ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নওশাবা ছাড়া সবাই মুক্ত

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২১ আগস্ট ২০১৮

নওশাবা ছাড়া সবাই মুক্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মধ্যে পুলিশের করা ভাংচুরের মামলায় গ্রেফতার আরও ১৩ শিক্ষার্থী সোমবার কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। জামিন পেয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন রাতুল, লুৎফুন্নাহার লুনাসহ ৪১ শিক্ষার্থী। এদিকে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার অভিনেত্রী কাজী নওশাবার মুক্তি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানবিক আবেদন জানিয়েছে টেলিভিশন শিল্পীদের সংগঠন অভিনয় শিল্পী সংঘ। সূত্র বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলনে যেসব শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন, ঈদের আগেই তাদের মুক্তি চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে কোথাও কোন নিরপরাধ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার না করতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ঈদের আগেই গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের মুক্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রহণ করতে বলেছিলেন তিনি। সরকারের নীতিনির্ধারণী সূত্র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, নিরপরাধ কোন শিক্ষার্থীকে আটকে রাখা যাবে না। তবে শিক্ষার্থী নয়, কিন্তু আন্দোলনে অংশ নিয়ে উসকানি দিয়েছেন, গুজব ছড়িয়েছেন কারও বিরুদ্ধে, এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থেকে থাকলে তাদের বিষয়ে কোন নমনীয় মনোভাব দেখাবে না সরকার। তাদের উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের মধ্যে পুলিশের করা ভাংচুরের মামলায় গ্রেফতার ১৩ শিক্ষার্থী সোমবার সকালে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে রবিবার রাতে মুক্তি পান ৯ জন। সকালে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আরও ১৩ জনকে মুক্তি দেয়া হয় বলে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী জানান। তিনি বলেন, সকালে নয়জন মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২২ জন মুক্তি পেয়েছে। পুলিশের মামলায় গ্রেফতার আরও চারজন কেরানীগঞ্জ কারাগারে রয়েছে জানিয়ে এই কারা কর্মকর্তা বলেন, জামিনের কাগজপত্র পেলে তাদেরও মুক্তি দেয়া হবে। সোমবার মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে আছে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির খালিদ রেজা, রেদওয়ান আহমেদ, রাশেদুল ইসলাম, শাখাওয়াত হোসেন ও তরিকুল ইসলাম, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির জাহিদুল হক ও নূর মোহাম্মদ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আজিজুল করিম এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) সিহাব শাহরিয়ার, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রিসালাত ওরফে ফেরদৌস, আমিনুল হক, ইউল্যাবের ছাত্র বাঈজীদ আদনান ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সাবের আহমেদ। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ ও ৬ আগস্ট রাজধানীতে কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। ওই সব ঘটনায় দ-বিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশ বিভিন্ন থানায় মোট ৫১টি মামলা করে। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয় ৯৯ জনকে। তাদের মধ্যে ৪১ জনকে রবিবার জামিন দেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের কয়েক বিচারক। জামিন পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নয়জন রবিবার রাতেই মুক্তি পান। জামিন না হওয়া অভিনেত্রী নওশাবার জন্য শিল্পীদের মানবিক আবেদন ॥ গুজব ছড়ানোর পর তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেফতার অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদের জামিন হয়নি। সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তার জামিন আবেদন নাকচ করলেও নওশাবাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছেন। নওশাবার আইনজীবী এ এইচ ইমরুল কাওসার আদালতের এই আদেশের কথা জানিয়েছেন। নওশাবা এখন রয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সোমবার জামিন আবেদনের শুনানিতে হুইল চেয়ারে করে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। কোটা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ৪১ জনের জামিন ॥ কোটা পদ্ধতির সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নামে নাশকতা ও গুজব ছড়িয়ে নাশকতায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, এ পি এম সুহেল, সাখাওয়াত হোসেন রাতুল ও লুৎফুন্নাহার লুনা, তরিকুল ইসলাম, মশিউর রহমান ও জসিম উদ্দিনসহ ৪১ জনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত। সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনসারী ও সাইফুজ্জামান হিরুর আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করে। এর মধ্যে রাশেদ খানকে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এবং লুমাকে রমনা থানায় দায়ের করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। বাকি শিক্ষার্থীদেরও পুলিশকে কর্তব্য পালনে বাধা দেয়া, সরকারী কাজে বাধা দেয়া, নাশকতা ইত্যাদি অভিযোগে রাজধানীর রমনা ও শাহবাগ থানায় দায়ের করা বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনসারীর আদালত রাশেদ খান ও লুৎফুন্নাহার লুমাসহ আট শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করে। অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরুর আদালত মঞ্জুর করে ১৯ শিক্ষার্থীর জামিন। জামিন পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- রাকিবুল ইসলাম, মোঃ মাসুদ হাসান মাসুদ, আবু সাঈদ ফজলে রাব্বি, রকিবুল ইসলাম, আলী হোসেন, আবু সাঈদ, জসিম উদ্দিন, মাসুদ হাওলাদার, সোহেল ইসলাম, রকিবুল ইসলাম, আলম মাসুদ, তরিকুল ইসলাম, ফারুক হাসান, সাখাওয়াত হোসেন, মাহবুবুর রহমান, মুহিদুল ইসলাম, ইউসুফ চৌধুরী, আলমগীর হোসেন ও সাখাওয়াত হোসেন রাতুল। এই ১৯ জনের মধ্যে আদালতে ১৮ শিক্ষার্থীর পক্ষে জামিন আবেদন করে মানবাধিকার সংস্থা লিগ্যাল এইড। বাকি আরেক শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের জন্য আবেদন করেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে জামিন শুনানিতে অংশ নেন প্রশান্ত কুমার কর্মকার, মুসা কলিমুল্লাহসহ কয়েক আইনজীবী।
×