ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অকারণে সিজার নয়

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৭ আগস্ট ২০১৮

অকারণে সিজার নয়

মা ও শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যায় জাতিসংঘ নির্দেশিত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জনের কারণে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে প্রশংসিত হলেও অদ্যাবধি কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এর অন্যতম হলো পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব তথা পুষ্টি সমস্যা। জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫)-এর চূড়ান্ত খসড়ায় যে তথ্য উঠে এসেছে, তা হলো দেশের ১৮ শতাংশ গর্ভবতী মা অপুষ্টির শিকার। আর প্রধানত অপুষ্টির কারণে ২৩ শতাংশ শিশু জন্ম নিচ্ছে প্রয়োজনের চেয়ে কম ওজন নিয়ে। আরও যা উদ্বেগজনক তা হলো, শহরের বস্তি ও গ্রামাঞ্চলের মাসহ শিশু পরিচর্যাকারীর ৭৩ শতাংশই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে না। এসবের পেছনে আর্থিক দৈন্যদশা, বাল্যবিয়েসহ নানা কুসংস্কারও বিদ্যমান। সন্তান প্রসবে অকারণে সিজারসহ হাতুড়ে চিকিৎসক তথা দাইয়ের হস্তক্ষেপও কম দায়ী নয় কোন অংশে। অথচ ২০৩০ সাল নাগাদ এমডিজি অর্জন করতে হলে এ সব দূর করতে হবে পর্যায়ক্রমে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দেশে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি এবং তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসাসহ পুরস্কৃত হলেও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে ‘সিজারিয়ান ডেলিভারি’র সংখ্যা। চিকিৎসা বর্তমানে সেবা নয়, নিছক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবার সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৯৪ জন। ২০০১ সালে তা ছিল ৩২২ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রসবের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম স্বাভাবিক অথচ বর্তমানে দেশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসবের হার সরকারীভাবে ২৩ এবং বেসরকারী হিসাবে ৫৫ ভাগ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২০১৫ সালের তথ্য বলছে, হাসপাতালে জন্ম নেয়া প্রতি ১০০ শিশুর ৬০ জন প্রসবিত হয় সিজারের মাধ্যমে। এর মধ্যে ৩৬ বেসরকারী হাসপাতাল এবং ২৪ সরকারী হাসপাতালে জন্ম নেয়। অতঃপর অপ্রয়োজনীয় সিজার প্রসব বন্ধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে যে বয়সে নারীর বিয়েসহ গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটে, তাতে অন্তত অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরাপদ সন্তান প্রসব না হওয়ার কোন কারণ নেই। কিছু ক্ষেত্রে বাল্যবিয়েসহ মায়ের অপুষ্টিজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলেও তা তেমন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেই। তদুপরি বর্তমানে প্রায় প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং প্রত্যন্ত এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব স্থানে মা ও শিশুসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও সেবা পাওয়া সম্ভব। প্রশিক্ষিত নার্স ও ধাত্রীরও তেমন সঙ্কট থাকার কথা নয়। বর্তমান সরকারের অনেক সমুজ্জ্বল সাফল্যের অন্যতম একটি দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক। সম্প্রতি এটি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের মতো সুবৃহৎ বহুজাতিক দাতা সংস্থার। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সার্বিক স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে ‘অসাধারণ ভূমিকা’ রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক। স্বাস্থ্য খাতে অভাবনীয় উন্নতির উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, এটি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে। এর ফলে নবজাতক ও শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, প্রজনন হার নিয়ন্ত্রণসহ ১০টি সূচকে সন্তোষজনক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা এবং পুুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচীর সুবাদে সম্ভব হয়েছে এই অগ্রগতি। এর আওতায় ২০১৪ সাল থেকে দেশে ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এর ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা নেয়ার হার ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) আওতায় ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমানোর জন্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ২০১০ সালে জাতিসংঘের এমডিজি এ্যাওয়ার্ড অর্জনে সক্ষম হয়, যা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করে তুলেছে।
×