ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৯ আগস্ট ২০১৮

 লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ জিলহজ মাসের আজ সপ্তম দিবস। পবিত্র হজের অনুভূতি ও মাসলা মাসায়েলের সঙ্গে হযরত আয়িশার জীবনকথার অনেক বিষয় জড়িত। আজ সে সম্পর্কে কয়েকটি চুম্বক অংশ তুলে ধরব। হযরত আয়িশা (রা.) আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (স.) এর প্রিয়তম সহধর্মিণী। নবীজীর কথা, কর্ম ও আদর্শের নিকটতম সাক্ষী এ মহীয়সী মহিলা। মহানবীর তিরোধানের পর ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য জীবন্ত কিংবদন্তি ছিলেন হযরত আয়িশা (রা.)। হযরত আয়িশা নিজে বলতেন, আমি গর্বের জন্য নয় বরং বাস্তব কথাই বলছি। আর তা হলো আল্লাহ তায়ালা আমাকে এমন কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দান করেছেন যা আর কাউকে দান করেননি। যেমন- আমার নির্দোষিতা ঘোষণা করে কোরান শরীফের আয়াত নাজিল হয়েছে, জিবরাঈল ফেরেশতাকে আমি স্বচক্ষে দেখেছি, আমারই কক্ষে নবীজীর কাছে ওহী নাজিল হয়েছে এবং তার কবর স্থাপিত হয়েছে ...। খুব অল্প বয়সে তিনি স্বামীর ঘরে উঠেছেন। তাই তখনও শিক্ষাদীক্ষা পার করে আসতে পারেননি। কিন্তু সৌভাগ্য তার ঐশী জ্ঞানের অঝোর ধারা যেখানে প্রতিনিয়ত বর্ষিত হতো সেখানেই এখন তার অবস্থান। প্রতিদিন মসজিদে নববীতে রাসূলুল্লাহর (সা.) তা’লিম ইরশাদের মজলিস বসত। মসজিদের গা ঘেঁষেই ছিল হযরত আয়িশার (রা.) হুজরা। এ কারণে রাসূল (সা.) বাইরের লোকদের যে শিক্ষা দিতেন আয়িশা (রা.) ঘরে বসেই তাতে শরিক থাকতেন। কখনও কথা দূরত্ব বা অন্য কোন কারণে বুঝতে না পারলে রাসূল (সা.) ঘরে এলে জিজ্ঞেস করে বুঝে নিতেন। (মুসনাদ-৬/৭৭)। কখনও কখনও তিনি মসজিদের কাছাকাছি চলে যেতেন। হযরত আয়িশার দ্বীনদারি ও স্বামীভক্তি ছিল অতুলনীয়। আল্লাহর ওয়াস্তে তার আমল ছিল অতি উচ্চাঙ্গের। একবার আরাফাতের দিন আয়িশা (রা.) রোজা রাখলেন। প্রচ- গরমের কারণে মাথায় পানির ছিটা দিচ্ছিলেন। একজন রোজা ভেঙ্গে ফেলার পরামর্শ দিলেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট শুনেছি যে, আরাফাতের দিন রোজা রাখলে সারা বছরের পাপ মোচন হয়ে যায়, তখন তা কিভাবে ভাঙতে পারি? (মুসনাদ ৬/১২৮)। অত্যন্ত কঠোরভাবে হজের পাবন্দ ছিলেন তিনি। এমন বছর খুব কমই যেত, যাতে তিনি হজ আদায় করতেন না। খলীফা উমর তার জীবনের শেষ পর্যায়ে হযরত উসমান ও আবদুর রহমান ইবন আওফকে (রা.) রাসূলুল্লাহর (সা.) সহধর্মিণীদের সঙ্গে হজে পাঠান। হজের সময় তাদের অবস্থানের স্থানসমূহ নির্দিষ্ট ছিল। প্রথমে ওয়াদী নামিরের শেষ প্রান্তে অবস্থান করতেন। সেখানে যখন মানুষের ভিড় হতো, তখন তা থেকে একটু দূরে আ’রাফ নামক স্থানে তাঁবু করেন। কোনবার জাবালে সাবিরের পাদদেশে থাকতেন। মানুষ যখন আরাফা ছেড়ে চলতে শুরু করত, তখন তিনি ইফতার করতেন। হিজরী ১১ সনে রাসূলুল্লাহ (স.) এর বিদায় হজের সফরসঙ্গী হন তিনি। হজ ও উমরার নিয়ত করেন। কিন্তু স্বাভাবিক নারী প্রকৃতির কারণে যথাসময়ে তাওয়াফ করতে পারলেন না। দারুণ কষ্ট পেলেন। কাঁদতে শুরু করলেন। রাসূল (সা.) বাইরে থেকে এসে কাঁদতে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলেন এবং তাকে করণীয় মাসআলা বাতলে দিলেন। তিনি ভাই আবদুর রহমান ইবন আবু বকর (রা.)কে সঙ্গে নিয়ে অসমাপ্ত আবশ্যকীয় কাজ সমাপন করলেন। (বুখারী, কিতাবুল হজ)। উল্লেখ্য, বিদায় হজে কমবেশি প্রায় এক লাখ মুসলমান অংশগ্রহণ করেন। উঁচুস্তরের সকল সাহাবী এ সফরে রাসূলুল্লাহর (স.) সফরসঙ্গী ছিলেন। এ সফরের যাবতীয় ঘটনা সকলের জানা থাকার কথা। হযরত আয়িশাও (রা.) স্মৃতিতে ঘটনাটি ধরে রাখেন। ঠিক হজের অনুষ্ঠানাদি আদায়কালীন সময়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তিনি ভীষণ কষ্ট পান। হযরত তাকে সান্ত¡না দেন এবং ‘তানঈম’ নামক স্থানে নতুন ইহরাম বেঁধে কা’বার তাওয়াফ করার নির্দেশ দেন। নবীপতœী হযরত আয়িশা তানঈম এলাকায় নতুন করে ইহরাম পড়ে ওমরাহ পালন করেছিলেন বলে আজও লাখো লাখো হাজী সে এলাকা থেকে ইহরাম বেঁধে উমরা পালন করেন। সৌদি সরকার এখানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশাল সুন্দর মসজিদ। এ মসজিদকে হযরত আয়িশার পূর্ণ স্মৃতির কারণে মসজিদে আয়িশা বলা হয়। স্থানীয়রা তানঈম এবং ওমরা মসজিদও বলে। হাফিজ ইবন কায়্যিম হযরত আয়িশার (রা.) এ বর্ণনাটি নকল করার পর বলেছেন, হযরত আয়িশার (রা.) আমল ও হাদীস থেকে হজের অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মূলনীতি গৃহীত হয়েছে। যেমন- নারীদের ক্ষেত্রে শারীরিক বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে তাওয়াফুল কুদুম রহিত হয়ে যাবে। এ অবস্থায় হজের পর উমরার নিয়ত করা জায়েজ। নারীরা বিশেষ অবস্থায় শুধু কা’বার তাওয়াফ ছাড়া হজের অন্যসব কাজ আদায় করতে পারবে। ‘তানঈম’ এলাকা হারামের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং হারামের বাইরে। উমরা এক বছরে এমনকি এক মাসেও দুই বার আদায় করা যায়। (যা’দুল মাআদ ১/২০৭, আসহাবে রাসূল ৫/১৭০)। হযরত আয়িশার স্মৃতিধন্য সে মসজিদ আজ লক্ষ লক্ষ মজনু হাজীদের উমরা করার জন্য ইহরাম বাঁধার স্থান, তাসবিহ তাহলিল দরুদ ইস্তেগফার ও মোনাজাতের প্রিয় জায়গা।
×