ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কে সচিবরা ॥ ট্রাফিক ত্রুটি খুঁজতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৯ আগস্ট ২০১৮

সড়কে সচিবরা ॥ ট্রাফিক ত্রুটি খুঁজতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কমিটি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বদলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সড়ক মহাসড়কের চিত্র। পরিবহন, পথচারী, চালককে এখন নিয়ম মেনে পথ চলতে হবে। চলাচলের সময় সব গণপরিবহনের দরজা বন্ধ রাখা, নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানামা বন্ধ, বাসের ভেতর চালক ও হেলপারের বৃত্তান্ত প্রদর্শন, দূরপাল্লার বাসে চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্টের ব্যবস্থা রাখা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয় ও রিমোট কন্ট্রোলড অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু হচ্ছে অচিরেই। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গবর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের সভায় ‘ঢাকা শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এদিন অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মোঃ নজিবুর রহমান। সভায় নিরাপদ সড়ক ও মহাসড়কের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগকে চলমান কার্যক্রমের ওপর বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থাপনার এ সব নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য আগামীকাল ২০ আগস্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বিআরটিএ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। শনিবার ট্রাফিক ব্যবস্থার ত্রুটি খুঁজতে ও রাস্তায় নেমেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। তারা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করেন। কথা বলেন পথচারীসহ কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে। পথচারীদের রাস্তা পারাপারে ত্রুটি বিচ্যুতিগুলোতে ওঠে আসে তাদের পর্যবেক্ষণে। শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে বৈঠক করেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর হচ্ছে সরকার ॥ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর হচ্ছে সরকার। জানা গেছে, নির্ধারিত স্থানে যাত্রী ওঠানামা, চলন্ত অবস্থায় দরজা বন্ধ রাখাসহ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গতিশীল করতে আরও ডজনখানেক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গবর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের ‘ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ সংক্রান্ত সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। আগামীকাল ২০ আগস্টের মধ্যে এসব কিছুর বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ জন্য বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এবং ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি), রাজউক, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নে বিআরটিএ, বিআরটিসি, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলাপ্রশাসক, বাংলাদেশ স্কাউট, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন এবং শিক্ষা ও তথ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত হচ্ছে : ১. চলন্ত অবস্থায় সব গণপরিবহনের দরজা বন্ধ রাখতে হবে, নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না। ২. গণপরিবহনের দৃশ্যমান দুটি স্থানে চালক ও হেলপারের ছবিসহ নাম এবং চালকের লাইসেন্স নম্বর ও মোবাইল নম্বর প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ দুটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ডিএমপি ও বিআরটিএ দায়িত্ব পালন করবে। ৩. সব মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীকে (সর্বোচ্চ দুইজন আরোহী) বাধ্যতামূলক হেলমেট এবং সিগন্যাল আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে ডিএমপি। ৪. সব মহাসড়কে বিশেষত : মহাসড়কে চলমান সব পরিবহনে (বিশেষত : দূরপাল্লার বাস) চালক এবং যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহার এবং পরিবহনসমূহকে সিট বেল্ট সংযোজনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিআরটিএ এবং বাংলাদেশ পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ চারটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে ২০ আগস্টের মধ্যে। সড়ক ব্যবস্থাপনায় ৯টি সিদ্ধান্ত এবং পরিবহনের ফিটনেস এবং লাইসেন্সের জন্য চারটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সর্বাত্মক প্রচার ও গণমাধ্যমে প্রচারণা, সভা আয়োজনের পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। সড়ক ব্যবস্থাপনায় ৯ সিদ্ধান্ত ॥ ১৮ আগস্টের মধ্যে রাজধানীর যেসব স্থানে ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস রয়েছে সেসব স্থানের উভয় পাশের ১০০ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস ব্যবহার করবে তাদের ‘ধন্যবাদ’ কিংবা ‘প্রশংসাসূচক’ সম্বোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে। ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাসে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২০ আগস্টের মধ্যে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা এবং ৩০ আগস্টের মধ্যে বাইরে আয়নার ব্যবস্থা করতে হবে। ১৮ আগস্টের মধ্যে শহরের সব সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও রোড সাইন দৃশ্যমান করে ফুটপাথ দখলমুক্ত ও অবৈধ পার্কিং এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। সড়কের নাম ফলক দৃশ্যমান স্থানে সংযোজন করতে হবে। ট্রাফিক সপ্তাহে চলমান কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। দুই সিটি কর্পোরেশন ও ডিএমপিকে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা কর্তৃত্ব পুলিশকে হস্তান্তর করতে হবে। এ জন্য আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিএনসিসি ও ডিএমপিকে সময় দেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনিষ্পন্ন বাংলাদেশ পুলিশ থেকে পাওয়া ‘জনবল’ বিষয়ক প্রস্তাবের সব সিদ্ধান্ত সমন্বয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ফোকাল পয়েন্টে কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ এবং উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। শহরে রিমোট কন্ট্রোল অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগন্যালিং পদ্ধতি চালু করা। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে ডিএমপি। দুই সিটি কর্পোরেশনকে রোড ডিভাইডারের উচ্চতা বৃদ্ধি বা স্থানের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মহাখালী ফ্লাইওভারের পর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ন্যূনতম দুটি স্থানে স্থায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি দৈবচয়নের ভিত্তিতে যানবাহনের ফিটনেস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা নেয়া হবে। শহরের অন্যান্য স্থানেও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী অস্থায়ী অনুরূপ কাজের জন্য মোবাইল কোর্ট বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসন, ডিএমপি ও বিআরটিএকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। স্কুলের সময়ে যেখানে সেখানে রাস্তা পারাপার বন্ধেও সভায় আলোচনা হয়েছে। এ জন্য শহরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিষ্ঠান ছুটি বা শুরুর আগে অপেক্ষাকৃত বয়ঃজ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, পুলিশ, স্কাউট এবং বিএনসিসির সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। ফিটনেস এবং লাইসেন্স সংক্রান্ত সিদ্ধান্তসমূহ ॥ অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ফিটনেস সনদ প্রদান প্রক্রিয়াতে অবশ্যই পরিবহন দর্শনপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ, রুট পারমিট বা ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোকে দ্রুত ধ্বংস করার সম্ভাব্যতা যাচাই, লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ‘লার্নার’ সনদ দেয়ার সময় ড্রাইভিং টেস্ট নেয়া যেতে পারে বলেও মতামত দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া উত্তীর্ণদের দ্রুত লাইসেন্স প্রদান, কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘাটতি থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণে পদক্ষেপ নেবে বিআরটিএ। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ সর্বাত্মক প্রচারে জনসাধারণকে অবহিতের জন্য গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কাজে কোন গাফিলতি চলবে না ॥ শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান শেষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করার স্বার্থে ও গোটা পরিবহন সেক্টরকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামীকাল ২০ আগস্ট থেকেই অনেক সিদ্ধান্ত কার্যকর শুরু হবে। অর্থাৎ আস্তে আস্তে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন সেক্টরের সার্বিক চিত্র পাল্টে যাবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চান ঢাকা শহর বহুগুণে উন্নত হোক। সকল সংস্থা মিলে কাজ করলে রাজধানীর চলমান সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা আজকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। রাস্তা পারাপার ও ব্যবহারে নাগরিক সচেতনতার বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছি। তিনি বলেন, কতটুকু ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে, পথচারী কতটুকু আইন মানছেন তাও নজরে এসেছে। তিনি বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের আন্ডারপাস ভাল। ব্যবহারের উপযোগী। কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আন্ডারপাসের অবস্থা ভাল নয়। দোকানিরা পসরা সাজিয়ে পথচারী চলাচলের অনুপযোগী করে রেখেছে। আমরা সিটি করপোরেশনকে পরামর্শ দিয়েছি নিরাপদ আন্ডারপাস নিশ্চিত করার। তিনি জানান, বাস চলার সময় নির্ধারিত স্পট ছাড়া যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না। পাশাপাশি বাসে চালক ও হেলপারের লাইসেন্স, পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর, নাম ঠিকানা সম্বলিত কার্ডে ঝুলানো নিশ্চিত করতে হবে। সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও সড়ক বিভাগ এসব বিষয় নিশ্চিত করবে। পার্কিং স্পেস নির্ধারণ করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ ॥ ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বল্পমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্পট পরিদর্শন শেষে সিটি করপোরেশনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান এ নির্দেশ দেন। তিনি জানান, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেই জনস্বার্থে এই পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নেয়া পরিকল্পনাসমূহ সাত কর্মদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করার কথাও জানান তিনি। বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে ছোট ছোট কাজগুলো অনেক ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আমরা বলেছি, জনস্বার্থে যেখানে ফুটওভারব্রিজ নেই সেখানে তা করতে হবে। যেখানে অকার্যকর ফুটওভারব্রিজ রয়েছে তা স্থানান্তর করাররও নির্দেশ দেয়া হয়েছে, জরুরী ভিত্তিতে এসব কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনে বিভিন্ন পয়েন্টে জেব্রা ক্রসিং দেয়ার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। সড়কের পাশে প্রতিটি স্কুল শুরু ও ছুটির সময় পুলিশ, স্কাউট দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করার কথাও আলোচনায় ওঠে আসে। সমন্বয় কমিটি গঠন ॥ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সার্বিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মনিটরিং করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসানকে প্রধান করে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি গৃহীত সিদ্ধান্ত কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে তা তদারকি করবে। সমন্বয় কমিটির সঙ্গে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র, গণপূর্ত, ডিটিসিএ, রাজউক, বিআরটিএ, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। নজিবুর রহমান জানান, আগামী একমাস পর আবারও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে চলমান সিদ্ধান্ত কতটুকু কার্যকর হয়েছে তা পর্যালোচনা করা হবে। তিনি বলেন, ২০ তারিখ থেকেই আমাদের কার্যক্রম শুরু। স্বল্প মেয়াদী যেসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব তা বাস্তবায়ন শুরু হবে। কেউ যেন কোন কাজে গাফিলতি না দেখান। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে আশাকরি রাজধানীর চেহারা বদলে যাবে। সূত্রে জানা গেছে, নগর ভবনে আয়োজিত বৈঠকে, ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস সমূহে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আন্ডারপাস সমূহে প্রয়োজনীয় লাইট, সিসিটিভি স্থাপনাসমূহ ব্যবহার করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। ৩০ আগস্টের মধ্যে এ নির্দেশনা নিশ্চিত করতে বলা হয়। ১৮ আগস্টের মধ্যে ঢাকা শহরের সব সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও রোড সাইন দৃশ্যমান করা, ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখা, অবৈধ পার্কিং এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করা, সব সড়কের নাম ফলক দৃশ্যমান স্থানে সংযোজনের নির্দেশ দেয়া হয় ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) । আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সময়ে ঢাকা শহরে রিমোট কন্ট্রোলড অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগন্যালিং পদ্ধতি চালু করার নির্দেশ, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকা শহরের সব সড়কের রোড ডিভাইডারের উচ্চতা বৃদ্ধি করে বা স্থানের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ফিটনেস দেয়ার প্রক্রিয়াতে অবশ্যই পরিবহন দেখে ফলপ্রসূ ব্যবস্থা নিতে হবে। যানজট নিরসনে সব সংস্থাকে নির্দেশনা ॥ রাজধানীর যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সব সংস্থাকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আর, কালক্ষেপণ নয় এখনই মাঠে নেমে পড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। রাজধানীর যানজট নিরসনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, ডিএমপি, ডিটিসিএসহ সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজে নামার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্যসচিব নজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম আব্দুল্লাহপুর থেকে গুলিস্থান পর্যন্ত সড়ক পরিদর্শনে নামে। এ সময় তারা কুড়িল, মহাখালী, কাওরান বাজার, শাহবাগসহ বেশ কয়েকটি স্পটে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার নেমে খুঁটিনাটি সমস্যা চিহ্নিত করেন। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে তার কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে কিছু দিকনির্দেশনা দেন। মেয়রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) মোঃ আবুল কালাম আজাদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোঃ খলিলুর রহমান ও মহাপরিচালক-১ গবর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (ডিআইইউ) মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া, ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম প্রমুখ। সভা থেকে বাস্তবায়নকারী সব সংস্থাকে এখন থেকেই সক্রিয়ভাবে কাজে নামার নির্দেশনা আসে। যেখানে যেখানে ফুটওভার ব্রিজ প্রয়োজন সেখানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, আন্ডারপাসগুলো পরিষ্কার করে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা। একইভাবে আব্দুল্লাহপুর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত সড়কে বিভিন্ন জায়গায় বাস বে নির্মাণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ৬ কোম্পানির ভিত্তিতে যে বাস নামানোর কথা সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব কাজের সমন্বয় করবেন। আজকের নির্দেশনা ও সমস্যার সমাধান জানতে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ফের বসবেন তারা। সেখানে কাজের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হবে। সমন্বয় সভায় মেয়র সাঈদ খোকন নগর পুলিশের চাহিদার কথা জানালেও সবার শেষে বক্তৃতা করায় তার কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। এছাড়া নিরাপদ সড়কের জন্য নেয়া প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মেয়র। পরিদর্শন টিমে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-৫) এসএম অজিয়র রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
×