ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফনিন্দ্র সরকার

অভিমত ॥ ভরসা রাখুন শেখ হাসিনায়

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অভিমত ॥ ভরসা রাখুন শেখ হাসিনায়

‘জীবে প্রেম করে যে জন সেজন সেবিছে ঈশ্বর- স্বামী বিবেকানন্দের এই মহান বাণী ধারণ করার যোগ্যতা কী সকলের হয়? যদি হতো তবে সকলেই দেবত্বর অধিকারী হয়ে পৃথিবী থেকে অনাচার অত্যাচার বিতাড়ন করতো। মানুষকে সেবা করাই যে ঈশ্বরের সেবা কিংবা সৃষ্টিকর্তার সেবা। যিনি এই সেবায় মনোযোগী হন তিনি দেবত্বের অধিকারী। তার ভেতরের প্রকৃত রূপটি দেবত্ব স্বরূপ। বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে আমার এই মতামত। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হয়ে ভারত বর্ষ স্বাধীন হয় সাম্প্রদায়িক বিভাজন চেতনার আলোকে। অর্থাৎ দ্বিজাতি তত্ত্বকে ভিত্তি করে ভারত-পাকিস্তান নামে তিন খ-ে দুটি দেশের অভ্যুদয় ঘটে। তত্ত্বটি ছিল এ রকম যে, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি হবে মুসলমানদের, ভারত হিন্দুদের। কার্যত: পাকিস্তান সাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে শাসন কার্য পরিচালনা করলেও ভারত শুরু থেকেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেই শাসন কার্য পরিচালনা করে আসছে অদ্যাবধি। পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর বাঙালীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং সাম্প্রদায়িক নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম ও আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ নামক দেশটির অভ্যুদয় ঘটে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। অসাম্প্রদায়িক; ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার আলোকেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। স্বাধীন জাতির স্বাধীনতা ছিল না। জাতির জনকের দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন বিদেশে অবস্থান করছিলেন এবং স্বপ্নের বাস্তবায়নের পথ সৃষ্টির জন্য দুই কন্যাকে সৃষ্টিকর্তা বাঁচিয়ে রেখেছেন। ১৯৮১ সালে ১৭ মে রাজনৈতিক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসেন। জাতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয় বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। শেখ হাসিনার মহত্ত্ব এখানেই, এই বাংলার অবিসংবাদিত নেতা তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকারীদের প্রতি ক্ষোভ ও ঘৃণা জানিয়ে বাংলাদেশ প্রত্যাখ্যান করেননি। দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা যেদিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন সেদিন মনে হয়েছিল দেশ নতুন করে আবার স্বাধীন হলো। বিশেষ করে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ’৭১-এর মতো মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বহু সংখ্যালঘু দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। ১৯৯৬ সালে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫% শতাংশে, ১৯৭১ সালে ছিল ২৫ শতাংশ। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে প্রথমে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আবার আঘাত আসে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন করা হয়। বাড়ি-ঘর, সহায়-সম্পদ ধ্বংস করা হয়। কী অপরাধ ছিল তাদের? অপরাধ তাদের একটাই তারা নৌকায় ভোট দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডার কর্তৃক হিন্দু গৃহবধূ, হিন্দু যুবতী মেয়েদের সম্ভ্রমহানির কাহিনী বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়। অনেকেই সে সময় দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেয়। যাদের অধিকাংশই আর ফেরত আসেনি। তখন মিডিয়া এত শক্তিশালী ছিল না। ফলে সে আমলের নির্যাতনের বহু ঘটনা এখনও অজানা রয়ে গেছে। এখন দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সংখ্যা প্রায় ১০% এ দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা সকল সম্প্রদায়ের মনের কথা বোঝেন। তিনি উপলব্ধি করেনÑ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। তিনি এই তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বুকে টেনে নিয়েছেন। ক’জন নেতার পক্ষে তা সম্ভব? তিনি মানব ধর্মের বিকাশে উচ্চতর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন কেননা মনুষ্যত্বেই মানব ধর্মের বিকাশ ঘটে, অন্যভাবে বলতে গেলে মনুষ্যত্বই দেবত্ব। হিংসা-দ্বেষ মোহ-মুক্তির উর্ধে ওঠার মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতিকে নতুন পথ দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। বিশ্ব আজ বড় অশান্তি যেন ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ। মানুষ তার সুকুমার বৃত্তির কথা বিস্মৃত হয়ে সাধারণ প্রাণীর মতো নি¤œতর বৃত্তিকে চরিতার্থ করার অশুভ-কামনা পোষণ করছে এ বাসনা পূর্তির জন্য যে দৈহিক এবং বৌদ্ধিক শক্তি বিস্তার করে চলেছে তাতে আপাত সাফল্যে গর্বিত। ভোগ্যবস্তু আবিষ্কার ও উপভোগে অনেক আনন্দ থাকলেও অন্তে অবসাদ সেই সঙ্গে দুঃখও। এটি বোঝার মতোযোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে শেখ হাসিনা ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। একথা সত্য যে, শেখ হাসিনার শাসনামলে সংখ্যালঘুদের ওপর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে, বিশেষ করে রামু ও নাসির নগরের হামলার ঘটনা। সেটি নিয়ে নানাভাবে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে কেউ কেউ। তারা বলতে চাচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকারের আমলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপদ নয়। কিন্তু ঐসব ঘটনার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা শেখ হাসিনার নির্দেশেই। অথচ ২০০১ সালে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত যে তা-ব চালিয়ে ছিল, তার একটির বিচার সম্ভব হয়নি। কারণ, হয় সাক্ষী-আলামত গায়েব করা হয়েছে নয়তো নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দেশে ফিরেনি। এই ব্যাপারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংগঠনগুলো কোন ভূমিকা রেখেছে বলেও আমার জানা নেই। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন এলেই নানা শঙ্কা জাগে এক শ্রেণীর মানুষের মনে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে। ২০০১ সালের ভয়াবহতা সামনে আসে। যা ভাবলে আতঙ্কিত করে তোলে। মনে অজানা ভয় কাজ করে। এখানে আমার মতো সকলের ভরসার স্থল শেখ হাসিনা। আজ একথা বলতে দ্বিধা নেই, শেখ হাসিনাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একমাত্র ঠিকানা। কারণ, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বিপ্লব শুরু হয়েছে তা শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বের গুণেই। নানা রকম বৈরী পরিবেশেও তিনি নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এক কথায় শেখ হাসিনা ছাড়া গত্যন্তর নেই। [email protected]
×