ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কে মৃত্যু মিছিল ॥ দুর্ঘটনায় ঝরল ২২ তাজা প্রাণ

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ২১ আগস্ট ২০১৮

 সড়কে মৃত্যু মিছিল ॥ দুর্ঘটনায় ঝরল ২২ তাজা প্রাণ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গিয়ে মাঝরাস্তায় প্রাণ যাচ্ছে ঘরমুখো যাত্রীদের। এ যেন সড়কে মৃত্যুর মিছিল। সোমবার পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ জেলায় ২২ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদীতে বাস-লেগুনা মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত হয়েছে ১১ জন। অবশ্য পালিয়ে গেছে যাত্রীবাহী বাসচালক। ফেনীতে নারী-শিশুসহ এক পরিবারের ৬, গাইবান্ধায় ৩, নীলফামারী ও শেরপুরে একজন করে দুজন মারা গেছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিসা দেয়া হচ্ছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। সড়ক-মহাসড়কে ঘরমুখো যাত্রীদের ঈদের আনন্দ মুহূর্তেই হারিয়ে যাচ্ছে বিয়োগান্তক ঘটনায়। ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বড় দুটি পৃথক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলে ১৭ জনের। নরসিংদীতে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে হতভাগ্য ১০ লেগুনা যাত্রী ও চালকের মৃত্যু হয়েছে। যাত্রীবাহী বাস ও লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে চালকসহ ৯ যাত্রী এবং ভৈরব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুই যাত্রীসহ মোট ১১ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আটজন। সোমবার রাত সাড়ে আটটায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেলাবো উপজেলার দড়িকান্দি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় আহতদের নরসিংদী জেলা হাসপাতাল ও পাশর্^বর্তী ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে আটজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হচ্ছেন সুনামগঞ্জের আজমেরীগঞ্জের আবুল হোসেন (৩০), আবদুল মিয়া (২৪), মোবারক মিয়া (১৮), সুজন মিয়া (২২) ও তার স্ত্রী রাহেলা বেগম (২০), আবুল হোসেন (৫৫), শামীম (১৮) ও রাকিবুল (৩০)। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভৈরব থেকে রাজধানীর মহাখালীগামী ‘ঢাকা বস’ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস দড়িকান্দি পৌঁছলে মরজাল থেকে ভৈরবগামী লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে লেগুনাটি দুুমড়েমুচড়ে যায়। ফলে লেগুনা ও যাত্রীবাহী বাসের ১১ যাত্রী নিহত হয়। আহত হয় আটজন। এদিকে দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ভৈরব হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মহাসড়ক থেকে দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুটি সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ভৈরব হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌফিকুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনায় লেগুনার চালকসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। তবে যাত্রীবাহী বাসের চালক পালিয়ে গেছে। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। যাত্রীরা সকলেই ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যাচ্ছিল। নরসিংদী পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন জানান, ঈদ সামনে রেখে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক যানজটমুক্ত থাকায় যাত্রীবাহী বাস ও লেগুনাটি দ্রুতগামী হওয়ায় মুখোমুখি সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। ফেনী ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর মুহুরীগঞ্জে মাইক্রোবাস ও গরুভর্তি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন নারী ও দুই শিশুসহ একই পরিবারের ছয়জন নিহত ও চারজন আহত হয়েছে। মুহুরীগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের এসআই মোস্তফা জানান, সোমবার ভোরে লক্ষ্মীপুর থেকে চট্টগ্রামগামী মাইক্রোবাসকে ট্রাক পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলে মাইক্রোবাসের ৬ যাত্রী নিহত ও ৪ জন আহত হয়। নিহতদের লাশ সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। নিহতরা হচ্ছেÑ মাইক্রোবাস চালক আব্বাস (৩৮), শুভ (৮), পপি (১৫), জাহানারা (৫০), রুমী (৩০), রোমান (৩)। ঘাতক ট্রাক আটক করা হয়েছে, চালক পলাতক রয়েছে। গাইবান্ধা ॥ পলাশবাড়ী উপজেলার মহেশপুর এলাকায় সোমবার বিকেলে রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস সিএনজি চালিত একটি অটোরিক্সাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে সিএনজি চালকসহ ঘটনাস্থলেই ৩ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছে। নিহত ও আহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রংপুর থেকে সিরাজগঞ্জগামী জেরিন এন্টারপ্রাইজের একটি বাস মহেশপুর এলাকায় পৌঁছলে ধাপেরহাট থেকে পলাশবাড়ী অভিমুখে আসা একটি সিএনজিকে ওভারটেক করার সময় ধাক্কা দেয় বাস। ঘটনাস্থলেই আহতদের উদ্ধার করে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ বাসটিকে আটক করলেও বাসচালক কৌশলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজাবাউল হোসেন, হাইওয়ে থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নীলফামারী ॥ অটোরিক্সার ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল চালক নিহত ও এক আরোহী আহত হয়েছে। রবিবার রাত ১১টার দিকে ডোমার-নীলফামারী সড়কের খানাবাড়ি জুম্মাপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘাটনা ঘটে। নিহত মোটরসাইকেল চালক হলেন, উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের খানাবাড়ি গ্রামের মনছের আলীর ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী ময়নুল ইসলাম (৪০) ও আহত ব্যক্তি একই এলাকার মৃত জহুরুল হকের ছেলে মমিন রহমান (২০)। এলাকাবাসী জানায়, ডোমার সদর থেকে মোটরসাইকেলযোগে তারা নিজ বাড়ি ফেরার সময় ওই স্থানে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অটোরিক্সার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুইজনই গুরুতর আহত হয়। তাদের প্রথমে ডোমার উপজেলা হাসপাতালে ও পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে সোমবার দুপুরে ময়নুল ইসলামের মৃত্যু হয়। বর্তমানে অপর আহত মোমিন রহমান রংপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হরিণচড়া ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলে অটোরিক্সাটি পালিয়ে গেছে। এদিকে অন্য আরেকটি ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী ও নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ থানার ওসিসহ চারজন আহত হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টা দিকে উপজেলার ভিন্নজগত সড়কের দর্জিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। আহত চারজন হলোÑ কিশোরীগঞ্জ থানা ওসি হারুন-অর-রশীদ (৫০) তার মোটরসাইকেল চালক রিয়ন মিয়া (৩২), অপর মোটরসাইকেলের চালক একরামুল হক (৩০) ও আরোহী রবিউল ইসলাম (৩৫)। আহতদের প্রথমে কিশোরীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
×