ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চীন-মালয়েশিয়া আনুষ্ঠানিক বৈঠক ॥ অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে বেজিংয়ের সহায়তা কামনা

চীনে মাহাথিরের লাল গালিচা

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২১ আগস্ট ২০১৮

চীনে মাহাথিরের লাল গালিচা

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মেহাম্মদ চীনে পাঁচ দিনের সফরে শুক্রবার চীনে পৌঁছেন। ১৭ বছর পর এই প্রথম মালয়েশিয়ার কোন প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে গেলেন। সোমবার বেজিংয়ের গ্রেট হল অব পিপলে তাকে অভ্যর্থনা জানান হয়। তিনি সেখানে এসে পৌঁছালে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। চীনের প্রধানমন্ত্রী লিকেকিয়াংয়ের সঙ্গে তার এদিন আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। নিউ স্ট্রেট টাইমস। শুক্রবার সফরের শুরুতে চীনের হাংঝুতে গিয়ে পৌঁছলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লিকেকিয়াং তাকে স্বাগত জানান। মাহাথির এ বছর মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন। দীর্ঘ বিরতির পর প্রধানমন্ত্রী হয়ে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে মাহাথির চীনে গেলেন। তার এ সফরকে দুদেশের বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সোমবার চীন ও মালয়েশিয়ার মধ্যে শীর্ষ পর্যায় আলোচনায় কয়েকটি স্মারক সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। বেজিং ও কুয়ালালামপুরের মধ্যে কৃষি ও কৃষিপণ্য বিষয়ক সহযোগিতা আরও বাড়ানো এসব সমঝোতা স্মারকের উদ্দেশ্য। মাহাথির এর আগে ২০০১ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ চীন সফর করেছিলেন। ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তিনি সাত বার চীন সফর করেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি’র আমন্ত্রণে তিনি এবার চীন সফরে গেলেন। তার এবারের সফরের আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে রাজনীতি, বাণিজ্য, কৃষি, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা। সোমবার দিনের আরও পরের দিকে মাহাথির চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। মাহাথির সোমবার তার দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট সমাধানে এগিয়ে আসার চীনের প্রতি আহ্বান জানান। পূর্বসূরি প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সময়ে চীনের সঙ্গে সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তি নতুন করে খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান। নাজিবের প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মাহাথির একথাও বলেন যে তিনি মুক্ত বাণিজ্যকে ততক্ষণ সমর্থন করেন যতক্ষণ এটি ন্যায়সঙ্গত পর্যায়ে থাকে। তিনি বলেন, ‘ঔপনিবেশিক-তাবাদের নতুন সংস্করণ আবার তৈরি হোক সেটি আাপনারা নিশ্চয়ই চাইবেন না। এটি এমন পরিস্থিতি যেখানে মুক্ত ও অবাধ বাণিজ্যের নামে ধনী দেশগুলো ইচ্ছামতো বাণিজ্য করার সুযোগ পায় কিন্তু দরিদ্র দেশগুলো তাদের সঙ্গে পেরে ওঠে না। বাণিজ্য অবশ্য ন্যায়সঙ্গত হতে হবে। তবেই কেবল আমি ও প্রধানমন্ত্রী লি মুক্ত বাণিজ্য সমর্থন করব। আমার মনে হয় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এগিয়ে যাওয়ার এটিই যথাযথ উপায়।’ মাহাথিরের এমন বক্তব্য লিকেকিয়াং স্পষ্টতই আশা করেননি। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চীনের বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে মাহাথির সম্ভবত সেদিকে ইঙ্গিত করেই কথাগুলো বলেছেন। বিশেষ করে বেল্ট এ্যান্ড রোড বাণিজ্য রুট কর্মসূচীর বিষয়ে। যেসব দেশে চীন বিনিয়োগ করছে সেখানকার প্রশাসন বেজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। মাহাথির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর জুলাই মাসে তার সরকার ইস্ট কোস্ট বেল লিঙ্ক প্রকল্পটি স্থগিত করে। প্রাচীন বাণিজ্য রুট পুনরুজ্জীবনের যে উচ্চাভিলাষ নিয়ে চীন বেল্ট এ্যান্ড রোড কর্মসূচী বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছে তারই অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ায় ইস্ট কোস্ট বেল লিঙ্ক প্রকল্পটি নিয়েছিল নাজিব সরকার। ২০ বিলিয়ন ডলারে চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ওই প্রকল্পের কাজ করে দেয়ার কথা ছিল। লি অবশ্য বলেছেন, মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য দেশটির প্রতি চীনের সহযোগিতা ব্যাহত হবে না। মাহাথিরও বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর স্থাপিত। সময়ের কারণে এতে কিছু উত্থান পতন হতেই পারে’।
×