ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নির্ভর করছে বাংলাদেশের ওপর

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২২ আগস্ট ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নির্ভর করছে বাংলাদেশের ওপর

অনলাইন ডেস্ক ॥ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিলম্বের জন্য ঢাকা যেখানে মিয়ানমারকে দায়ী করে আসছে, দেশটির নেত্রী অং সান সু চি সেখানে বাংলাদেশকে পাল্টা চাপে রাখার কৌশল নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “তাদের (রোহিঙ্গা) ফেরত পাঠানোর কাজটা বাংলাদেশের। আমরা কেবল তাদের স্বাগত জানাতে পারি।… আমার মনে হয় বাংলাদেশ কত দ্রুত প্রত্যাবাসন শেষ করতে চায় সে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে।” বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া ওই শরণার্থী সঙ্কট সৃষ্টির এক বছরের মাথায় মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে এক বক্তৃতায় সু চির এমন মন্তব্য আসে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে যারা আশ্রয় নিয়ে আছেন, তারা মিয়ানমারে ফিরলে কোথায় রাখা হবে- সেই জায়গাও ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো সময়সীমা ঠিক করা মিয়ানমারের জন্য কঠিন, কেননা ‘কাজটি করতে হবে বাংলাদেশকে’। রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত অাগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মিয়ানমারের বাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। তবে মিয়ানমার সরকার তা অস্বীকার করে বলে আসছে, ওই অভিযান চালানো হয়েছে ‘সন্ত্রাসীদের বিরদ্ধে’। বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সম্মতিপত্রে সই করে। এর ভিত্তিতে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয় এবং ১৬ জানুয়ারি ওই গ্রুপের প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়। এরপর প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারকে আট হাজারের মতো রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেওয়া হলেও কেউ এখনও রাখাইনে ফিরতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্প্রতি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করলেও বাস্তবে মিয়ানমার কোনো কাজ করছে না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ওই চুক্তি স্বাক্ষরের পর জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়। জাতিসংঘের মহাসিচব আন্তোনিও গুতেরেস সে সময় বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরকে সঙ্গে রাখা জরুরি ছিল বলে তিনি মনে করেন। এরপর গত ১৩ এপ্রিল সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে ইউএনএইচসিআর। এতে মিয়ানমারে ‘অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সংস্থাটির সহায়তার কথা বলা হয়। পরে মিয়ানমারও ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপির সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি করতে সম্মত হওয়ার কথা জানায়। জুলাইয়ের শুরুতে কক্সবাজারে এসে রোহিঙ্গাদের অবস্থা নিজে চোখে দেখে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “তারা বিচার চায়, নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে চায়।” রাখাইনে কয়েকশ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস থাকলেও ১৯৮২ সালে আইন করে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই রোহিঙ্গাদের বর্ণনা করে আসছেন ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ ও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে। দেশটির স্টেট কাউন্সিলর শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চিও কখনও রোহিঙ্গা শব্দটি মুখে আনেন না। পশ্চিমা মিত্ররাএকসময় শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী সু চিকে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলেও রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা নিপীড়েন নিয়ে মুখ না খোলায় তাকে বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হতে হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। সেনাবাহিনীর ওই অভিযান শুরু হয়েছিল গতবছর ২৫ অাগস্ট রাখাইনে একটি সেনা ঘাটি ও কয়েক ডজন পুলিশ ফাঁড়িতে একসঙ্গে হামলার ঘটনার পর। ওই হামলার জন্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামের এক রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে দায়ী করে আসছে মিয়ানমার। সিঙ্গাপুরে দেওয়া বক্তৃতায় সু চি বলেন, যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ কারণে গতবছর রাখাইনে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়েছিল, সেই হুমকি এখনও সেখানে রয়েছে এবং তা ‘মারাত্মক পরিণতি’ ডেকে আনতে পারে। “নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি যদি নিষ্পত্তি করা না হয়, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঝুঁকি থেকেই যাবে। এ হুমকি শুধু মিয়ানমার নয়, এ অঞ্চলসহ আশেপাশের দেশগুলোর জন্যও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।” সু চি বলেন, অনেকে মনে করেন, মিয়ানমারে বোধ হয় কেবল মুসলমানরাই থাকে; কিন্তু এটা ঠিক নয়। “সেখানে হিন্দুরা আছে, অনেক ছোট ছোট নৃগোষ্ঠী আছে। আমি মনে করি সেসব গোষ্ঠীর দিকেও আপনাদের মনোযোগ দেওয়া দরকার, কারণ এর কয়েকটি বিলুপ্তির মুখে রয়েছে। “এই জনগোষ্ঠীগুলো নিজেদের সংস্কৃতি অনুসরণ করে, তারা খুবই শান্তিপূর্ণ। তারা যাতে নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে, এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য সব রকম সহযোগিতাই আমাদের করা দরকার।
×