ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্রাশ ফায়ারে খাগড়াছড়িতে নিহত ৭

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৯ আগস্ট ২০১৮

 ব্রাশ ফায়ারে খাগড়াছড়িতে নিহত ৭

চট্টগ্রাম অফিস/পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি ॥ শনিবার সকালে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজার এলাকাসহ দুটি স্পটে পাহাড়ী দুর্বৃত্তদের ব্রাশফায়ারে প্রাণ হারিয়েছে ৭ জন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরও ৭ জন। প্রথম ঘটনায় গুরুতর আহত তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের ৬ জনই ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর দ্বিধা বিভক্ত সংস্কারপন্থী গ্রুপের সদস্য। অবশিষ্ট একজন মহালছড়ি উপজেলার সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক। তিনিও ইউপিডিএফ’র যুব ফ্রন্টের সমর্থক বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর শহর এলাকায় চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরও বিভিন্ন পয়েন্টে গুলির শব্দ শোনা গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেনা টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনার সূত্রপাত। শহর এলাকার অদূরে স্বনির্ভর বাজার এলাকায় গ্রামবাসীদের নিয়ে ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) একটি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচী নিয়েছিল। কর্মসূচীর আগেই দুঃখজনক এই ঘটনা ঘটে যায়। সদর থানার ওসি সাহাদাত হোসেন তাদের প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে জানান, ঘটনাস্থলে আকস্মিকভাবে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা হানা দিয়ে ব্রাশফায়ার শুরু করে। কর্মসূচীর আয়োজনকারীদের পক্ষ থেকে ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে এর পাল্টা জবাব দেয়া হয়। উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলেই ৬ জন প্রাণ হারায়। আহত হয় আরও ৩ জন। দুপুর ১২টার দিকে প্রসিত গ্রুপ সমর্থিত ইউপিডিএফ সমর্থকরা জেলা সদরের পেড়াছড়া ব্রিজ এলাকায় একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করতে গেলে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা ওই মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয় ৪ জন। এদের মধ্যে পরে একজন মারা যায়। পুলিশ জানায়, নিহতদের অধিকাংশ ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ নেতা ও সমর্থক। ঘটনার পর দুর্বৃত্ত দল পালিয়ে গেলে গুলিবিদ্ধ সকলকে খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতালে আনা হয় সেখানে ৬ জনের মৃত্যু ঘটে। আহত ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নিহতরা হচ্ছে শন কুমার চাকমা (৭০), তপন চাকমা (২৩), এলটন চাকমা (২৮), বরুন চাকমা (২৬), রুপক চাকমা (২৭), পলাশ চাকমা (২৩), জিতায়ন চাকমা (৫২)। আহতরা হচ্ছে সমর বিকাশ চাকমা (৪৮), সুখীরন চাকমা (৩৫), সোহেল চাকমা (২২)। আরেকজনের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। জেলা পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইউপিডিএফর প্রতিপক্ষ জেএসএস ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক পন্থী দুর্বৃত্তরা এ হামলার সঙ্গে জড়িত। দুপুর ১২টার দিকে তিনি জানান, শহরের পরিস্থিতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আর এম ও ডাঃ নয়নময় ত্রিপুরা জানান, প্রথম দফায় সংঘটিত ঘটনায় যে ৬ জনকে আনা হয়েছিল তাদের মধ্যে ৫ জনই ছিল মৃত। একজন আনার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ঘটনার পর আহতদের হাসপাতালে দেখতে যান এলাকার এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান। ঘটনার বিষয়ে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানান, ইউপিডিএফর প্রসিত গ্রুপ ও সংগঠনটির গণতান্ত্রিক গ্রুপের দুর্বৃত্তরা গোলাগুলির এ ঘটনায় জড়িত বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি। এখানে উল্লেখ্য, জেএসএস থেকে বেরিয়ে যাওয়া পার্বত্য শান্তিচুক্তিবিরোধী প্রসিত বিকাশ খিসা ইউপিডিএফ নামে আঞ্চলিক সংগঠনের জন্ম দিয়েছে, তাদের প্রভাব খাগড়াছড়িতে বেশি। পরবর্তীতে এই ইউপিডিএফ থেকে বেরিয়ে গেছে এক গ্রুপ। যারা সংস্কারপন্থী নামে পরিচিত। এই দুই গ্রুপের মধ্যে প্রতিনিয়ত সংঘাত লেগেই আছে। প্রথম দফার ঘটনাটি ইউপিডিএফর সংস্কারপন্থীরা ঘটিয়েছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। তবে দ্বিতীয় ঘটনাটি জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা গ্রুপ) সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের ধারায় হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। ইউপিডিএফর জেলা সমন্বয়কারী মাইকেল চাকমা ঘটনার জন্য সংস্কারপন্থী জনসংহতিকে সমিতি দায়ী করলেই জনসংহতি সমিতির পক্ষে তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।
×