নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, প্রত্যেক অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার জন্যে ১৫ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সকল চিকিৎসার ব্যয়ভার ইতিমধ্যেই সরকার গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা এখন বছরে ৫টি উৎসব ভাতা পাবেন। দু’টি ঈদ বোনাসের পাশাপাশি বাংলা নববর্ষ, মহান বিজয় দিবস ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি করে উৎসব বোনাস দেওয়া হবে।
তিনি শুক্রবার দুপুরে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নকলা পৌর শহরে নির্মিত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওই কথা বলেন।
ওইসময় তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার উৎখাত করে যারা অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা দিতে চায় তাঁরা দেশের শত্রু। একটি মহল পুনরায় স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াতকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র করছে। এঁদের থেকে দেশবাসীকে সাবধান থাকতে হবে। এ দেশকে আধুনিক সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে পুনরায় নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। এ জন্য মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান আমলে এদেশ ছিল ২১ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতির দেশ। বর্তমানে এ থেকে উতড়িয়ে আওয়ামীলীগ সরকার বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ দেশে উন্নীত করেছে। বাংলাদেশ বর্তমানে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের মাধ্যমে নতুন যুগের সুচনা করা হয়েছে।
মোজাম্মেল হক বলেন, নির্বাচিত সরকার উৎখাত করে যারা অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা দিতে চায় তারা দেশের শত্রু এ থেকে দেশবাসীকে সাবধান হতে হবে। মন্ত্রী বলেন, পাঠ্যসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাশাপাশি পাক হানাদারদের বর্বরচিত ঘটনাবলী বিবরণের অর্ন্তভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেলক্ষ্যে বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ১শ নম্বরের প্রশ্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরের নির্যাতন ইতিহাস সংক্রান্ত ৫০ নম্বর এবং মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের ইতিহাসের উপর ৫০ নম্বর থাকবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে স্থানীয় সাংসদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, পচাত্তর পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে মুছে ফেলার বিভিন্ন পায়তারা করেছেন। এর অংশ হিসেবে পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে শিশু পার্ক নির্মাণ করেছিলেন। একসময় মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের পরিচয় দিতে ভয় পেতেন। কিন্তু এখন মুক্তিযুদ্ধ বান্ধব সরকার ক্ষমতায় আছে। তাই মুক্তিযোদ্ধারা এখন নিজেদের স্বপরিচয় দিতে গৌরব বোধ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব, পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল ইসলাম হিরু, নকলা উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম, নকলা পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল মুনসুর উপস্থিত ছিলেন।
পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী নালিতাবাড়ীর সোহাগপুরের বিধবা জায়াদের সম্মাননা প্রদান এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকবিরোধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। স্থানীয় উপজেলা পরিষদ মুক্তমঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে ব্ক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি, জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ছানুয়ার হোসেন ছানু। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জিয়াউল হোসেন মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক প্রমুখ।