেশ জুড়েই। নামমাত্র মেরামত বা সংস্কার করা হয় ঈদ এলে। এসব সড়কে যানবাহন চলাচল মানে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হওয়া। বাসের, ট্রেনের ছাদে যাত্রীদের গাদাগাদি দুর্ঘটনাকেই টেনে আনে। রেলপথ নৌপথের অবস্থাও পূর্ববৎ। তবু মানুষ বাড়ি যেতে চায়, যেতে হয়। দুর্ভোগাক্রান্ত হয়ে যেতে হয় আনন্দ উৎসবে। এসব অব্যবস্থা আর অনিয়ম বুঝি অলৌকিকভাবে ছাড়া সমাধানের কোন পন্থা নেই।
×