শোক ও কান্নার মাস আগস্ট যখন বাঁধভাঙা
অন্ধকার ছড়াতে ছড়াতে বাঙালির অস্তিত্বের
উপকূলে সমুদ্রের মতো হানা দেয় তখন কি
আমরা ঘুমোতে পারি-- ঘুমোনো সম্ভব? -- না, ভাই! না
এ অসম্ভব; কেউ যদি এখন গভীর ঘুমে থাকে
শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখে কোনো রঙিন দিনের কিংবা
সকালে নাস্তার পাতে নানাবিধ সুস্বাদু খাবার
তা সে দেখতে পারে-- যত ইচ্ছে দেখতে থাক, আমি
কিছুতেই বারণ করবো না-- কী করে নিষেধ করি!
যেখানে মহান পিতা এরকম স্বপ্ন দেখেছিল।
যখন পিতার স্বপ্নে ঘাতকেরা রক্ত ঝরিয়েছে
এবং সে স্বপ্নকে আজ সত্যরূপে কঠিন প্রত্যয়ে
পিতারই কন্যার হাত বাস্তবের পোশাক দিয়েছে
সেখানে শোক ও কান্না বুকে আমি কী করে ঘুমাই!
॥ দুই ॥
আগস্ট এমন এক শোকাবহ অভিশপ্ত মাস
যে মাসে পিতার রক্তে ভিজে যায় সন্তানের চোখ;
রক্তের সমুদ্রে ভেসে ভেসে যে সন্তান পাড়ি দেয়
বেদনার ঢেউ ভেঙে অন্তহীন স্বপ্নের উজান;
সে শুধু সন্তান নয় এই প্রিয় দেশ জননীর--
তার হাতে ওড়ে অই রক্তমাখা জাতীয় পতাকা,
যে পতাকা তৈরি হলো ধর্ষিতার বুকের আঁচলে;
সুতোর আকাশ ধরে সে পতাকা হাওয়াকে নাচায়।
আগস্ট যখন আসে বেদনার দহন ক্রিয়ায়
তখন বুকের নিচে বহমান এক রক্ত নদী
অবিরল বহে যায় অবিনাশী কবরমহলে;
যে মহলে জনকের স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নেই :
যে বৃষ্টি মেঘের চোখে জমা হয় খরার কৃপায়
সে নামে আমার বুকে আগস্টের এতিম প্রহরে।
॥ তিন ॥
আগস্টে আমরা কাঁদি নিয়তির এটাই বিধান;
মানব মহিমা আর মণীষার গান গাইতে গাইতে
আমাদের কান্নাগুলো চাপা থাকে পাথরের নিচে
বছরের অন্য সব মাসে; ছাই চাপা আগুনের
কান্নার ভেতরে যন্ত্রণার নানারঙা পাখি ওড়ে;
যখন চাঁদের মুখে চোখ পড়ে মনে হয়, আহা!
বাঙালির সব শিশু রাসেলের মতো শুয়ে আছে
বাবার আকাশসম বক্ষ জুড়ে পরম নিশ্চিন্তে
সে রাতেও হয়তো বা রাসেল এভাবে শুয়েছিল।
যখন শিশুরা আঙিনায় খেলা করে, সাইকেল
চালিয়ে স্বপ্নের চাকা ঘুরাতে ঘুরাতে হাসতে থাকে
মনে হয় এ বাংলার সব শিশু পিতার রাসেল।
রাসেল রাসেল বলে কাঁদে আজ জীবন দেবতা :
আর কোন রাসেলের রক্তে যেন মায়ের আঁচল
ভিজিয়ে ঘাতক খুনি দূর দেশে পালাতে পারে না।