ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডেনমার্ক থেকে মা-বাবার সন্ধানে আসা মিন্টোকে বরণ করে নিয়েছেন পাবনাবাসী

প্রকাশিত: ০০:২৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডেনমার্ক থেকে  মা-বাবার সন্ধানে আসা  মিন্টোকে বরণ করে নিয়েছেন পাবনাবাসী

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা ॥ ৬ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া মিন্টো মা-বাবার সন্ধানে সুদূর ডেনমার্ক থেকে পাবনায় আসা মিন্টো কারস্টেন সোনিকের পাশে দাড়িয়েছে পাবনাবাসীসহ প্রসাশন। স্বজনদের ফিরে পেতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ডেনিস এই নাগরিকের সম্বল ছোটবেলার একটি ছবি। তাকে আপনজনের মতো নানা আয়োজনে বরণ করে নিয়েছেন পাবনাবাসী। আজ শুক্রবার সকালে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জেলার সংস্কৃতিকর্মীদের উদ্যোগে ‘শেকড় সন্ধানী মিন্টোর জন্য ভালবাসা’ শিরোনামে আয়োজন করা হয় বরণ অনুষ্ঠান। মিন্টো ও তার ডেনিশ স্ত্রী এনিটি হোলমিহেভকে সাজানো হয় বাঙালি পোশাকে। নববধূকে বরণের মতোই মিষ্টি মুখে তাদের বরণ করে নেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, রিপোর্টার্স ইউনিটির সম্পাদক কাজী বাবলা এবং মিউজিক্যাল ব্যান্ডস এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম লিটন। এ সময় পেশায় চিত্রশিল্পী মিন্টো দম্পতির প্রতিকৃতি নিজ হাতে এঁকে উপহার দেন পাবনার উদীয়মান চিত্রশিল্পী ইকবাল হোসেন। তরুণ শিল্পীদের গানে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো আয়োজন। ছবি আঁকেন মিন্টোও।এ সময় সাংবাদিক তপু আহমেদের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্যে অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মিন্টো ৪০ বছরেও যে তার শেকড়কে ভুলে যাননি এটাই প্রমাণ করে বাঙালির কাছে আত্মপরিচয়ের মূল্য কতটা। মিন্টোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তুমি স্বজনদের খোঁজ না পেলেও জানবে আমরাই তোমার বাবা-মা, স্বজন।সংস্কৃতিকর্মী মাহবুবুল আলম লিটন বলেন, ‘মিন্টো যশ-খ্যাতি আর বিত্তের মাঝেও নিজের আত্মপরিচয় ভুলে যাননি। আমরা তার বেদনায় সমব্যাথী। তাকে নিয়ে গর্বিতও।পাবনাবাসীর উষ্ণ অভ্যর্থনায় আপ্লুত হয়ে পড়েন মিন্টো ও এনিটি। বক্তব্য দিতে এসে মিন্টো বলেন, তোমরা আমাকে যেভাবে আপন করে নিয়েছো যেভাবে সহযোগিতা করছো তাতে আমি আপ্লুত কৃতজ্ঞ। ভালবাসার এ ঋণ শোধ করা কঠিন।তিনি বলেন যদি স্বজনদের নাও খুঁজে পাই তবুও আমি প্রতিবছর বাংলাদেশে আসব। এদেশে বাড়িও বানাব। মিন্টোর ডেনিশ স্ত্রী এনিটি হোলমিহেভ বলেন তোমাদের ভালবাসায় আমরা সম্মানিত। তোমরা আজ আমাকে পুত্রবধূর সম্মান দিলে আমি খুবই খুশি। তিনি আরও বলেন বাংলাদেশে কাটানো দিনগুলি যেন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। সত্যিই আমি অভিভূত।পরে মিন্টোকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উপহার দেন আয়োজকরা।এদিকে মিন্টোকে ১৯৭৭ সালে কুড়িয়ে পাওয়া চৌধুরী কামরুল ইসলামের খোঁজ পেয়েছে পাবনা জেলা প্রশাসন। পাবনা জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন জানান, গণমাধ্যমে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার চৌধুরী কামরুল ইসলাম তাকে ফোন করে জানান তিনিই মিন্টোকে নগরবাড়ী ঘাট থেকে ঢাকার ঠাঠারিবাজারের আশ্রমে রেখে আসেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। আগামি সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরে মিন্টোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।তিনি আরো জানান মিন্টোর স্বজন দাবি করে বেশকিছু পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। প্রাথমিক কথাবার্তার পর ডিএনএ টেস্ট করাতে রাজি হয়েছেন নগরবাড়ী এলাকার এক বৃদ্ধ।বর্তমানে ডেনিস নাগরিক মিন্টো কারস্টেন সোনিক ১৯৭৭ সালে ছয় বছর বয়সে পাবনার নগড়বাড়ী ঘাটে হারিয়ে যান। সেখান থেকে চৌধুরী কামরুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি তাকে পৌঁছে দেন ঢাকার ঠাটারিবাজারের এক আশ্রমে।১৯৭৮ সালে ওলে ও বেনফি নামের ডেনিশ দম্পতি মিন্টোকে দত্তক নেন। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে সস্ত্রীক পাবনায় এসেছেন মিন্টো।
×