ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রুপপুরে দূর্ঘটনা রোধক ‘কোরক্যাচার’ উদ্বোধন

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ১৮ আগস্ট ২০১৮

রুপপুরে দূর্ঘটনা  রোধক ‘কোরক্যাচার’ উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী ॥ প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে কথা দিয়েছিলেন রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উপাদন কেন্দ্র হবে সম্পুর্ণ ঝুঁকিমুক্ত। তিনি সে কথা রক্ষা করেছেন। শনিবার সকালে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উপাদন কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের দূর্ঘটনা রোধক পৃথিবীর দ্বিতীয় ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন চল্লিশ মে.টন ওজনের‘কোরক্যাচার’ স্থাপন উদ্বোধন কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সচিব আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে পরমাণু কমিশনের চেয়ারম্যান মাহবুল হক ও রসাটম এটমস্ট্রয়ের ভাইসপ্রেসিডেন্ট মি. খাজিন বক্তব্য দেন। এসময় প্রকল্প পরিচালক ড.শৌকত আকবরসহ উচ্চ পর্যায়ের দেশী বিদেশী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী আরও বলেন,বিপদের সময় মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া পাশে ছিল এবং এখন সুখের সময় পরমাণু প্রকল্প নির্মানেও তারা প্রকৃত বন্ধু হিসেবে সাথে রয়েছে । দেশ ও জাতীর স্বার্থে রুপপুর পরমাণু প্রকল্পকে সম্পূর্ণরুপে ঝুঁকি মুক্ত রাখতে বিশ্বের বত্রিশতম প্রকল্প ঈশ্বরদীর রুপপুরে নির্মানাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ উপাদন কেন্দ্রে স্থাপন করা হলো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ‘কোরক্যাচার’। এটি হলো পৃথিবীর দ্বিতীয়। প্রথমটি স্থাপন করা হয়েছে রাশিয়ার পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। যেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘নববরানিস’। পৃথিবীর অনেক বৃহৎ দেশের পরমাণু প্রকল্পে এ ধরনের দূর্ঘটনা রোধক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়নি। সেদিক থেকে বাংলাদেশের মানুষ অনেকটা ভাগ্যবান। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে কথা দিয়েছিলেন,রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হবে সম্পুর্ণ ঝুঁকিমুক্ত। যেহেতু দেশ ও মানুষের স্বার্থে প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সেহেতু এ প্রকল্প থেকে মানুষ শুধু সুবিধা ভোগ করবেন। দেশ ও মানুষকে যাতে কোন রকম অসুবিধার সন্মুখিন হতে না হয় বা কোন প্রকার ঝুঁকির মধ্যে পড়তে না হয় সে জন্যই ‘কোরক্যাচার’ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ও পরমাণু কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড.ফিরোজকে জাপানে স্থাপিত ফকুশিমা পরিদর্শণ ও পর্যবেক্ষণ করে অভিজ্ঞতা অর্জনের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর সে নির্দেশ প্রাপ্তির পর আমরা সেখানে গিয়ে পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শণ করে সম্মোখ জ্ঞান অর্জন করি। পরিদর্শন শেষে দেশে ফিরে আমরা প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহিত করি। প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতেই এ প্রকল্পের চুল্লিতে ‘কোরক্যাচার’টি স্থাপনের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। উল্লেখ্য, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের একটি দায়িত্বশীল সুত্রের দেওয়া তথ্যমতে, এ প্রকল্পের নির্মাণকাজের শুরু থেকেই সরকার বিরোধী ও দেশের উন্নয়ন বিরোধী একটি গোষ্ঠী নানাভাবে প্রকল্প বিরোধী অপপ্রচার চালাতে থাকে। গোষ্ঠিটি এলাকাসহ দেশের কিছু মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে অব্যাহতভাবে আতংক ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে যাতে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্থ হয়। ঐগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে বলা হয়েছে রুপপুর প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবেনা। বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও যে কোন সময় জাপানের ফোকুশিমার মত দূর্ঘটনা ঘটে ঈশ্বরদীসহ দেশের বিশাল অংশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। যে ক্ষতি কখনও পুরণ করা সম্ভব হবেনা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা ও মানবতার মাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রকারীদের সে অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তিনি এ প্রকল্পের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন ‘কোরক্যাচার’ স্থাপনের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের মাধ্যমে। পরমাণু প্রকল্পে দূর্ঘটনা ঘটলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল স্থাপনার ছাঁদ ফেটে ক্ষতিকারক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ধোঁয়ার কুন্ডলি হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে দেশ ও মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। কিন্তু আনন্দের বিষয় হলো রুপপুর প্রকল্পে স্থাপিতব্য দূর্ঘটনা রোধক‘কোরক্যাচার’টি এমন শক্তিশালী প্রযুক্তি দিয়ে তৈরী যে, হঠাৎ কখনও এ প্রকল্পে দূর্ঘটনা ঘটলেও ক্ষতিকারক তেজস্ক্রিয়তা ধোঁয়ার কুন্ডলী হয়ে ছাদ ফেটে বাতাসে ছড়াতে পারবেনা। দূর্ঘটনা ঘটার সাথে সাথে কোরক্যাচার’টি ধোঁয়ার কুন্ডলীকে পাথরের মত কঠিন পদার্থে পরিণত করবে এবং মাটির নীচে রেখে প্রকল্পটিকে দুর্ঘটনা মুক্ত করবে।
×