ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদন্ডের বিধান রেখে সংসদে সড়ক পরিবহণ বিল উত্থাপন

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদন্ডের বিধান রেখে সংসদে সড়ক পরিবহণ বিল উত্থাপন

সংসদ রিপোর্টার ॥ কোন ব্যক্তির বেপরোয়া ও অবহেলা জনিত গাড়ি চালানোর কারণে দূর্ঘটনা ঘটলে এবং সেই দূর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদন্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন বিল-২০১৮ উত্থাপন করা হয়েছে। তবে গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হলে বা তার প্রাণহানী ঘটলে এ সংক্রান্ত অপরাধ দন্ডবিধি-১৮৬০ এর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী অপরাধ বলে গণ্য হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বহুল আলোচিত ওই বিলটি উত্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কোনরূপ বিরোধীতা ছাড়াই বিলটি উত্থাপনের পর বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য প্রস্তাব করেন ওবায়দুল কাদের। এতে করে চলতি সংসদেই আলোচিত বিলটি পাসের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের ১০৫ ধারায় বলা হয়েছে, ’এই আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, মোটরযান চালনাজনিত কোন দূর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোন ব্যক্তি আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে, তৎসংক্রান্ত অপরাধসমূহ পেনাল কোডের ১৮৬০-এর এতদসংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী অপরাধ বলে গণ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে যাহাই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত মোটরযান চালানোর কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি গুরুতর ভাবে আহত হইলে বা তাহার প্রাণহানি ঘটলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৫ বৎসরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন।’ বিলে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করলে তিন বছরের কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে পয়েন্ট কাটার ব্যবস্থাও থাকবে আইনে। নির্ধারিত পয়েন্টের নিচে গেলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। চালককে নতুন করে আবার লাইসেন্স নিতে হবে। বিলে ব্যক্তিগত গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতোই অন্তত ১৮ বছর রাখা হয়েছে। তবে পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। সংসদে উত্থাপিত বিলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালকের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণী পাসের শর্ত রাখা হয়েছে। আগের আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন বাধ্যবাধকতা ছিলো না। নতুন আইনের সহকারী হতেও শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। সহকারীর ৫ম শ্রেণী পাসের সার্টিফিকেট থাকতে হবে। আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিলো না। এছাড়া সহকারী হতে বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্সের বিধানও থাকছে। বিলে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সহকারীরও শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে বিলে। চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। বিলের বিধান অনুযায়ী গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না চালক। এই বিধান অমান্য করলে এক মাসের কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। এছাড়া ছয় মাসের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে- এমন অপরাধের ক্ষেত্রে চালককে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। নতুন আইনের বিধি অমান্য করলে পয়েন্ট কাটার বিধান রাখা হয়েছে বিলে। বিলের বিধান অনুযায়ী লাইসেন্সে থাকবে মোট ১২ পয়েন্ট। বিভিন্ন বিধি অমান্যে কাটা যাবে এই পয়েন্ট। পয়েন্ট শূন্য হলে বাতিল হবে চালকের লাইসেন্স। এরপর চালকে নতুন করে লাইসেন্স নিতে হবে। বিলে বলা হয়েছে, নির্ধারিত এলাকা ব্যতিত মোটরযান পার্কিং করা যাবে না এবং যাত্রী বা পণ্য উঠা-নামার নির্ধারিত স্থান ও সময় ব্যতিত মোটরযান থামানো যাবে না। উল্লেখ্য, দীর্ঘ এক বছর ঝুলে থাকার পর আলোচিত এই নতুন সড়ক পরিবহন আইনটি গত ৬ আগষ্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হয়। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সরকার ওই আইনের খাসড়া মন্ত্রীসভায় উত্থাপন করে। সংসদের চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাসের কথা রয়েছে।
×