ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পশু জবাইয়ের পর সঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানোর পরামর্শ

৩৬০ কোটি টাকার চামড়া এবার নষ্ট হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২১ আগস্ট ২০১৮

৩৬০ কোটি টাকার চামড়া এবার নষ্ট হতে পারে

এম শাহজাহান ॥ সঠিকভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ না হলে এবার ৩৬০ কোটি টাকার কোরবানির চামড়া নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে কোরবানির পশু জবাইয়ের পর প্রশিক্ষিত কারিগর ও কসাই দিয়ে ছাড়ানো চামড়া সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে সংগৃহীত চামড়ায় ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণ করার পরামর্শ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। জানা গেছে, গত বছর ১ কোটি ৫ লাখ গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। এবার দেশের খামারগুলোতে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ১৬ লাখ। বাংলদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। মোট চামড়ার অর্ধেকের বেশি সংগ্রহ ও মজুদ করা হয় কোরবানির ঈদের সময়। চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য রফতানি করে বছরে আয় হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। রফতানিতে প্রথম থাকা গার্মেন্টসের পরই চামড়া খাতের অবস্থান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকার চামড়া নষ্ট হচ্ছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। তাই কোরবানি দাতারা যাতে পশু জবাইয়ের পর তা ভালভাবে প্রশিক্ষিত কারিগর কিংবা কসাই দিয়ে চামড়া ছাড়ানোর কাজটি করান তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে। শুধু তাই নয়, পশু থেকে চামড়া ছাড়ানোর পর তা ভালমতো পরিষ্কার করে ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিতে হয়। অনেক সময় লবণ দেয়া হয় না বলে চামড়া পচে যায়। স্যাঁতসেঁতে জায়গায় না রেখে পরিষ্কার ও শুল্কস্থানে চামড়া মজুদ করতে হয়। এসব হয় না বলে প্রতিবছর চামড়া নষ্টের পরিমাণ বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এবার মোবাইল ফোনে এসএমএস দিয়ে সঠিকভাবে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ কমাতে সতর্ক থাকতে হবে মৌসুমি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলের। তারা বলছেন, পরিষ্কার ও শুষ্ক স্থানে পশু জবাই করে চামড়া ছাড়ানোর পর লবণ দিতে হবে। আর, মান ঠিক রাখতে যেখানে সেখানে না রেখে চামড়া ঝুলিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। পশু জবাই ও চামড়া সংগ্রহে উন্নতমানের ছুড়ি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা প্রয়োজন। এছাড়াও বৃষ্টি ও তীব্র রোদের তাপ থেকে পণ্যটি দূরে রাখার পরামর্শ তাদের। দেশে মোট চামড়ার প্রায় ৫০ শতাংশ আহরণ হয় ঈদ-উল আজহা বা কোরবানির সময়। তবে প্রতিবছর পণ্যটি নষ্টও হয়ে থাকে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত। চামড়া সংরক্ষণে সতকর্তা থাকার পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ শাহিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ভাল দাম পেতে সঠিকভাবে চামড়া সংরক্ষণ হওয়া প্রয়োজন। কাটাছেঁড়া ও ফাটা চামড়া রফতানি করা যায় না। চামড়া রফতানিতে আন্তর্জাতিকমান অক্ষুণœ রেখেই রফতানি করা হয়। এ ব্যাপারে বিদেশী ক্রেতারাও যথেষ্ট সতর্ক। তাই চামড়া শিল্প রক্ষায় সঠিকভাবে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ও মজুদ হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, কোরবানির সময় ভাল পশুটির চামড়া পাওয়া যায়। কিন্তু সঠিকভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ টাকার চামড়া নষ্ট হচ্ছে। জানা গেছে, কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে লবণের প্রয়োজন হবে ৩০-৩৫ হাজার টনের। ইতোমধ্যে বাজারে লবণের দাম কিছুটা বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চাহিদা অনুযায়ী ৩০-৩৫ হাজার টন লবণ পাওয়া না গেলে এবার কাঁচা চামড়া রক্ষা করা সম্ভব নয়। ২৫-৪০ টাকা দরে লবণ কিনে কেউ চামড়া সংরক্ষণ করবে না। আর কাঁচা চামড়ায় লবণ দেয়া না হলে তা পচে যাবে। এ বছর সংরক্ষণের অভাবে কাঁচা চামড়া দেশের বাহিরে পাচার হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তবে এবার কোরবানির সময় লবণের দাম বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সভাপতি নূরুল কবির। তিনি বলেন, চলতি বছর চাহিদা অনুযায়ী লবণের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। ফলে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কোনো ব্যবসায়ী যাতে লবণের দাম নিয়ে সিন্ডিকেট করতে না পারে এজন্য সমিতির পক্ষ থেকে নজরদারি করা হবে। লবণ মিল মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, কোরবানির সময় দেশে দেশে অতিরিক্ত লবণের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি বস্তা (৭৪ কেজি) লবণ বিক্রি হচ্ছে ৮৮০ থেকে ৯০০ টাকায়। অন্যদিকে কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ী সংগঠন বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের দাবি, এখন প্রতি বস্তা লবণ কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৪০ টাকায়, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১০০ টাকা বেড়েছে। ঈদে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক না থাকলে দাম আরও বাড়বে। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে বাজারে বস্তাপ্রতি লবণের দাম ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। গত বছরের মতো এবারও লবণ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন বিটিএ জানায়, চামড়া প্রক্রিয়াকরণ করে সংরক্ষণে ট্যানারিগুলোতে সাধারণভাবে প্রতিটি গরু চামড়ায় ১২ কেজি, ছাগলের চামড়ায় ৫ কেজি, মহিষের চামড়ায় ২০ কেজি ও ভেড়ার চামড়ায় ৫ কেজি লবণের প্রয়োজন হয়। লবণের কৃত্রিম সঙ্কটের কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হয়ে থাকে। এজন্য সংগঠনটির পক্ষ থেকে লবণের ন্যায্য দাম নিশ্চিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
×