ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন আসনেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী, তৎপর নয় বিএনপি ॥ ফেনী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩১ আগস্ট ২০১৮

তিন আসনেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী, তৎপর নয় বিএনপি ॥ ফেনী

ওছমান হারুন মাহমুদ, ফেনী ॥ ফেনী একসময় দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছিল সন্ত্রাসের জনপদ কিংবা বাংলার লেবানন হিসেবে। বোমা, গুলির শব্দ ছিল প্রতিমুহূর্তের ঘটনা। খুনসহ নানা অপরাধ ছিল জেলার নিত্যদিনের সংবাদ। ফেনীর বাতাস ছিল বারুদের গন্ধে ভরা। আজ সেই সন্ত্রাসের জনপদ ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে শান্তির জনপদে। এখন গুলি কিংবা বোমার শব্দে মানুষের ঘুম ভাঙ্গে না। াতঙ্কিত থাকতে হয় না ব্যবসায়ী বা পথচারীকে। জেলার বাইরের লোক ফেনীর নাম শুনলে এক সময় আঁতকে উঠত, ফেনীতে আসতে ভয় পেত। এখন আর সেই অবস্থা নেই ফেনীতে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া ফেনীতে এখন হানাহানি হয় না বল্লেই চলে। একদা সন্ত্রাসের জনপদ ফেনীর তিন আসনেই লেগেছে নির্বাচনী হাওয়া। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তিন আসনে চষে বেড়ালেও দেখা মেলে না বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। পুরো জেলায় বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আগামী নির্বাচনে ফেনীর তিন আসনেই দখল নিতে তৎপর আওয়ামী লীগ। কোন আসনই জোট কিংবা মহাজোটকে ছাড় দিতে নারাজ দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে তৎপরতা না থাকলেও ভেতরে ভেতরে বিএনপি চায় আসনগুলো পুনরুদ্ধারে। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম জানান, অতীতে ফেনীতে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ও বর্ধিত সভাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে কয়েকবারই হাঙ্গামা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিলসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতারাও লাঞ্ছিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সেই দুঃসময়ের অবসান হয়েছে। আজ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা সুসংগঠিত। দলে কোন গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব কিংবা কোন্দল নেই। বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদে ফেনী জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ফেনীর মেয়ে হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া দাবি করলেও তিনি দু’বারের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও ফেনীতে তেমন কোন উন্নয়ন দেখাতে পারেননি। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই জেলায় যে পরিমাণ উন্নয়ন কাজ হয়েছে তাতে পুরো জেলার মানুষ বর্তমান সরকারের প্রতি অত্যন্ত খুশি। তাই তিন আসনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকা- ভোটারদের সামনে তুলে ধরে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, বর্তমান সরকার আমলে পুরো জেলাতেই ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আগামী নির্বাচনে তিন আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তিন আসনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা উপহার দেব। জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষেই আমরা ঐক্যবদ্ধ কাজ করে যাব। অন্যদিকে বিএনপিতেও রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দলটির কেন্দ্রীয় কর্মসূচী একসঙ্গে পালন করতে দেখা যায় না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ফেনীতে বিএনপিকে কোন ছাড় দেয় না জামায়াত। সুযোগ পেল বিএনপির গ্রুপিংয়ে ঘি ঢালে তারা। এ প্রসঙ্গে ফেনী পৌর বিএনপির সভাপতি আলাল উদ্দিন আলাল জানান, বর্তমানে দলের মধ্যে কোন কোন্দল বা গ্রুপিং নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে অঙ্গ সংগঠনগুলোর নতুন কমিটি করা হয়েছে। সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপি নেত্রী রেহানা আক্তার রানু বলেন, বড় দল হিসেবে মনোনয়নের লড়াই তো থাকবেই। তবে চূড়ান্ত ঘোষণার পরই জানা যাবে কে মনোনয়ন পেয়েছেন। এর আগে কারোর মনোনয়ন নিশ্চিত তা বলা যাবে না। অন্যদিকে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সামছুদ্দিন জানান, ফেনী ২ ও ৩ আসনে তাদের দুই প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরা থেকে নির্ধারণ করেছে। জোটে এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তাদের প্রার্থীরা বহাল থাকবেন। ফেনী-১ (পরশুরাম-ফুলগাজী-ছাগলনাইয়া) ॥ এই আসনটি ‘ভিআইপি’ আসন হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ফেনী-১ আসন থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা সবাই ব্যক্তি ইমেজের কারণে বিজয়ী হয়েছেন। ৭৩ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মুসা, ৭৯ সালে বিএনপি থেকে এবং পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে ’৮৬ ও ৮৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন লে. কর্নেল (অব) শেখ জাফর ইমাম (বীর বিক্রম)। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ আসন থেকে নির্বাচিত হন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে একবার ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচিত হয়ে এ আসন ছেড়ে দেয়ায় তার ছোট ভাই মেজর (অব) সাঈদ ইস্কান্দার এ আসন থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় এবং আওয়ামী লীগ এ আসন মহাজোটকে ছেড়ে দেয়ায় মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদ (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ১৯৯১ সাল থেকে এ আসনটি বিএনপির একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া আবারও এ আসন থেকে নির্বাচন করে তবে তার বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত বলে দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন। স্থানীয়রা জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন এমন কথা নিজে প্রকাশ না করলেও তার অনুসারিরা এলাকায় পোস্টার ব্যানার লাগিয়ে এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে জনসভায় আলাউদ্দিন নাসিমকে ফেনী-১ আসন থেকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী বলেন, আলাউদ্দিন নাসিম এমপি বা মন্ত্রী না হয়েও মন্ত্রীর চেয়েও বেশি সম্মান পাচ্ছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে নামের পেছনে এমপি লেখার বা এমপি হওয়ার সুপ্ত বাসনা যদি তার থাকে, তাহলে তিনি ফেনী-১ আসনে বেগম জিয়ার সঙ্গে পরাজিত না হয়ে মনোনয়নের শেষ ও চূড়ান্ত সময়ে ফেনী-২ আসনের দিকে হাত বাড়াতে পারেন। তার কাছে তথ্য আছে ইতোমধ্যে আলাউদ্দিন নাসিম কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে রয়েছেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার জানান, তিনি এ আসন থেকে জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন ও ভোট করবেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোন দূরত্ব নেই। সবার সঙ্গে ভাল ও সুসম্পর্ক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সামছুদ্দিন ভুলু মজুমদার বলেন, বর্তমান মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাওয়া জাসদের শিরিন আক্তার নৌকার প্রতীকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্যেগুলো প্রচার না করে মুষ্টিমেয় তার দলীয় নেতাদের আখের গোছাতে সহায়তা করছেন। তাই অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দল থেকে এবার মনোনয়ন চান। যোগ্য ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে, আওয়ামী লীগ থেকে যদি এমন প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে বিএনপির ভোট ব্যাংক বলে খ্যাত এ আসনটি আওয়মী লীগ ছিনিয়ে নিতে পারবে। আওয়ামী লীগের যারা মনোনয়ন চাইবেন বা যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেনÑ সাবেক সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব) শেখ জাফর ইমাম বীর বিক্রম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার তপন, ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল ও হাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল্লা। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (এরশাদ) দলের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা নাজমা আক্তারকে এ আসনে মনোনয়ন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হচ্ছেন দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কোন কারণে তার নির্বাচন করা সম্ভব না হলে তার ভাই মরহুম সাঈদ ইস্কান্দারের সহধর্মিণী প্রার্থী হতে পারেন। এ বিষয়ে তার পরিবারই সিদ্ধান্ত নেবেন। ফেনী-২ (সদর) ॥ ঢাকা-চট্টগ্রামের লাইফ লাইন বলে পরিচিত এ আসনটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ১৯৮৬ সালে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের জয়নাল হাজারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৮৮ সালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় স্কপ প্রার্থী (জাসদ রব) জয়নাল আবদীন ভিপি জয়নাল ভোটার বিহীন নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১ ও ৯৬ সালে পরপর দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের জয়নাল হাজারী। ১৯৯৭ সালে জাসদ থেকে জয়নাল আবদীন ভিপি জয়নাল বিএনপিতে যোগদান করেন। কিন্তু ২০০০ সালের ৯ মার্চ শহরের কাজীরবাগ এলাকা থেকে ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৩ সঙ্গীসহ গ্রেফতার হন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়ন নিশ্চিত প্রার্থী হিসেবে প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাংবাদিক ফেরদৌস আহম্মদ কোরেশী মাঠে কাজ শুরু করেন। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার মাত্র ক’দিন আগে জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ভিপি জয়নাল। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে পরাজিত করে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন। সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে নিজাম উদ্দিন হাজারী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসন থেকে তিনবার নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী বর্তমানে রাজনীতির মাঠে নেই। দীর্ঘ কয়েক বছর ফেনীতে তার উপস্থিতি না থাকলেও তার বেশ কিছু অনুসারি রয়েছে। নির্বাচন প্রসঙ্গে জয়নাল হাজারী বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কদেরের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে নির্বাচন করতে নিষেধ করেছেন। ওবায়দুল কাদের তাকে বলেছেন, আপনার বয়স হয়েছে, ঝুট-ঝামেলাই যাবেন না। তিনবার এমপি ছিলেন। আপনাকে দলে সম্মানজনক জায়গা দেয়া হবে।’ যেহেতু দলের সাধারণ সম্পাদক নিষেধ করেছেন, তাই আমি মনোনয়নও চাইব না, নির্বাচনও করব না। দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী জেলা আওয়ামী লীগের উপর একচ্ছত্র প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ রেখে মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনকে সংগঠিত করে মাঠ দখলে রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষক দলের সভাপতি ও ফেনী পৌরসভার প্যানের মেয়র-১ আশ্রাফুল আলম গীটার জানান, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ, হরতাল, আন্দোলনের সময় এবং কাদের মোল্লার ফাঁসির সময় সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর তত্ত্বাবধানে শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট ও মহাসড়কে পালাক্রমে রাত দিন পাহারা বসিয়ে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের দিয়ে যানবাহন চলাচলের নিরাপত্তা বিধান ও নাশকতা প্রতিরোধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি আজীজ আহম্মদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী দলকে সুসংগঠিত করেছেন। তার নেতৃত্বে মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ। দলকে যেভাবে তৃণমূল পর্যন্ত নিয়ে গেছেন সে হিসেবে ফেনী-২ আসনে তার মনোনয়ন পাওয়া যুক্তি সঙ্গত। জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শুশেন চন্দ্র শীল জানান, বর্তমানে শান্ত ফেনীকে অশান্ত করার জন্য পাঁয়তরা চালাচ্ছে একটি চক্র। একটি মহল হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে, গুলি করে তার গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। একঢিলে দুই পাখি মারার উদ্দেশ্যে কুচক্রীরা সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর কাঁধে হত্যার দায় তুলে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। কারণ নিজাম হাজারীকে সরিয়ে দিতে পারলে সুবিধাভোগী চক্রটি ফেনীর তিন আসনে আধিপত্য বিস্তার করে লুটপাঠ এবং শান্ত ফেনীকে আবার সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করতে পারবে। কিন্তু তাদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। ফেনী-২ আসনের মনোনয়নের জন্য বর্তমানে দলকে সুসংগঠিত করার রূপকার নিজাম উদ্দিন হাজারীর বিকল্প নাই। তবে এ আসনে নিজাম হাজারী ছাড়াও যারা মনোনয়ন চাইতে পারেন তাদের মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ল’ইয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা কাজী ফয়সাল এবং ফেনী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি, শিল্পপতি ও ব্যাংক মালিক শাহেদ রেজা শিমুল। এ আসনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে প্রকৌশলী নজরুল ইসলামকে। এদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু ও গাজী হবিব উল্লাহ মানিক। জামায়াতের মনোনয়ন প্রত্যাশী হচ্ছেন জেলার সাবেক আমির অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভুঞা। ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভুঞা) ॥ ফেনী-৩ আসনটির সীমানা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ছিল সোনাগাজী উপজেলা ও ফেনী সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে। ৫ জানুয়ারি ১০ম সংসদ নির্বাচনে এ আসনের সীমানা পরিবর্তন হয়ে ফেনী-২ আসন থেকে দাগনভূঞাকে কেটে ফেনী-৩ আসনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে সোনাগাজী ও দাগনভুঞা উপজেলা নিয়ে ফেনী-৩ আসন। স্বাধীনতার পর থেকে ৭৯ সাল পর্যন্ত এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালেব আলী জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তারপর থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাহাবুবুল আলম তারা ও মোশারফ হোসেন সংসদ সদস্য ছিলেন। দশম জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশারকে। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের হাজী রহিম উল্লাহ। পরে এ আসনটি ছেড়ে দেয়া হলে জাতীয় পার্টির রিন্টু আনোয়ার মহাজোটের প্রার্থী হন। কেন্দ্রের নির্দেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল বাশার তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেও বিদ্রোহী প্রার্থী রহিম উল্লাহ তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাজী রহিম উল্লাহ। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে উপলক্ষে করে এলাকায় তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। এ সোডাউনের প্রতিযোগিতায় পুরনোদের পাশাপাশি নতুন মুখগুলোও পিছিয়ে নেই। নতুন-পুরনোদের পদচারণায় এলাকাবাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে নির্বাচন কাছে এসে গেছে। জেলার তিন আসনের মধ্যে এ আসনেই বড় দলগুলোর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাপ বেশি দেখা যাচ্ছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্লাহ ছাড়াও রয়েছেনÑ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জহিরুদ্দিন মাহমুদ লিফটন, ওয়ান ইলেভেনের সময় আলোচিত সামরিক কর্মকর্তা লে. জেনারেল (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক রোকেয়া প্রাচী, মার্কেন্টাইল ব্যংকের সাবেক চেয়ারম্যান আক্রাম হোসেন হুমায়ুন, এ্যাডভোকেট আক্রামুজ্জামান, ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রহমান বিকম ও দাগনভুঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন। অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেনÑ খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আবদুল আওয়াল মিন্টু ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার (অব) নাছির উদ্দিন আহম্মদ। জামায়াতের ডাঃ ফখরুদ্দিন মানিক এবং জাতীয় পার্টির (এরশাদ) আনোয়ারুল কবির রিন্টু আনোয়ার নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
×