বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান ধারায় নিরন্তর সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত দশ বছরের সাফল্য প্রবৃদ্ধির বিভিন্ন সূচকে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে, যা বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারেও পৌঁছে দিয়েছে। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ সমৃদ্ধি আন্তর্জাতিক সীমানাকেও স্পর্শ করেছে। উন্নয়নশীল কাঠামোর যে নির্ধারিত মাত্রা তাও বাংলাদেশ সফলভাবে অতিক্রম করেছে। শেখ হাসিনার অবিস্মরণীয় নেতৃত্বে বর্তমান সরকার সারাদেশে উন্নয়নের যে জোয়ার নিয়ে এসেছে তা বিশ্ব পরিসরেও চমক সৃষ্টি করেছে। নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক উন্নয়ন অভিগমনে বাংলাদেশ আজ লিঙ্গ বৈষম্যের মতো দৃষ্টিকটু ফারাককে জয় করার অদম্য প্রচেষ্টায় লিপ্তই শুধু নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় একেবারে শীর্ষে। অর্থাৎ অর্ধাংশ নারী জাতিকে অগ্রগতির বিভিন্ন সূচকে জোরালোভাবে সম্পৃক্তকরণেই দেশের সমৃদ্ধি আজ সাধারণ জনগোষ্ঠীর একেবারে নিকটে। তাই ২০১৮ সালে শুধু নির্বাচনের বছরই নয়, গত দশ বছরের অভাবনীয় সাফল্যেরও অন্যতম দিকনির্দেশনা। সেই অবিস্মরণীয় অর্জনকে সামনে রেখে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে আয়োজন করা হচ্ছে এক ব্যাপক উন্নয়ন মেলা। প্রতিটি জেলা থেকে একটি করে পণ্য যাচাই-বাছাই করে ৬৪টি জেলাকে ব্র্যান্ডিং করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দশ বছরের অগ্রগতির ধারাকে তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচীর ওপরও সুস্পষ্ট ধারণা সবার সামনে তুলে ধরা হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সরকারের সময়োপযোগী ভূমিকাকে দৃশ্যমান করে ভবিষ্যত পরিকল্পনাগুলো নানামাত্রিকে আপামর জনসাধারণের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োগ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এমন একটি মহতী মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এই পণ্য মেলার আয়োজন সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে এই মহান পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। দেশব্যাপী আয়োজিত এই বৃহৎ মেলা আন্তর্জাতিক আঙিনায়ও প্রবেশ করতে যাচ্ছে এই প্রথমবারের মতো। বিশ্বব্যাপী অবস্থানরত বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে এই পণ্যমেলা সবার সামনে উন্মোচিত হবে। জেলাভিত্তিক বৈশিষ্ট্যম-িত একটি পণ্য নির্ধারণ করে তাকে মেলায় সরবরাহের মাধ্যমে সাধারণের কাছে নিয়ে আসা হবে। যা শুধু সময়সাপেক্ষই নয়, একটি কঠিনতম বাছাইপর্বও। পণ্যের গুণগতমান যাচাই করে তার অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা বিবেচনায় এনে নির্দিষ্ট জেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য এক চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। জেলাওয়ারি পণ্য যাচাই করাই শুধু নয়, তাকে রফতানির আওতায় এনে বিশ্ববাণিজ্যে একীভূত করাও মেলার গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। যা আন্তর্জাতিক অর্থনীতির বলয়ে বাংলাদেশের সুদূরপ্রসারী ভূমিকাকে গতিশীল করতে বিশেষ অবদান রাখবে। ইতোমধ্যে জেলাভিত্তিক পণ্য বাছাই-যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। ১৫টি জেলা থেকে ১৫টি পণ্যও চিহ্নিত করা হয়েছে এই বৃহৎ মেলায় উপস্থাপনের লক্ষ্যে নিয়ে। এই মহতী উদ্যোগটি বৃহত্তর পরিকল্পনায় এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে নির্ধারিত কর্মসূচীকে গতিশীল করা হচ্ছে।
আগামী ৪-৬ অক্টোবর তিন দিন ধরে চলবে এই মহাকর্মযোগ। ৬৪টি জেলায় শুধু নয়, প্রতিটি উপজেলায়ও এই কর্মসূচী পরিচালিত হবে। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই মেলা সংক্রান্ত খসড়া বিল উপস্থাপন করে তাকে আইনানুগভাবে সংসদে পেশের মাধ্যমে এই কর্মসূচীর বৈধতা দেয়া হবে। প্রতিজেলায় জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহীসহ উর্ধতন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মেলা সংক্রান্ত সমস্ত দায়-দায়িত্ব পালন করবেন। রফতানিযোগ্য পণ্য সম্পদ নির্বাচন করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও উন্নয়ন মেলার বিশেষ উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্য রফতানি করা হয় বিশ্বের মাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশে। সেটাকে আরও সম্প্রসারিত করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিকীকরণে বাংলাদেশের ভূমিকাকে আরও গতিশীল করা হবে। এতে যেমন পণ্য বহুমুখীকরণের সুযোগ বাড়বে পাশাপাশি অর্থনীতির চাকাও নিরন্তর বেগে চালিত হবে। যা সামগ্রিক সমৃদ্ধিতে দীর্ঘমেয়াদী অবদান রেখে দেশ ও জাতির উন্নয়নের গতিপ্রবাহকে ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে এগিয়ে দেবে। শুধু তাই নয়, মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছরকেও সাধারণ জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা পূরণের নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।